‘মুসলমানদের আজানে শুধু শব্দ দূষণই হয়না বরং মানুষের অসুবিধাও হয়’ এমনই একটি শিরোনাম দিয়ে ফেসবুক পোস্ট সম্প্রতি অনেকে শেয়ার করছেন। একই শিরোনামে কিছু অনলাইন সংবাদমাধ্যমকেও প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেখা যায় আজ। কিন্তু শব্দ দূষণরোধ আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নানা রায় তুলে ধরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ধর্ম পালন করার অধিকার আছে ঠিকই কিন্তু সেই ধর্মাচরণের ফলে অন্য কারও অসুবিধা করার অধিকার কারও নেই।” এখানে নির্দিষ্ট কোন ধর্মীয়গোষ্ঠীর কথা বলা নেই তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিশ্লেষণে এই শিরনামটি বিভ্রান্তিকর।
গত ১৩ই অক্টোবর ‘Islami Media’ নামের ফেসবুক পেইজ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিসহ একটি পোস্টের শিরোনামে বলা হয় ‘মুসলমানদের আজানে শুধু শব্দ দূষণই হয়না বরং মানুষের অসুবিধাও হয়’ যা প্রায় ৬০০ মানুষকে শেয়ার করতেও দেখা যায়। সংবাদমাধ্যম বিবিসির ২১শে জানুয়ারি সংখ্যা থেকে জানা যায় ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট উত্তর প্রদেশে দুটি মসজিদকে আজানের সময়ে মাইক ব্যবহার করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। হাইকোর্টের রায়ে আজানের ওপর কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি সেখানে। উত্তর প্রদেশের সে দুটি মসজিদে আজানের সময়ে মাইক ব্যবহারের অনুমতি নবায়নের জন্য আবেদন করা হলে শব্দ দূষণরোধ আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নানা রায় তুলে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পিটিশনটি খারিজ করে দেয়। বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল এবং ভিপিন চন্দ্র দীক্ষিত সেখানে বলেছে, “কোনও ধর্মই এটা শেখায় না যে প্রার্থনা করার সময়ে মাইক ব্যবহার করতে হবে বা বাজনা বাজাতে হবে। আর যদি সেরকম কোনও ধর্মীয় আচার থেকেই থাকে, তাহলে নিশ্চিত করতে হবে যাতে অন্যদের তাতে বিরক্তির উদ্রেক না হয়।”
‘Islami Media’ পেইজটির পোস্ট
পোস্টে মতামত দানকারীদের স্ক্রিনশট
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনা মহামারির সংক্রমণ দেশটিতে ছড়িয়ে পড়লে উত্তর প্রদেশের গাজীপুর জেলা স্থানীয় প্রশাসন এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মসজিদে আজানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। জনসাধারণের নিরাপত্তা ও লকডাউনের নির্দেশনা লক্ষ্য করে স্থানীয় প্রশাসন এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে গাজীপুর জেলার বিভিন্ন মসজিদে আজান বন্ধ করে দেয়ায় অভিযোগকারীরা আরেকটি পিটিশন দাখিল করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে। তাদের মতে এধরনের নিষেধাজ্ঞা নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করছে। জবাবে, উত্তরপ্রদেশ সরকার পাল্টা আরেকটি হলফনামা দাখিল করে যেখানে বলা হয়েছে, আজানের মাধ্যমে মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য আহ্বান করা হয় তাই এটি করোনা মহামারী সংবলিত নির্দেশনা লঙ্ঘন করে। উচ্চ আদালতের মতে আজান ইসলামের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হলেও আজানের সময় মাইকের ব্যবহার নয়। তাই আদালতের রায়ে আজানের ওপর কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই তবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া মাইকের ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন
অনলাইন পত্রিকায় নতুন করে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম
গত রবিবার ২৫শে, অক্টোবর ‘গোল্ডেন বাংলা’ নামের একটি পত্রিকায় একই শিরোনামে (‘মুসলমানদের আজানে শুধু শব্দ দূষণই হয়না বরং মানুষের অসুবিধাও হয়’) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়াও, অন্যান্য অনলাইন মাধ্যম একই খবর ছাপিয়ে আসছে বিভিন্ন সময়ে। প্রকৃতপক্ষে, শিরনামগুলোতে ভারতের এলাহাবাদ উচ্চ আদালতের রায়কে ভিন্নরূপে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
ফ্যাক্ট ওয়াচের বিবেচনায়‘মুসলমানদের আজানে শুধু শব্দ দূষণই হয়না বরং মানুষের অসুবিধাও হয়’ শিরোনামটি বিভ্রান্তিকর কারণ এলাহাবাদের উচ্চ আদালতের রায়ে একথা বলা হয়নি এবং শীর্ষস্থানীয় কোন সংবাদ মাধ্যম থেকেও এমন বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত থাকায় জনমনে উত্তেজনা সৃষ্টি করতেই যথাসম্ভব উক্ত শিরোনামে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ছবি বসানোর কৌশলটি বেছে নেয়া হয়েছে।