সম্প্রতি “ভারতে একসাথে ৮ হাজার হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে!” শিরোনামযুক্ত একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল। খবরটির ভেতরে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্যপ্রমাণ বা সূত্র নেই। খবরটিতে ব্যবহৃত ছবি দুটি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি দেয়াল ধ্বসের দুর্ঘটনায় বিচার-বৈষম্যের জের ধরে ২০১৯ সালে ৩,০০০ দলিতের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত দুটি পৃথক সংবাদ থেকে নেয়া হয়েছে। ফলে, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায়, খবরটি মিথ্যা।
উক্ত ভাইরাল খবরটির বিস্তারিত অংশে গিয়ে দেখা যায়, শিরোনামে “ভারতে একসাথে ৮ হাজার হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে!” বললেও, খবরের ভেতরে “৮ হাজার হিন্দু পরিবার” বলা হয়েছে। এছাড়াও, ভারতের কোন কোন স্থানে এত সংখ্যক হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তার উল্লেখ নেই। এছাড়া ভারতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমও এ ধরণের কোনো সংবাদ সম্প্রতি প্রকাশ করেনি। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া কয়েকটি খবর দেখুন এখানে,এখানে, এবং এখানে।
ভাইরাল হওয়া সংবাদটির শিরোনাম ধরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এ বছরের মে মাসেও খবরটি ভাইরাল হয়েছিল।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া খবরগুলোতে দেখা যায়, দুটি পৃথক ছবি একটি আরেকটির ওপরে বসিয়ে ফিচার ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। গুগলের রিভার্স ইমেইজ সার্চে দেখা যায়, ছবি দুটি গত ২০ ও ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে প্রকাশিত দুটি সংবাদে ব্যবহৃত হয়েছিল। সংবাদগুলোর মূল প্রেক্ষাপট হচ্ছে, ২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কোয়েম্বাটোর জেলার মেত্তুপালায়মের নিকটবর্তী নাদুর গ্রামে প্রবল বর্ষণে স্থানীয় প্রভাবশালীর দেয়াল ধ্বসের ঘটনায় দলিত সম্প্রদায়ের ১১ নারী ও তিন শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছিল। এই দুর্ঘটনায় সরকারের দিক থেকে বিচার-বৈষম্যের অভিযোগে ‘তামিল পুলিগাল’ নামে দলিতদের এক সংগঠনের পক্ষ থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়।
এবিষয়ে ‘তামিল পুলিগাল কাতচি’র সাধারণ সম্পাদক এম ইলাভেনিল বলেন, ‘আমরা দশকের পর দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক হয়েছে আর নয়।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘একটি ধর্ম যদি আমাদের জীবনের মূল্যই না দিতে পারে, তাহলে আমরা কেন নিজেদের শুধু শুধু বিসর্জন দিয়ে যাবো।’
এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে,এখানে, এবং এখানে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশী দুটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এবং এখানে।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া খবরগুলোর বিস্তারিত অংশের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের ক্রিকেটার স্পিন বোলার বিজন [বিয়র্ন] ফরটুইনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। যদিও এই তথ্যটি উক্ত খবরটির শিরোনামের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়।
যেহেতু প্রায় দু’বছর পুরনো কিছু সংবাদ থেকে ছবি নিয়ে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া খবরগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এই সংবাদে দাবি করা ইসলাম গ্রহণকারী ভারতীয়দের সংখ্যার সাথে সাথে পুরনো ঘটনাটির সংখ্যারও মিল নেই, তাই ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খবরটি মিথ্যা।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?