সম্প্রতি সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো ১৪টি লাশ এমন দাবিতে ছবিসহ একটি খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে উক্ত খবরের সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিবেদনে ১৪ রোহিঙ্গার মরদেহ ক্যাপশনে ব্যবহৃত ছবিটি সাম্প্রতিক নয়। নিউইয়র্ক টাইমসের ১ মে, ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনের ছবি এটি। টেকনাফের পাশে তোলা হয়েছিলো। ছবিতে কোনো মরদেহ নয় বরং সেসময় রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি সৈকতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
বর্তমান প্রতিদিন এবং নিউজফ্ল্যাস ৭১ নামক দুইটি ওয়েবপোর্টালে প্রকাশিত এই ছবিসহ এই প্রতিবেদনের আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে।
ভাইরাল প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, মিয়ানমার সমুদ্রসৈকতে ১৪ টি মরদেহ ভেসে এসেছে। সেখানে ১৪ টি লাশের ছবি হিসেবে নিম্নোক্ত ছবিটিও দেখতে পাওয়া যায়।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
উক্ত খবরে থাকা প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, একুশে টিভি এবং ডেইলি স্টারের দুইটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ডেইলি স্টারে ২৪ মে, ২০২২ এ প্রকাশিত “14 bodies found washed up on Myanmar” শিরোনামে এই প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এএফপি, ইয়াঙ্গুনের বরাত দিয়ে জানানো, ২৩মে, ২০২২ এ মিয়ানমারের সমুদ্রসৈকতে ১৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে একটি প্রতিকী ছবি ব্যবহার করা হয়। সেখানে আরোও বলা হয়, মিয়ানমার থেকে অভিবাসীরা নৌকায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো।
কিন্তু “সমুদ্র সৈকতে ভেসে এলো ১৪ টি লাশ” ক্যাপশনে ভাইরাল সেসব খবরে একটি ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত ১ মে, ২০২০ এর একটি প্রতিবেদনে ছবিটি পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে ছবি সম্পর্কে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি সমুদ্রকূলে দেখা যাচ্ছে। টেকনাফের আশেপাশে তোলা হয়েছিলো ছবিটি। এএফপির ফটোগ্রাফার সোজাউদ্দিন রুবেলের ছবি এটি।
অর্থাৎ, সম্প্রতি ভাইরাল প্রতিবেদনে ১৪ টি লাশ দাবি করা ছবিটি ২০২০ সালের ভিন্ন একটি ঘটনার। ছবিতে রোহিঙ্গাদের লাশ নয় বরং তাদের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি দেখা যাচ্ছিলো।
ছবিতে থাকা বিভিন্ন বস্তুগুলো এমনভাবে আছে যে দেখে লাশ ভেবে বিভ্রান্ত হতে পারে। একই ছবি ঢাকাপোস্ট নামে একটি ওয়েবপোর্টালেও দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে ক্যাপশন বা প্রতিকী ছবি এমন কোনো কথার উল্লেখ নেই। যার কারণে সাধারন মানুষজন ছবিটিকে এই ঘটনার বলেই ধারণা করে নিতে পারে।
একইভাবে সময় টিভি এবং একুশে টিভিতেও অন্য আরেকটি ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানেও ছবি সম্পর্কে কোনো ধরণের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
উপরোক্ত এই ছবিটি গেটিইমেজে ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ এ দেখতে পাওয়া যায়।
সুতরাং, বিষয়টি পরিষ্কার যে মিয়ানমারের সমুদ্রসৈকতে ১৪ টি লাশ পাওয়া যাওয়ার ঘটনাটি সত্য। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে সেখানে ব্যবহৃত ছবিগুলো এক ঘটনার নয়। যার ফলে এক ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন ফেসবুক পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?