“স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ”—পুরানো ছবি

12
“স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ”—পুরানো ছবি “স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ”—পুরানো ছবি

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে: গত ৭ই ডিসেম্বর জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, “স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে মেয়র লিটন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত ছবিটি দিয়ে দাবি করা হয়, রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি বিভ্রান্তিকর। যে ছবিটিকে ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ এর বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি মূলত ১৫ অক্টোবর ২০২৩ এ আপলোডকৃত একটি ছবি। অর্থ্যাৎ, এটি তফসিল ঘোষণার আগের ছবি। এর মানে হচ্ছে, রাহেনুল হক রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আগেই এই ছবিটি তোলা হয়েছে। তাই এই ছবির উপর ভিত্তি করে এটি বলা যাবে না যে,  “স্বতন্ত্র প্রার্থী” রাহেনুল হকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। এছাড়া এই ভাইরাল পোসে্টর প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহকারী মহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম  তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের বরাতে জানান যে, লিটন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করেন নি।

গুজবের উৎস: দৈনিক ইত্তেফাক এবং ফেইসবুকে শেয়ারকৃত পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: 

ভাইরাল এসব ফেসবুক পোস্টগুলোতে মূলত দৈনিক ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদনের লিংক দেখতে পাওয়া যায়। ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ ইত্তেফাক প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে,”গতকাল বুধবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে মেয়র লিটনের সঙ্গে দেখা করে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক।”। অর্থ্যাৎ, এখানে “গতকাল বুধবার” বলতে ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ কে বুঝানো হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করার জন্য প্রথমে ব্যবহৃত ছবিটি রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে এমডি মেরাজুল ইসলাম মেরাজ (Md Merazul Islam Meraz) নামক ফেসবুক আইডিতে গত ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ এ একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে বলা হচ্ছে, রাজশাহীর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়র হওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি এটি।

উল্লেখ্য, দেশের মূলধারার গণমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদন থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ১৫ই অক্টোবর খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়র হিসেবে প্রথম কার্যদিবস ছিলো। ভাইরাল ছবিটি ১৫ অক্টোবরেরই কি না এ বিষয়ে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া না গেলেও, সেইদিন মেয়র লিটনের গায়ের পাঞ্জাবির সাথে ১৫ অক্টোবরে পাওয়া ছবিতে পরিহিত পাঞ্জাবির শতভাগ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

তা থেকে ধারণা করা যায়, ছবিটি ওইদিনেরই হতে পারে।

তবে একটি বিষয় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, ইত্তেফাক দাবিকৃত ছবিটি ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ এর  না।

ছবিটি যদি ৬ ডিসেম্বরের না হয় তাহলে ইত্তেফাক প্রকাশিত দাবিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেননা গত ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ এ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। অর্থ্যাৎ, ১৫ অক্টোবরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন না কারণ তফসিল ঘোষণার পূর্বেই কখনো মনোনয়নপত্র জমা দাওয়ার সুযোগ নেই। মূল ছবিটি যেহেতু, তফসিল ঘোষণার কমপক্ষে এক মাস আগের তাই এই ছবির উপর ভিত্তি করে এটি বলা ঠিক হয় না যে, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনে মেয়র লিটনের সঙ্গে দেখা করে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান “স্বতন্ত্র প্রার্থী” রাহেনুল হক।

পরবর্তীতে, মেয়র লিটন উক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করছেন কি না এ বিষয়টি অনুসন্ধান করা হলে, সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে রাজশাহী জেলা শাখা সেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের এপিএস মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে  দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনের বিপরীতে তিনি লেখেন, ““আমি স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের থাকা উচিত। এমনিতে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন রাহেনুল হক। কিন্তু আমি তাকে সমর্থন দিইনি”। – জনাব A H M Khairuzzaman Liton, সম্মানিত প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং মাননীয় মেয়র, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।”।

অর্থ্যাৎ, তিনি মেয়র লিটনের বরাতে জানান যে, লিটন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করছেন না।

সুতরাং, উপরোক্ত সবগুলো অসংগতি বিবেচনায় ভাইরাল এসব ফেসবুক পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.