সূর্যের রং নিয়ে গবেষণানির্ভর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে একইরকমের উত্তর থাকলেও একটি সহজ ও সুন্দর ব্যাখ্যাসহ জবাব মেলে নাসার ওয়েবসাইটে। ২০১৭ সালের ২১শে আগস্টে হওয়া সূর্যগ্রহণ নিয়ে নাসার ওয়েবসাইটে একটি আলাদা অংশ তৈরি করা হয়। সেখানে নাসা বিজ্ঞানী লু মেয়ো সূর্যের প্রকৃত রং নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যাসহ একটি লেখা প্রকাশ করেন।
তবে সূর্যের রং নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের জানতে হবে আমাদের দৃষ্টিশক্তি কীভাবে কাজ করে। একটি বস্তুর উপর আলো প্রতিফলিত হয়ে সেই আলো আমাদের চোখে আসলেই সেই জিনিসটি আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়। সূর্য বা আলোর যেকোন উৎসের বেলায় এই প্রতিফলনের ব্যাপারটি আসে না। কারণ, তখন আলো সেই বস্তু থেকেই সরাসরি আমাদের চোখে এসে পড়ে। আলোর যেকোন উৎসের রং নির্ভর করে সেটি থেকে নিঃসৃত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর।
সূর্য থেকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো একইসাথে নিঃসৃত হয়। এর ভেতর রয়েছে সবুজ, নীল এবং লাল। এখানে বলে রাখা ভালো, আলো এবং অন্ধকারে (বা কম আলোতে) আমাদের দৃষ্টিশক্তি নির্ভর করে চোখে থাকা দুই প্রকারের কোষের উপর। যার একটি কোন (cone) এবং আরেকটি রড (rod)। “কোন” কোষগুলি রং নির্ণয় করতে সক্ষম। অন্যদিকে রড কোনোপ্রকার রং নির্ণয় করতে পারে না। তাই কম আলোতে আমরা রং দেখতে পাইনা। তখন সবকিছুই ধূসর মনে হয়।
আমাদের চোখে আবার কোন কোষ রয়েছে তিন প্রকারের। নীল, সবুজ এবং লাল। অর্থাৎ আমাদের চোখ কেবলমাত্র এই তিন বর্ণের আলোকেই শনাক্ত করতে পারে। সূর্য থেকে এই তিনটি বর্ণের আলো একইসাথে বের হওয়ায় সূর্যের রং আমাদের চোখে হয়ে যায় সাদা। একসাথে সবগুলি রংয়ের আলোর উপস্থিতিই সাদা আলোর জন্ম দেয়।
এখন প্রশ্ন আসে, সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে হলুদ দেখায় কেনো? এর পেছনে দায়ী করা যায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে। স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের “সোলার সেন্টার” এর একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছে। কোন এলাকায় সূর্যাস্তের সময় সূর্য সেই এলাকার পশ্চিমে একেবারে দিগন্তরেখায় থাকে। এসময় সূর্যের আলোকে বায়ুমণ্ডলের অনেক বেশি জায়গা পার করতে হয়। ফলে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিভিন্ন বর্ণের আলো (যেমন: সবুজ, নীল, বেগুনী) বায়ুমণ্ডলজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরে। তখন কেবলমাত্র দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোগুলি (লাল, হলুদ, কমলা) বায়ুমণ্ডলকে ভেদ করে আমাদের চোখে ধরা দিতে পারে।
সূর্যের প্রকৃত রং দেখতে যেতে হবে মহাশূন্যে। কারণ সেখানে বায়ুমণ্ডল নেই। মহাশূন্য থেকে সূর্যের তোলা বিভিন্ন ছবিতে সূর্যকে সাদা বলেই দেখা গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে নাসার উপরের ছবিটির কথাই বলা যায়।
তবে গুগলে সূর্যের নাম লিখে অনুসন্ধান করলে আপনি সূর্যের বিভিন্ন বর্ণের ছবি পাবেন। নীল থেকে শুরু করে ধূসর, কমলা, বেগুনীসহ বিভিন্ন বর্ণের ছবি রয়েছে সূর্যের। এসব ছবি বিজ্ঞানীরা বিশেষ ক্যামেরায় ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে তোলেন। সূর্যকে নিয়ে বিভিন্ন রকম গবেষণায় সাহায্য করে এগুলো।
ধরুন, কোনো একটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সূর্যের পৃষ্ঠে হওয়া কোনো একটি সৌরকলংক স্পষ্ট হয়, আবার কোনো একটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তোলা ছবিতে সৌরঝড়ের ব্যাপারটি পরিষ্কারভাবে উঠে আসে। এসব ছবির একটিও সূর্যের প্রকৃত বর্ণকে দেখায় না।