ভারতের রক্তাক্ত এক নারীর ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে প্রচার

44
ভারতের রক্তাক্ত এক নারীর ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে প্রচার
ভারতের রক্তাক্ত এক নারীর ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে প্রচার

সম্প্রতি ফেসবুকে মারাত্মক আহত একজন নারীর ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি বাংলাদেশের ভিডিও। এলাকার নাম হিসেবে কুমিল্লা, টেকনাফ ও ফরিদপুরের নাম পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার। ফলে, ভিডিওটি বাংলাদেশের দাবি করা পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হল।

এ ধরনের পোস্টগুলোর কয়েকটি এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। 

ভিডিওটির কিছু স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে, ‘শাহাপরান ১৭.৬ কে (Shahaporan17.6k)’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পাওয়া যায়। গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। সেখানে ভিডিওটি সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভিডিওটিতে উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউ আহত ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করেন তার বাড়ি কোথায়? উত্তরে ওই নারী অস্ফুট ভাবে কিছু বলেন। এ সময় এক ব্যক্তিকে মুর্শিদাবাদ নামে অঞ্চলের নাম বলতে শোনা যায়। এখানে ভিডিওটিতে থাকা নারীকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। 

পরে আরও খুঁজে ‘vision18 বাংলা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির নারীর পরিহিত পোশাক, সড়কের মিল রয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে  প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যসহ বলা হয়েছে- 

 

বকুলতলা থানা এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয় এক মহিলাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। জয়নগরের বকুলতলা থানা এলাকার ঘটনা। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) গভীর রাতে মায়াহউরি পঞ্চায়েতের আনন্দপুর রথতলা এলাকায় ফাঁকা ধানক্ষেতের ধারে ইটের রাস্তায় এক মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এক টোটো চালক। তিনি এলাকার লোকজনকে ডাকেন। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় প্রধানকে। প্রধান এসে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ মহিলাকে উদ্ধার করে নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান মহিলার শরীরে অস্ত্রের কোপ ছিল। বিশেষ করে মহিলার মুখের এক দিক থেতলানো অবস্থায় ছিল। বেশ কয়েকটি দাঁত ভেঙে গিয়েছিল বলেও দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। জখম জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বলে জানান এলাকার লোকজন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনেই মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের পরিচয় জানা যায়নি। পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। কে কিভাবে মহিলাকে ওই জায়গায় এনে কোপালো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে কুলতলী থানার পুলিশ আধিকারিকরা।” 

এই ভিডিও’র সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধান চালিয়ে ‘ZEE ২৪ ঘণ্টার’ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়-

মঙ্গলবার গভীর রাতে মায়াহউরি পঞ্চায়েতের আনন্দপুর রথতলা এলাকায় ফাঁকা ধানক্ষেতের ধারে ইটের রাস্তায় এক মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এক টোটো চালক। তিনি এলাকার লোকজনকে ডাকেন। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় প্রধানকে। প্রধান এসে পুলিসকে খবর দেয়। পুলিস মহিলাকে উদ্ধার করে নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহিলার শরীরে অস্ত্রের কোপ ছিল। বিশেষ করে মহিলার মুখের এক দিক থেতলানো অবস্থায় ছিল। বেশ কয়েকটি দাঁত ভেঙে গিয়েছিল বলেও দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। জখম জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বলে জানান এলাকার লোকজন।” 

‘Hindustan times বাংলার’ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে কোনো ছবি বা ভিডিও সংযুক্ত না হলেও, বর্ণনা অনুযায়ী এটি ঐ ঘটনারই সাক্ষ্য দেয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয় নগরের বকুলতলা এলাকার এই ঘটনায় আহত নারীর হুবহু বর্ণনা এই প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়। 

কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন একাউন্ট থেকে একই ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি টেকনাফ কিংবা কুমিল্লার। কোথাও দাবি করা হয়েছে এটি ফরিদপুরের।

যেমন, এই আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে বলা হয়- “আইয়্যেমে জাহেলিয়া যুগকে হার মানিয়েছে, দিনের শুরুটাই হয় এখন লা*শ দিয়ে আর শেষটা হয় ধ*র্ষ*ণ দিয়ে।লোকেশন:- টেকনাফ।” 

এই আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়েছে- “ইন্না-লিল্লাহ কুমিল্লায় রাস্তায় মেরে ঠোট জিহবা কাটা বিবস্ত্র–এক নারী! মা! বোন! নিকৃষ্টতর মানুষের কাজ এইগুলা। প্রতিদিন রাত হলে প্রতিটি মানুষের উপরে নেমে আসে এক একটা আজাব।” 

সুতরাং, নিশ্চিত ভাবেই দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের। তাই যেসব পোস্টে এটিকে বাংলাদেশের দাবি করা হচ্ছে, সেগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করা সঙ্গত। 

Claim:
সম্প্রতি ফেসবুকে মারাত্মক আহত একজন নারীর ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি বাংলাদেশের ভিডিও। এলাকার নাম হিসেবে কুমিল্লা, ফরিদপুর ও টেকনাফের নাম পাওয়া যাচ্ছে।

Claimed By:
Facebook Users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh