সম্প্রতি বৃষ্টিতে না ভেজার পরামর্শ দিয়ে ডিএমপি (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) পরিচালকের বরাতে একটি বার্তা ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। সেখানে দাবি করা হয়, চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের কারণে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মেঘে মিশে গিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপি থেকে এমন কোনো বার্তা প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মেঘে মিশে গিয়ে বৃষ্টি হওয়ার বিষয়টিও ভিত্তিহীন।
সবাইকে সর্তক করা হচ্ছে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কোন বৃষ্টি আসলে কেউ এটা তে ভিজবেন না। চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড ভয়াবহ আগুনে যে, রাসায়নিক কেমিক্যাল গুলো ঝলসে গেছে। তার ফলে আকাশের মেঘ গুলোতে HYDROGEN PER OXIDE GAS টা মিশে গিয়েছে। সকলকে সর্তক ভার্তাটি প্রধান করুন, নিজে বাঁচুন, অন্য কে ও বাচার সুযোগ করে দিন বৃদ্ধদের বৃষ্টির সময় ঘর থেকে বের হতে দিবেন না। ভালো থাকবেন
– ডিএমপি পরিচালক”
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
উল্লেখিত পোস্টে থাকা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, নিউজ বাংলা ২৪ এর একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। “সীতাকুণ্ডের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কি মেঘে মিশবে?” এমন শিরোনামে ৬ জুন, ২০২২ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে জানানো হয় ডিএমপি থেকে এমন কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। এছাড়া “ডিএমপি পরিচালক” নামে যে পদের কথা বলা হচ্ছে এমন কোনো পদ সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেনের উদ্ধৃতিতে বলা হচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা পাঠানো হয়নি এবং এ ধরনের তথ্য যারা ছড়াচ্ছে তাদের সনাক্ত করতে তাদের সাইবার টিম কাজ করছে। এই বার্তাটিকে ভুয়া বলে তিনি চিহ্নিত করেন।
অন্যদিকে মেঘের সাথে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মিশে গিয়েছে এই দাবিকেও একই প্রতিবেদনে নাকচ করা হয়। সেখানে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপক এবং দেশের কয়েকজন আবহাওয়াবিদের মন্তব্যও তুলে ধরা হয়।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম গোলজার বলেন, “হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মূলত ডিকম্পোজ হয়ে অক্সিজেন তৈরি হয়। এই এইচটুওটু (H2O2) মূলত হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন। এটাকে ভেঙে অক্সিজেন রিলিজ হয় আর পানি তৈরি হয়। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে যদি কনটেইনারে রাখা হলে উত্তাপে অক্সিজেন রিলিজ হয়ে ব্লাস্ট (বিস্ফোরিত) হয়”।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মেঘে সেভাবে থাকবে না, ডিকম্পোজ হয়ে যাবে তাই বাতাসের সঙ্গে চলে যাবে এবং মেঘের সাথে মেশার কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া অধ্যাপক ড. ওমর আহমেদ এমন দাবিকে কাল্পনিক ও অবান্তর কথাবার্তা বলেও মন্তব্য করেন।
এসিড বৃষ্টি প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহ আলম এই প্রতিবেদনে বলেন, “আমাদের দেশে সাধারণত ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে, যে সময় বৃষ্টিপাত কম হয়, তখন খুবই অল্প পরিমাণে এসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে বৃষ্টি পানির রং লালচে দেখা যায়। এই এসিড বৃষ্টিতে খুবই সামান্য ক্ষতি হয়ে থাকে। এবং তা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় হয়।আমাদের দেশে এ ধরনের এসিড বৃষ্টি হলেও সীতাকুণ্ডের কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে হবে না। এটা ভ্রান্ত ধারণা”।
অর্থাৎ, মেঘে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মিশে গিয়েছে এবং এর কারণে ১০ থেকে ১৫ দিন বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না এমন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। বরং বিশেষজ্ঞরা এর বিপরীত মন্তব্যই করছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে এত বড় বিস্ফোরণের পিছনে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে দায়ী করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
সুতরাং, বিষয়টি পরিষ্কার যে ডিএমপি থেকে এমন কোনো বার্তা প্রচার করা হয়নি। আবার বৃষ্টিতে ১০-১৫ দিন ভেজা যাবে না এই দাবিটিও সঠিক নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ দাবিটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?