‘‘টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ এ ফাইজার টীকা নেওয়ার পর ১৬ শিক্ষার্থী মৃত্যুবরন করেছে ’’—এমন একটি খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ১৬ শিক্ষার্থী নয়, বরং মাত্র ১ জন শিক্ষার্থী টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ এ টিকা নিতে এসে মারা গিয়েছেন। এবং তিনি টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে মারা যাননি , বরং টিকা নেওয়ার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
২০শে জানুয়ারি দুপুরে ১৬ বছর বয়সী ফরহাদ টঙ্গী পাইলট স্কুল এ্যান্ড কলেজে টিকা নিতে এসে মারা যান ফরহাদ হোসেন নামের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর । সে টঙ্গীর এরশাদ নগরে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। সে এরশাদ নগর ৫ নম্বর ব্লকের মোস্তাফার ছেলে।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সেদিন টঙ্গী পাইলট স্কুল মাঠে টিকা নিতে তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ভিড় জমায়। ভিড়ের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থেকে বেলা পৌনে ২টায় ফরহাদ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে প্রথমে স্থানীয় ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও পরে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনালের হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ দিকে টিকা নেয়ার পর অসুস্থ হয়ে ফরহাদের মৃত্যু হয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো: আলাউাদ্দন মিয়া ও টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শাহ আলম জানান, ফরহাদ আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। তার হার্টের সমস্যা ছিল। গতকাল কেন্দ্রে টিকা নেয়ার আগেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
নিহত ফরহাদের সহপাঠী জাহিদ হাসান দৈনিক যুগান্তরকেবলেন, আমরা পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার টিকাদান কেন্দ্রে যাই। সকাল ৭টা থেকে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার প্রথম ডোজ (ফাইজার) দেওয়া শুরু হয়। বেলা ১টা ৪৫মিনিটে ওই কেন্দ্রের ১০১ নম্বর কক্ষে টিকা নিতে প্রবেশ করেন ফরহাদ। এর কিছুক্ষণ পরেই সে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হোসেন মার্কেট ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সকল সংবাদে দেখা যাচ্ছে, ফরহাদ টিকার জন্য লাইনে দাঁড়ালেও সে টিকা নেয়ার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ, টিকার কোনো পার্স্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য তার মৃত্যু ঘটেনি।
ভিডিওতে নিহতের এক স্বজনকে আহাজারি করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাজানরে এমনে মাইরা ফালাইলো করোনার সুই দিয়া!’ তার এই বক্তব্যকে কেউ কেউ ‘টিকার কারণেই মৃত্যু’র প্রমাণ হিসেবে দাবি করছেন।
তবে যেহেতু তিনি ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ নন, তাই তার দাবিকে কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই ধরা যায়।
নিহতের মা লিপি আক্তার সমকাল কে জানান , ফরহাদ ১৫ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন করে। টিকা নিতে বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে টঙ্গী পাইলট স্কুল কেন্দ্রে যায় সে। পরে দুপুরে সহপাঠীরা জানায় সে মারা গেছে। ফরহাদ আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত ছিল।
এসব সংবাদ মাধ্যমে নিহতের পুরো নাম হিসেবে ‘ফরহাদ হোসেন (১৬)’ লেখা হয়েছে, যেখান থেকে বুঝতে পারি, তার নাম ফরহাদ হোসেন এবং তার বয়স ১৬ বছর। অধিকাংশ ফেসবুক পেজ থেকেই এভাবেই ফরহাদ (১৬) এর মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে।
তবে, কিছু কিছু ফেসবুক পেজে বন্ধনীচিহ্নের বিভ্রান্তিকর ব্যবহারসহ লিখছে – ‘ফরহাদ সহ (১৬) শিক্ষার্থীর মৃত্যু’!
এমনকি E N K TV 24 নামক ইউটিউব চ্যানেলের ভাষ্যকার ১৬ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর মুখে উচ্চারণ করে গুজব ছড়াতে সহায়তা করেছেন ।
মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে ফরহাদ ছাড়া অন্য ১৫ জন বা ১৬ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কোনো সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই খবরটিকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?