নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে?

109
নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে?
নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে?

Published on: [post_published]

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিন-তারিখ সম্বলিত একটি পোস্টার ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এই পোস্টারে দাবি করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের ২৩শে ডিসেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে। মূলত, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কোনো দিনক্ষণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২৩শে ডিসেম্বরকে ভোটগ্রহণের দিন হিসাবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল, এবং পরে সেটা এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০শে ডিসেম্বর পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। ৫ বছর পরে ২০২৩ সালে এসে পুরনো সেই তফসিলের দিন তারিখগুলোকেই ২০২৩ এর নির্বাচনের তারিখ বলে দাবি করা হচ্ছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

এসব পোস্টে জানানো হচ্ছে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন এর কর্মপরিকল্পনা জানিয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী , আগামী ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা , ১৯ নভেম্বর রোববার মনোনয়নপত্র জমা  দেওয়ার শেষ তারিখ ,২২ নভেম্বর  বুধবার মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই , ২৯ নভেম্বর বুধবার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ ,৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৩ ডিসেম্বর শনিবার ভোট গ্রহণ এর দিন ধার্য করা হয়েছে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

২০১৮ সালে সর্বশেষ, অর্থাৎ একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এ ৮ই নভেম্বর,২০২২ তারিখে প্রকাশিত তফসিল ঘোষণা, ভোট ২৩ ডিসেম্বর  শীর্ষক খবর থেকে উক্ত নির্বাচনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনক্ষণ জানা যাচ্ছে। খবরে বলা হয়েছে, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ২২ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর। ২৯ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ৩০ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। তার ২৩ দিন পর হবে ভোটগ্রহণ।

এখানে উল্লেখ করা ৫ টি তারিখের সাথে ছড়িয়ে পড়া পোস্টারের ৫ টি তারিখ মিলে যাচ্ছে। তবে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দিনে, অর্থাৎ ৮ই নভেম্বর । ৯ই নভেম্বরে নয়।

পরবর্তীতে ১২ই নভেম্বর ২০১৮ তারিখে দিনক্ষণগুলোতে কিছুটা রদবদল ঘটায় নির্বাচন কমিশন। পরিবর্তিত সূচি অনুযায়ী,মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৯শে নভেম্বরের পরিবর্তে ২৮শে নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ২৩শে ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০শে ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। অন্যান্য ঘটনার দিন তারিখও যথাযথভাবে পুনঃনির্ধারিত হয়। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে যে সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছিল, পরবর্তীতে তার প্রায় সবগুলো তারিখই পরিবর্তিত হয়েছিল।

৫ বছর পরে ২০২৩ সালের নির্বাচন নিয়েও বর্তমানে জল্পনা কল্পনা চলছে।  ২০২২ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন কমিশনার আহসান হাবিব খান ।  আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে তিনি বলেছিলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এই রোডম্যাপের কথা উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন দেখুন- এখানে , এখানে , এখানে

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক পুস্তিকার ৩য় পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে, লেখা রয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ তারিখে। ফলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এর বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো দিনক্ষণ জানানো হয়নি।

তবে ফেসবুকে ২৩শে ডিসেম্বর তারিখে ভোটগ্রহণের গুজবটি ভাইরাল হলে নির্বাচন কমিশনাররা সংবাদমাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আহসান হাবিব খান জানিয়েছেন, ফেসবুকে নির্বাচন সংক্রান্ত যে তথ্যটি ঘুরছে তা আদৌ সত্য নয়। এটা শতভাগ গুজব। এই তথ্যের কোনো সত্যতা নেই। তবে এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ গুজবে কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হয় আমি সেই অনুরোধ জানাব। কোন উদ্দেশে করাচ্ছে, কেবা করাচ্ছে এটা নিয়ে উই আর নট বদার্ড। যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তাদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। আমরা নির্বাচনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছি সে অনুযায়ী কাজ চলছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী যথাসময়ে কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে ভোট।’

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের  অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে যে তথ্যটি প্রচার হচ্ছে সেটি ভুয়া। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নির্বাচন কমিশন কখনও এত আগে তফসিলের বিষয়ে তথ্য দেয় না। এসব ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশনের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।

এসব বক্তব্য দেখতে পাবেন –কালের কণ্ঠ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, বাংলানিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম  সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

সিদ্ধান্ত

নির্বাচন কমিশন এখনো পর্যন্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কোনো দিনতারিখ ঘোষণা করেনি। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনাকে ফেসবুকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা হিসেবে দাবি করা হচ্ছে, যা সত্য নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.