২৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে “নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরু” শিরোনামে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতবেদন থেকে জানা যায় মহাসমাবেশে অংশ নিতে সকাল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনে আসতে শুরু করে এবং সকাল ১০টায় মহাসমাবেশ শুরুর চার ঘণ্টা আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীতে সমাবেশস্থল ভরে যায়।
২৯ শে জুলাই ২০২৩ তারিখে “মাতুয়াইল, ধোলাইখাল ও উত্তরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ” শিরোনামে প্রথম আলোর আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে ২৯শে জুলাই বেলা ১১টা থেকে ৫ ঘণ্টার ‘অবস্থান’ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ এবং বিএনপির ভিতর সংঘর্ষ ঘটে। ঢাকার ধোলাইখাল, উত্তরা ও মাতুয়াইলে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ওইদিন ২৯ জুলাই, ২০২৩ তারিখে প্রথম আলোর সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে পুলিশ এবং বিএনপির এই সংঘর্ষের সময় মাতুয়াইলে তিনটি বাসে এবং শ্যামলিতে একটি পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোর সংবাদটির শিরোনাম ছিলো “মাতুয়াইলে তিন বাসে, শ্যামলীতে পুলিশের গাড়িতে আগুন”।
প্রথম আলোর মূল সংবাদে বলা হয় রাজধানীরশ্যামলীতেপুলিশেরগাড়িতেআগুনওএকাধিকযানবাহনভাঙচুরেরঘটনাঘটেছে।অন্যদিকেমাতুয়াইলেবিএনপিরনেতা–কর্মীদেরসঙ্গেপুলিশেরসংঘর্ষেরসময়ওএরপরেতিনটিবাসেআগুনদেওয়াহয়েছে।
তবে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আগুন দিছে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ কাদের আটক করেছে সে সম্পর্কেও কোন তথ্য দেওয়া হয়নি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ আর বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথম আলোর শিরোনাম সম্বলিত একটি ছবি বা স্ক্রিনশট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। স্ক্রিনশটে এই শিরোনাম সম্বলিত প্রতিবেদনটি কবে প্রকাশ করা হয়েছে সে সম্পর্কে কোন তথ্য দেওয়া নেই। তাই উক্ত স্ক্রিনশট সম্বলিত পোস্ট ফেসবুকে দেখলে সাম্প্রতিক সময়ের মনে হওয়া স্বাভাবিক।
একারণে ৩০শে জুলাই প্রথম আলো তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানায় প্রথম আলোর নামে ছড়ানো স্ক্রিনশটগুলো মিথ্যা প্রচারণা।
উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায় ২০১৪ সালের প্রথম আলোর একটি সংবাদের স্ক্রিনশট ফেসবুকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হচ্ছে। একারণে প্রথম আলো এই বিভ্রান্তি এড়ানোর আহবান জানান।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ২০১৪ সালে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। ১লা জানুয়ারি, ২০১৪ সালে প্রকাশিত হওয়া সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো “বাসে আগুনের চেষ্টা, ছাত্রলীগের ৩ নেতা-কর্মী আটক”। ভাইরাল পোস্টের স্ক্রিনশটেও এই শিরোনামটি দেখতে পাওয়া যায়।
প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদনের মূল অংশ থেকে জানা যায় ,’ মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা বাসে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন, জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্লা (২৪), ছাত্রলীগকর্মী লিমন (২২) ও রানা (১৯)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাত পৌনে আটটার দিকে বাস টার্মিনালের পাশে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িতে পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ওই তিন যুবক। এ সময় পুলিশ তাঁদের হাতেনাতে আটক করে।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মেহেদী হাসান বলেন, ‘পেট্রলবোমাসহ জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্লা ও ছাত্রলীগকর্মী লিমন ও রানাকে পুলিশ আটক করেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক।’
প্রথম আলো ছাড়াও রাইজিং বিডি এবং বাংলা নিউজ ২৪ এর মতো গণমাধ্যমে এই সংবাদটি পাওয়া যায়। সেগুলো দেখুন এখানে, এখানে।
সারমর্ম
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে প্রথম আলোর নামে যে স্ক্রিনশটটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ের না। প্রথম আলো উক্ত প্রতিবেদনটি প্রচার করেছিলো ২০১৪ সালের ১লা জানুয়ারি। ২০১৪ সালের সেই সংবাদটা ছিলো মাগুরার এবং সেখানে বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো কুন্তু পোড়ানোর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ের বাস পোড়ানোর ঘটনাটা ঢাকার মাতুয়াইলে সংঘটিত হয়েছে। পুরনো নিউজের স্ক্রিনশট সাম্প্রতিক সময়ের বলে প্রচার করায় ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।