২১ শে জানুয়ারি ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ টিকার ২০ লাখ ডোজ এসেছে বাংলাদেশে। একই দিনে রয়টার্সে প্রকাশিতে এক সংবাদে বলা হয়েছে, ভারত বায়োটেক করোনাভাইরাসের টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানোর অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ মেডিকাল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে। এরই মধ্যে ফেইসবুকে Journalist Elias Hossain এবং Dr. Zafrullah Chowdhury নামের দুটি পেইজ থেকে রয়টার্সের এই খবরের বরাতে দাবি করা হয়েছে যে, “ভারত করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে ভারত যদি দেখে এটা নিরাপদ, তখন তারা ভারতের জনগণকে এই ভ্যাকসিন দিবে।’’ আদতে ভারত সরকার বাংলাদেশে যে টিকা পাঠিয়েছে তা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরী, যার নাম ‘কোভিশিল্ড’। আর ভারত বায়োটেক যে ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন করেছে, সেটি সম্পুর্ণ আলাদা ফর্মুলার ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাক্সিন’। অতএব “জার্নালিস্ট ইলিয়াস হোসেইন” এই দুই ভ্যাক্সিন গুলিয়ে ফেলে যা দাবি করছে, তা মিথ্যা।
ভারত বাংলাদেশে কোন টিকা পাঠাচ্ছে এবং কেন?
বাংলাদেশ সরকার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকালস এর মাধ্যমে ভারিতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ টিকার তিন কোটি ডোজ আমদানি করবার চুক্তি করেছে। স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান ২০শে জানুয়ারি টিকা বিষয়ক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান এই ক্রয়কৃত ভ্যাকসিনের পঞ্চাশ লক্ষ ডোজ ২৫শে জানুয়ারী দেশে আসবে। এই একই ভ্যাকসিন প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিনামূল্যে ‘ভ্যাক্সিন মৈত্রী’ নামে একটি কর্মসূচির আওতায় পাঠাচ্ছে ভারত। এরই বিশ লক্ষ ডোজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে।
‘কোভিশিল্ড’ টিকা তৈরী করছে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। তাদের তৈরী বিভিন্ন ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত এবং তা বিশ্বের ১৭০ টি দেশে ব্যবহৃত হয়। গত বছরের জুনে অ্যাস্ট্রাজেনেকা সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদনের চুক্তি করে। এরই আওতায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য।
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটি শিম্পাঞ্জি থেকে পাওয়া একটি সাধারণ সর্দিকাশির ভাইরাস বা অ্যাডেনোভাইরাসের দুর্বল সংস্করণ থেকে তৈরি। এটি ঘরোয়া রেফ্রিজারেটরের মতো দুই থেকে চার ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিরাপদে সংরক্ষণ যায়।
ভারত বায়োটেক কোন ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন করেছে?
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতীয় কোম্পানি ‘ভারত বায়োটেক’ তাদের করোনাভাইরাসের টিকা ‘কোভ্যাকসিন’ নিয়ে বাংলাদেশে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি চেয়েছে। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনের সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক মাহমুদ-উজ-জাহান ভারত বায়োটেকের কাছ থেকে এরকম একটি প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এই ভ্যাকসিনটি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি-র যৌথ উদ্যোগে সাথে সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় গবেষনা ও প্রযুক্তিতে তৈরী হচ্ছে। ভারত বায়োটেক গত ২৪ বছর ধরে ভ্যাকসিন উদপাদন করছে এবং ১২৩ টির বেশি দেশে রপ্তানিও করেছে।
ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির কাছ থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের নমুনা থেকে ভাইরাসটির নিষ্ক্রিয় রূপের ভিত্তিতে এটি তৈরী হচ্ছে। এর পেছনের তত্ত্ব হল মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলি নিষ্ক্রিয় ভাইরাসকে সনাক্ত করে তার ভিত্তিতে অ্যান্টিবডি তৈরী করতে পারে যা সক্রিয় করনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর। এই ভ্যাকসিনটি দুই থেকে চার ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।
ছবি – দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে ভারত বায়োটেক কোম্পানির ‘কোভ্যাক্সিন’ এর ছবি, অথচ ভারত বাংলাদেশে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন।