১৩ জন স্ত্রীকে একসাথে গর্ভবতী বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড করলেন স্বামী- শিরোনামে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে। এখানে নাম ঠিকানাবিহীন জনৈক নাইজেরীয় তরুণ এবং তার ১৩ স্ত্রীর একই সময়ে গর্ভাবস্থার কথা বলা হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, এই খবরটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। খবরে তথ্যের সমর্থনে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয় নি। আর ব্যবহৃত ছবিটি ভারতের অমৃতসরের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নেয়া। সবকিছু বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ একে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
গুজবের উৎস
১১ই সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ১৩ মিনিটে একযোগে বিভিন্ন গ্রুপে worldnewstip ওয়েব পোর্টালের একটি খবর শেয়ার করার মাধ্যমে এই গুজবটা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আরো বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ এবং প্রফাইল থেকে এই খবরটা দেখা যায়। এমন কিছু খবর দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
worldnewstip এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এই ছবিটিতে দৃশ্যত ব্যক্তি যিনি নাইজেরিয়ার বাসিন্দা (যদিও সেই ব্যাপারে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে) সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিলেন। সাধারণ এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং তার দু পাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছেন গর্ভবতী মহিলারা। বলা হচ্ছে যে, ওই ব্যক্তি সমস্ত মহিলাকেই বিয়ে করেছেন এবং সকলের গর্ভেই তার সন্তান রয়েছে। তারা সকলেই একসাথে গর্ভবতী হয়েছেন।
তবে এই ঘটনা মিথ্যে হওয়ারও যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রথম কারণ নাইজেরিয়ার আইন কোনোভাবেই বহুবিবাহকে সমর্থন করে না, যেমনটা এখানে বলা হয়েছে। দেশে বহুবিবাহ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর দ্বিতীয় কারণ হল, ছবিগুলির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে মনে হয় এটি কোনো গর্ভাবস্থার সময়ের ফটোশ্যুট ব্যতীত অন্য কিছু নয় ।
লক্ষনীয়, খবরের সাথে প্রকাশিত ছবিতে কোনো পুরুষ লোককে দেখা যাচ্ছেনা। অথচ খবরের ভিতরে বলা হয়েছে, ‘’এই ছবিটিতে দৃশ্যত ব্যক্তি যিনি নাইজেরিয়ার বাসিন্দা’’ – যা স্পষ্টত বিভ্রান্তিকর।
এছাড়া, খবরের বিস্তারিত অংশে দেখা যাচ্ছে, এটি যে একটি গুজব কিংবা ফেক নিউজ হতে পারে, সে কথা এই নিবন্ধের লেখকও স্বীকার করছেন। কিন্তু তিনি বিস্তারিত অনুসন্ধান না করেই ১৩ জন স্ত্রীকে একসাথে গর্ভবতী বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড করলেন স্বামী শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে, যার ফলে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
শিরোনামে ‘বিশ্বরেকর্ড’ এর কথা বলা হলেও, কোন সংস্থার কোন রেকর্ড করলেন তিনি, এবং তার পূর্ববর্তী রেকর্ডধারী কে ছিলেন, সে কথাও জানানো হয়নি।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল ছাড়া মূল ধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে এই খবরটি দেখা যাচ্ছে না।
এছাড়া , কথিত নাইজেরিয়ান যুবকের নাম কিংবা তার ১৩ স্ত্রীর কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি । ঘটনার সময়কাল সম্পর্কেও কিছু জানা যাচ্ছে না। কারণ সাম্প্রতিক (সেপ্টেম্বর ২০২১) সময় ছাড়াও অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই খবরটা বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে দেখা গিয়েছিল।
খবরের সাথে যে ছবিটা ব্যবহার করা হয়েছে, অনুসন্ধানে দেখা গেল ,সেই ছবিটি তুলেছিলেন এএফপি’র ফটোগ্রাফার নারিন্দার নানু ২০১৩ সালের ১১ই জুলাই । গেটি ইমেজে মূল ছবিটি খুজে পাওয়া গেল। ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ভারতের অমৃতসরের একটি সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভবতী মায়েরা চেক আপ এর জন্য দাঁড়িয়ে আছেন।
উক্ত গর্ভবতী মেয়েরা একই ছেলের স্ত্রী কিনা কিংবা তাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এই গুজবটা অতীতেও দেখা গিয়েছিল , তবে সেবার ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। যেমন- দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে .।
এই ছবিতে একজন যুবকের সাথে ১৩ গর্ভবতী তরুণীকে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
IFCN এর অন্যতম সিগনেটরি, আফ্রিকা অঞ্চলের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা Dubawa এই ছবিটা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে , এখানে মোট ১৪ তরুণী ছিল। মাঝের তরুণীকে এডিট করে উক্ত যুবকের ছবি যোগ করা হয়েছে।
এছাড়া, একজন নাইজেরীয় তরুণের সাথে এতজন এশিয়ান তরুণীর বিয়ের ঘটনাকে খুবই অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছে Dubawa।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত
আফ্রিকান তরুণের একসাথে ১৩ স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়ার দাবিটি একটি পুরনো গুজব। সম্প্রতি এই গুজবটাই নতুন করে ভাইরাল হয়েছে নতুন একটি ছবিকে কেন্দ্র করে। ফ্যাক্টওয়াচ দেখতে পেয়েছে, পুরনো এবং নতুন, কোনো ছবিই উক্ত দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিচ্ছে না । সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?