১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার প্রতিবাদে বৃটেনের রাণীর দেওয়া নাইটহুড বর্জন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে কোলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্ট গ্যালারিতে রবীন্দ্রনাথের যে চিত্রপ্রদর্শনী তাতে তিনি নাইটহুড সূত্রে পাওয়া ‘স্যার’ উপাধি ব্যবহার করেন।
রবীন্দ্রনাথের নাইটহুড বর্জন শিক্ষিত বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে খুবই পরিচিত ঐতিহাসিক সত্য। এ ব্যাপারে তাপস রায়ের জবানে প্রায় সব তথ্য এক সাথে পাওয়া যায়। রাইজিংবিডি ডট কম-এ তাপস রায়ের ‘প্রতিবাদী রবীন্দ্রনাথ’ নামে একটি লেখা ছাপা হয় ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর; সেখানে তাপস রায় লেখেন,
“জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখে বিচলিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে বছর ৩০ মে ইংরেজ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নাইটহুড উপাধি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি ভারতের ভাইসরয়ের কাছে একটি চিঠি লেখেন (চিঠিটি ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল। বাঙালি পাঠকের সুবিধার্থে রবীন্দ্রনাথ সেটি নিজেই বাংলায় অনুবাদ করেন। লেখাটি ‘দৈনিক বসুমতি’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল)।”
এর পরে তাপস রায় রবীন্দ্রনাথের চিঠির বাংলা ভার্সনও দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেখানে লিখেছেন,
“রাজাধিরাজ ভারতেশ্বর আমাকে নাইট উপাধি দিয়া সন্মানিত করিয়াছেন। সেই উপাধি পূর্বতন যে রাজপ্রতিনিধির হস্ত হইতে গ্রহণ করিয়াছিলাম, তাহার উদার চিত্ততার প্রতি চিরদিন আমার পরম শ্রদ্ধা আছে। উপরে বিবৃত কারণবশত বড় দুঃখেই আমি যথোচিত বিনয়ের সহিত শ্রীল শ্রীযুক্তের নিকট অদ্য এই উপরোধ উপস্থাপিত করিতে বাধ্য হইতেছি যে, সেই ‘নাইট’ পদটি হইতে আমাকে নিস্কৃতিদান করিবার ব্যবস্থা করা হয়।”
এই ঘটনার প্রায় ১৩ বছর পরে কোলকাতায় রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী হয়। সেই প্রদর্শনীর বিস্তারিত পাওয়া যায় মুকুল দে আর্কাইভে, ওয়েব লিংক এখানে । মুকুল দে এই প্রদর্শনীর স্পন্সর ছিলেন। নিচের ৩ ছবিতে প্রদর্শনীর ক্যাটালগ, পোস্টার এবং মুকুল দে গেস্ট হাউজে রবীন্দ্রনাথের দস্তখত দেখা যাচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, এই প্রদর্শনীতে রবীন্দ্রনাথ সরাসরি জড়িত ছিলেন। দুই পক্ষের মাঝে টাকাপয়সার লেনদেনের দলিলও আছে (নিচে)। কিন্তু কবে, কখন, কিভাবে এবং কেন রবীন্দ্রনাথ নাইটহুড ফেরত নিয়েছিলেন সেটি জানা যায় না।