পাঠ্যবইয়ের বিতর্কিত গল্প-কবিতার তালিকাটি ৬ বছরের পুরনো

277
পাঠ্যবইয়ের বিতর্কিত গল্প-কবিতার তালিকাটি ৬ বছরের পুরনো
পাঠ্যবইয়ের বিতর্কিত গল্প-কবিতার তালিকাটি ৬ বছরের পুরনো

Published on: [post_published]

বাংলাদেশের সরকারী পাঠ্যপুস্তকে সুপরিচিত কিছু গল্প-কবিতা বাদ দিয়ে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করা হয়েছে মর্মে একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। জাতীয় সংসদেও এই তালিকার কিছু অংশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ফেসবুকের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি ২০১৬ সালের তৈরি করা তালিকা। ২০১৭ সালেই পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করা হয়েছিল, এবং তালিকার দাবির সাথে বর্তমানে অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকের কোনো মিল নেই।

গুজবের উৎস

সাম্প্রতিক সময়ে, ‘আমাদের টাঙ্গাইল’ গ্রুপে গত ১লা জুলাই রাত ১০ টা ৩ মিনিটে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম এর একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করা হয়। এই ভিডিও ক্লিপে ফখরুল ইমাম পাঠ্যপুস্তকে ৮ টি পরিবর্তন এর কথা উল্লেখ করেন। তবে ভিডিওর ক্যাপশনে জনৈক আজীজুল হক সংসদ সদস্যের বক্তব্য পরিবর্তন করে মোট ১৬ টি পরিবর্তন এর কথা উল্লেখ করেন।

ক্যাপশনে বলা হয়-

আমাদের পাঠ্যপুস্তকে বাংলা বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে –

১) ক্লাস-২: ‘সবাই মিলে করি কাজ – শিরোনামে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।

২) ক্লাস-৩: ‘খলিফা হযরত আবু বকর শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।

৩) ক্লাস-৪: খলিফা হযরত ওমর এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।

৪) ক্লাস-৫ : ‘বিদায় হজ্জ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।

৫) ক্লাস-৫: বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা নামক একটি কবিতা। যা বাদশাহ আলমগীর মহত্ব বর্ণনা উঠে এসেছে। এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত তা বর্ণনা করা হয়েছিলো।

৬) ক্লাস-৫ : শহীদ তিতুমীর নামক একটি জীবন চরিত। এ প্রবন্ধটিতে শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ ছিলো।

৭) ক্লাস-৬ : ড. মুহম্মদ শহীদু্ল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরুষ্কার নামক একটি ধর্মীয় শিক্ষনীয় ঘটনা।

৮) ক্লাস-৬ : মুসলিম দেশ ভ্রমণ কাহিনী- ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ

৯) ক্লাস-৬ : মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা নামক কবিতাটি।

১০) ক্লাস-৭: বাদ দেয়া হয়েছে মরু ভাষ্কর নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।

১১) ক্লাস-৮: বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বাবুরের মহত্ত্ব নামক কবিতাটি।

১২) ক্লাস ৯-১০: সর্ব প্রথম বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা নামক ধর্মভিত্তিক কবিতাটি।

১৩) ক্লাস ৯-১০: এরপর বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি ‘আলাওল এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ নামক কবিতাটি।

১৪) ক্লাস ৯-১০: বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা বঙ্গবানী কবিতাটি।

১৫) ক্লাস ৯-১০: গোলাম মোস্তাফার লেখা জীবন বিনিময় কবিতাটি। কবিতাটিতে মোঘল বাদশাহ বাবর ও তারপুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে লেখা।

১৬) ক্লাস ৯-১০: কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক কবিতা।

এই পোস্ট ভাইরাল হয় । অনেকেই এই তথ্যগুলো কপি করে নিজেদের প্রফাইলে, পেজে কিংবা গ্রুপ থেকে আপলোড করেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে, এখানে , এখানে

অনেকে আবার ১৬টি পয়েন্ট ঠিক রেখে আরো কিছু তথ্য এবং মতামত যোগ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

যেমন-জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র ছেলে মাসুদ সাঈদী ২রা জুলাই বিকাল ৪ টা ১১ মিনিটে তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট এবং ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লেখেন,

অশনি সংকেত !!

এখনি সোচ্চার হউন !!! 

আওয়ামী সরকারর নতুন শিক্ষানীতিতে দ্বিতীয় থেকে দশম শ্রেণি পযর্ন্ত ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। ঐচ্ছিকও রাখা হয়নি, যা আগে আবশ‍্যিক ছিল।

আমাদের কোমলমতি শিশুদের ইসলাম বিদ্বেষী বানানোর আয়োজন চূড়ান্ত। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০/৩০ বছর পর এক নাস্তিক‍্যবাদী প্রজন্ম গড়ে উঠবে।

পাঠ‍্যবই থেকে ইসলামী মূল‍্যবোধ সংশ্লিষ্ট সকল গল্প-কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। নিম্নে দেখুন-

পাঠ্যপুস্তকে বাংলা বই থেকে যা বাদ দেওয়া হয়েছে :-

১. দ্বিতীয় শ্রেণি –

সবাই মিলে করি কাজ – শিরোনামে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে।



১৬. নবম ও দশম শ্রেণি –

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

আসুন, ইসলাম ও মুসলিম মূল‍্যবোধ রক্ষায় সবাই একসাথে আওয়াজ তুলি- “ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল কর, করতে হবে।”

তবে, এই ১৬টি গল্প-কবিতার তালিকা প্রথমবারের মত ভাইরাল হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালের কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

এখানে , দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন পরিবর্তন এর দাবি করা হয়েছে।

বিষয়টা যাচাই করার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর ওয়েবসাইট থেকে আমরা সবগুলো পাঠ্যবই ডাইনলোড করে দাবিগুলো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করি।

ফ্যাক্টওয়াচ এর প্রাপ্ত অনুসন্ধান নিম্নরূপ-

১। দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ৭১ নাম্বার পৃষ্ঠায় সবাই মিলে করি কাজ শীর্ষক গল্পটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

২। তৃতীয় শ্রেণীর ৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত রয়েছে।

৩। চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা বই এ ৯৭ পৃষ্ঠায় খলিফা হযরত ওমর এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত রয়েছে।

৪।পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠায় “বিদায় হজ্জ” নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত আছে।

৫। পঞ্চম শ্রেণীর বইয়ের ৮১ পৃষ্ঠায় কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা “শিক্ষা গুরুর মর্যাদা” নামক কবিতাটি রয়েছে।

৬। এই ক্লাসেই ১১৫ পৃষ্ঠায় শহীদ তিতুমীর এর জীবনী দেখা যাচ্ছে।

৭। ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ের প্রথম গল্পটাই হল ড. মুহম্মদ শহীদু্ল্লাহ লিখিত “সততার পুরষ্কার” , ১ নম্বর পৃষ্ঠায় ।

৮। ১৪ নম্বর পৃষ্ঠায়  “নীলনদ আর পিরামিডের দেশ” নামক ভ্রমণকাহিনীটি দেখা যাচ্ছে ।

৯। কায়কোবাদের লেখা “প্রার্থনা” কবিতা টি পাওয়া যায়নি।

তবে অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের ৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় “প্রার্থনা“ কবিতাটি রয়েছে।

NCTB এর ওয়েবসাইট থেকে পূর্ববর্তী বছরগুলোর বই যাচাই করে দেখা গেল, এর আগের বছরগুলোতেও অষ্টম শ্রেণীতে “প্রার্থনা” কবিতাটা ছিল । তবে ষষ্ঠ শ্রেণীতে এই কবিতা কখনো ছিল না।

অর্থাৎ, সাম্প্রতিক বছরে ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।

১০। সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় “মরু ভাস্কর” নামক জীবনী গ্রন্থ রয়েছে।

১১। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ১০২ নম্বর পৃষ্ঠায় কালিদাস রায় রচিত “বাবরের মহত্ত্ব” কবিতাটি রয়েছে।

১২। নবম এবং দশম শ্রেণীর একক বই এর ১৮৯ পৃষ্ঠায় “বন্দনা’ কবিতাটি রয়েছে।

১৩। আলাওল এর ‘হামদ’ কবিতাটি দেখা যাচ্ছে ১৯২ পৃষ্ঠায়।

১৪। ১৯৫ পৃষ্ঠায় “বঙ্গবাণী” কবিতাটি রয়েছে।

১৫। গোলাম মোস্তফার “জীবন বিনিময়” কবিতাটি রয়েছে ২২৩ পৃষ্ঠায় ।

১৬। কাজী নজরুল ইসলাম -এর “ওমর ফারুক” কবিতাটি ২৩৩ পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে।

অর্থাৎ, দাবি করা ১৬টি দাবির মধ্যে একটি দাবির ও সত্যতা পাওয়া যায়নি। যে  গল্প কবিতাগুলো বাদ দেওয়ার দাবি করছে ভাইরাল পোস্টে , ২০২২ সালের পাঠ্যপুস্তকে এর প্রতিটাকেই খুজে পাওয়া গিয়েছে।

সাধারনত কয়েক বছর পরপরই পাঠ্যপুস্তকে আংশিক পরিবর্তন করা হয়। তবে আগামী ২০২৩ সাল পাঠ্যপুস্তকে কোনো পরিবর্তন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গ : ফখরুল ইমাম

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম গত ৩০শে জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন পরিবর্তন এর দাবি করেন।

তার বক্তব্যে মূলত ৮ টি পরিবর্তন এর কথা জানানো হয়। বাংলা ট্রিবিউন থেকে তার বক্তব্য উদ্ধৃত করছি ,
(১) ক্লাস টুতে কী করেছে? ‘সবাই মিলে কাজ করি শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল সেটা বাদ দিয়েছে। (২) থ্রিতে ‘খলিফা আবু বক্কর শিরোনামে সংক্ষিপ্ত জীবনী, সেটা বাদ দিয়েছে। (৩) ক্লাস ফোরে খলিফা হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবনী সেটা বাদ দিয়েছে। (৪) ফিফথে ‘বিদায় হজ্ব শেষ নবীর জীবনী একটা ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে।’’

(৫)  ‘পঞ্চম শ্রেণিতে ‘বই নামে একটা কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেটা ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন বিরোধী কবিতা। (৬) আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু নামক একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে। যা মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো। তাই গরু জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। (৭) সপ্তম শ্রেণির বইতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যয়ের ‘লালুনামক একটা গল্প ঢুকানো হয়েছে, যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালিপূজা ও পাঁঠাবলির কাহিনি। (৮) অষ্টম শ্রেণির বইতে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ, অর্থাৎ রামায়ণের সংক্ষিপ্ত রূপ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তার এই ৮ টি দাবির একটিও সঠিক নয়। প্রথম ৪ টি দাবি উপরে বর্ণিত ১৬ টি দাবির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ফখরুল ইমামের ৫ম থেকে ৮ম দাবির পক্ষেও প্রমাণ খুজে পাওয়া যায়নি। ‘বই’ , ‘লাল গরু’, ‘লালু’ কিংবা ‘রামায়ণ’ কোনো শ্রেণীর বইতেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েব সাইট রিউমার স্ক্যানার এবং চেক ফ্যাক্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা জানাচ্ছে, ফখরুল ইমাম এর বক্তব্য সঠিক নয়।

২রা জুলাই সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম সংসদে তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আমি সব সময় ডাবল চেক বা ট্রিপল  চেক করি। কিন্তু পত্রিকার ভেতরে এটা ২০১৬ সালের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা আমি লক্ষ করিনি। তাড়াহুড়ার মধ্যে আমি খেয়াল করিনি। ভুলটা আমারই হয়েছে। বিষয়টি খেয়াল করা দরকার ছিল।’

ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আমি এটা মিস করেছি, আমার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (প্রত্যাহার) করার জন্য আবেদন করেছি। আমি ২০১৬ সালের ২ জুলাইয়ের একটা রিপোর্ট ২০২২ ভেবে ভুল করে বক্তব্য দিয়েছি। ওই তারিখটা মিস করার ফলে এই গণ্ডগোলটা হয়েছে। আমি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি।’


নতুন শিক্ষানীতিতে কি ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে ?

পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এর একই পোস্টে অনেকে জানাচ্ছেন, সম্প্রতি দেশের নতুন শিক্ষানীতিতে ধর্মশিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে । তবে এই দাবি সত্য নয় । আগের মতই এই নতুন শিক্ষাক্রমেও তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা থাকবে।

এ বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ার কারণে গত ২৪ জুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এনসিটিবি (NCTB- National Curriculum & Text Book Board Bangladesh অর্থাৎ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে   নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার তথ্যটি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে জানিয়েছিল।

এ বিষয়ে দেখুন রিউমার স্ক্যানার এর ফ্যাক্টচেকিং রিপোর্ট।

২০১৩ এবং ২০১৭ সালের পাঠ্যবই সংশোধন

কয়েক বছর পরপরই বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে আংশিক পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের পাঠক্রম থেকে ১৬ টি গল্প কিংবা কবিতা পরিবর্তন করা হয়েছিল।

২০১৭ সালের নতুন পাঠক্রমে সেই একই ১৬ টি গল্প-কবিতা আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বই থেকে ২০১২ সালে যে বিষয়গুলো বাদ পড়েছিল তার সবই আবার ফিরে এসেছে ২০১৭ সালের সংস্করণে। আবার ২০১২ সালের বইয়ে নতুন যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে ২০০৩ সালে পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। প্রতিটি শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের বইয়ে ধর্মীয় বিষয় ও ভাবধারা যুক্ত করা হয়।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাঠ্যপুস্তক সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন করে। এর আলোকে নতুন পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হয় ২০১২ সালে, যা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায় ২০১৩ সালে। তখন বলা হয়েছিল, বাংলা বিষয়কে সাহিত্যসমৃদ্ধ এবং সর্বজনীন করার জন্য ধর্মীয় বিষয়গুলো সরিয়ে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

২০১৩ সালে গড়ে ওঠা সংগঠন হেফাজতে ইসলাম পাঠ্যপুস্তক সংস্কারের তীব্র বিরোধিতা করে। ওই বছরের শুরুতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়া ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লায় পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বই থেকে কী কী ইসলামী ভাবধারার লেখা বাদ পড়েছে এবং কোন কোন ‘হিন্দু লেখক’ ও ‘হিন্দুত্ববাদী’ লেখা যুক্ত হয়েছে সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের দাবিতে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান ভাইরাল পোস্ট এর হুবহু অনুকরণে একই তালিকা ২০১৬ সালেও ভাইরাল হয়েছিল। অর্থাৎ, এখন যে তালিকা ভাইরাল হয়েছে, সেটি নতুন নয়। বরং ৬ বছরের পুরনো তালিকা।

২০১৭ সালে সংশোধিত পাঠ্যবইয়ে দেখা যায়, হেফাজতে ইসলাম এর দাবি করা ১৬ টি গল্প-কবিতা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এ বিষয়ে সেই সময়কার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে

সেই ২০১৭ সালের পাঠ্যপুস্তক ২০২২ সালেও অবিকৃত রয়েছে। কাজেই ভাইরাল পোস্টে ১৬ টি পরিবর্তন এর দাবি একেবারেই সঠিক নয়।

পুরনো পোস্ট প্রেক্ষাপটবিহীনভাবে ৬ বছর পরে আবারো ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচ এসকল পোস্টকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.