বাংলাদেশে কি করোনার ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হবে?

7
বাংলাদেশে কি করোনার ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হবে? বাংলাদেশে কি করোনার ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হবে?

Published on: [post_published] 

গত ২১জুলাই দৈনিক কালের কলরব সহ কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে ‘দেশে করোনার ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হবে’ এবং ‘ফ্রি করোনার টিকা পাবে বাংলাদেশের মানুষ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর  ভ্যাকসিনস এন্ড ইমিউনাইজেশন (GAVI)-র সহায়তায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে বিনা মূল্যে না হলেও কমদামে ভ্যাকসিনপাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেই ভ্যাকসিন এখনও তৈরী ই হয় নি এবং তার বিপণন ও বন্টনের চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। অতএব, এখনই নিশ্চিতভাবে বলার উপায় নেই যে বাংলাদেশে সবাই বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন পাবে।

প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয় “বিশ্বে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে বাংলাদেশে তা সবার আগে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান।” প্রতিবেদনগুলোর শিরোনাম করা হয় এমনভাবে যে বাংলাদেশের মানুষ বিনামূল্যে এই টিকা পাবে, তা নিশ্চিত।

উক্ত শিরোনামের প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, “বিশ্বের যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের নীচে সেসব দেশ এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবে। যেহেতু বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি সুতরাং বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যেই পেয়ে যাবে।”

অপরদিকে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর  ভ্যাকসিনস এন্ড ইমিউনাইজেশন (GAVI) নামের একটি সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান যেটি দরিদ্র দেশগুলিতে টিকাদান বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে থাকে, সম্প্রতি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতিতে উঠে এসেছে ৯২টি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ GAVI COVAX AMC এর মাধ্যমে টিকা পাবে। গ্যাভি কোম্যাক্স এএমসি  নিম্ন আয়ের দেশগুলি যাতে চিকিত্সা সেবায় সমান সুযোগ পায়, তার একটি অভিনব অর্থায়ন পদ্ধতি

GAVI বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাঃ এনগোজি ওকনজো-আইওয়ালা বলেছেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমরা অর্থনীতির সবচেয়ে মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হয়েছি এবং এই সংকটটি দরিদ্র ও উদীয়মান অর্থনীতির উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। তাই এটি আমাদের দায়িত্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুবিধাগুলো পৃথিবীর বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেয়া।“

তবে উক্ত বিবৃতির কোথাও উল্লেখ নেই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। বরঞ্চ সেখানে বলা হয়েছে COVAX সুবিধায় ইতিমধ্যে আগ্রহের প্রকাশ জমা দেওয়া নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে টিকা নেবার জন্য এবং ভবিষ্যতে টিকা সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য আর্থিক অবদানের মাধ্যমে আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তি করতে হবে।

ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ সেথ বার্কলে বলেছেন,” প্রতিটি অর্থনীতি, বিশেষত দরিদ্রতম দেশগুলো যাতে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা পাবার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। নিরাপদ এবং কার্যকর টিকা প্রস্তুত হওয়ার পরে তা বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য এখন আমাদের সহায়তা এবং জরুরী তহবিলের প্রয়োজন।“

২০২১ সালের মধ্যে ৯২ টি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে দুই শত কোটি নিরাপদ এবং কার্যকর ভ্যাকসিন সরবরাহ করার লক্ষ্যে কাজ করছে GAVI। ইতিমধ্যে তহবিলসংগ্রহের জন্য কাজ করছে প্রতিষ্ঠনটি। উল্লেখ্য ৯২ টি নিম্ন-মধ্যম আয়ের সবগুলো দেশের মাথা পিছু আয় $ ৪,০০০ মার্কিন ডলারের কম। তবে উক্ত বিবৃতিতে কোথাও উল্লেখ নেই যে এই ৯২টি দেশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কোভিড – ১৯ এর টিকা পাবে।

এমনকি জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সেই বিশেষ সভায় সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সচিব এটি বলেননি যে, এই টিকা জনগণের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী   তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেশে এলে দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে ক্রমান্বয়ে বিতরণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। একই সাথে ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া ও বিতরণের জন্যও সরকার যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

তাই ‘ফ্রি করোনার টিকা পাবে বাংলাদেশের মানুষ’ কিংবা ‘দেশে করোনার ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হবে’ শিরোনামগুলো বিভ্রান্তিকর। তবে বিনামূল্যে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই সেটাও বলা সম্ভব নয়, অতএব ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এটি অর্ধসত্য।

তথ্যসূত্র

দৈনিক কালের কলরব

অভিযাত্রা

দ্য ডেইলি স্টার

গ্লোবাল এলায়েন্স ফর  ভ্যাকসিনস এন্ড ইমিউনাইজেশন (GAVI)

গ্যাভি কোম্যাক্স এএমসি

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@www.fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ fb.com/search.ulab

No Factcheck schema data available.