জুন মাসের ২৫ তারিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে পাস্তুরিত গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আর ডিটারজেন্ট পাওয়ার একটি সংবাদ। কমবেশি সবগুলো সংবাদপত্র এটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
২৫তারিখে দেশের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগ আর বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে সাতটি পাস্তুরিত আর তিনটি কাঁচা দুধের নমুনা নিয়ে করা গবেষণায় তারা দুধে ডিটারজেন্ট ও এন্টিবায়োটিকের সন্ধান পান। গবেষণাটি গত বছরের মে মাসে শুরু হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে।
ডিটারজেন্টের পাশাপাশি গরুর দুধে পাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হলো লেভোফ্লোক্সাসিন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন এবং এজিথ্রোমাইসিন, যা মানুষের শরীরের ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়। গবেষকরা ধারণা করছেন, এসব এন্টিবায়োটিক গরুর শরীরে দেওয়ার ফলে তা পরবর্তীতে সেই গরুর দুধে চলে যায়।
প্রাথমিকভাবে পুরো সংবাদটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত থাকলেও পুরো ব্যাপারটি দ্রুতই ঘোলাটে হতে শুরু করে। একই দিন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) উচ্চ আদালতকে একটি প্রতিবেদন প্রদান করে যেখানে তারা দেশের ১৪টি ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে কোনোপ্রকার ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায় নি বলে জানায়। গত বছরের ২১শে মার্চ উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর বিএসটিআই সেই পরীক্ষাগুলো করে।
পুরো ব্যাপারটি আরও ঘোলাটে হয়ে যায় যখন জুনের ২৯ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগ সরাসরি জানায় যে দুধে ডিটারজেন্ট পাওয়া সংক্রান্ত গবেষণায় কোনো দায়দায়িত্ব তারা নেবে না। বিভাগের চেয়ারম্যান একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে পুরোটাই একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা গবেষণা ছিলো এবং ঢাবির ফার্মাসি বিভাগের সাথে সেই গবেষণার কোনো সম্পর্ক নেই।
একের পর এক সাংঘর্ষিক তথ্যের দিকে তাকালে বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত গরুর দুধে আসলেই ডিটারজেন্ট এবং এন্টিবায়োটিক আছে কিনা, সেটি সরাসরি বলাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। উল্লেখ্য, এর আগে একাধিক পরীক্ষায় পাস্তুরিত গরুর দুধে এমন সব উপাদান পাওয়া গিয়েছে যেগুলো থাকার কথা না।
তাই, প্যাকেটজাত পাস্তুরিত গরুর দুধ নিরাপদ; এমনটা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব না হলেও ডিটারজেন্ট বা এন্টিবায়োটিক পাওয়ার ব্যাপারে কোন রেটিং প্রদানের আগে আমাদের আরও কিছু তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।