সম্প্রতিপঞ্চগড়েরসহিংসতারঘটনাকেকেন্দ্রকরেকাদিয়ানীকর্তৃক “মুসলমানহত্যা”রএকটিপোস্টছড়িয়ে পড়েছে । ভাইরালপোস্টেদাবি করা হয়,কাদিয়ানীরা স্থানীয় মুসলমানদেরবাড়িতেআগুনদিয়েছেএবং২জনকেহত্যাকরেছে।
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধানেএই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং গুজবছড়ানোরজন্যপুলিশফজলেরাব্বিসহ১৮জনকেআটকওকরেছে।সঙ্গত কারনে ফ্যাক্টওয়াচএই দাবিকে “মিথ্যা” হিসেবেচিহ্নিতকরছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল এবং পঞ্চগড় জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আনিস প্রধান ৩রা মার্চ, ২০২৩ তারিখে ফেসবুকে কাদিয়ানী (আহমেদিয়া মুসলিম) কর্তৃক মুসলমান হত্যার গুজবের বিরুদ্ধে দুইটি পোস্ট করেন।
তার প্রথম পোস্ট থেকে জানা যায় পঞ্চগড় জেলা শহরে রাত ৮ টায় কে বা কাহারা একটি গুজব ছড়িয়ে দেয় যে তুলার ডাংগায় ২ জনকে জবাই করে হত্যা করা হয়ছে। তবে এই গুজবের বিরুদ্ধে মসজিদের মাইকে প্রচারণা চালানো হয়।
তার দ্বিতীয় পোস্টে জানা যায় গুজব ছড়িয়ে পড়লে শহরের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যায়। এসময় ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দিক বিদিক ছুটাছুটি করে। এমন সময় কিছু সুযোগ সন্ধানী উচ্ছৃঙ্খল জনতা স্থানীয় একটি জুতার শো রুমে লুটপাট ও ভাংচুরসহ দুটি কাচ বিক্রির দোকানেও হামলা করে।
৫ মার্চ, ২০২৩ তারিখে পঞ্চগড় জেলা পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজ জেলা পুলিশ, পঞ্চগড় – District Police,Panchagarh থেকে “পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন ০২ জন মুসলমানকে গলা কেটে হত্যার গুজব সৃষ্টিকারীকে গ্রেফতার ” শিরোনামে একটি ফেসবুক পোস্ট করে। উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায় পঞ্চগড় জেলা শহরে কাদিয়ানীরা ২ জন মুসলমানকে জবাই করে হত্যা করেছে মর্মে গুজব সৃষ্টিকারী পৌর বিএনপি নেতা মোঃ ফজলে রাব্বীকে পুলিশ আটক করেছে। উক্ত পোস্ট থেকে আরো জানা যায় ফজলে রাব্বিসহ আরও একজন মোটর সাইকেলে পঞ্চগড় শহরের বিভিন্নস্থানে গিয়ে গুজব ছড়ায় যে কাদিয়ানীরা জবাই করে দুইজনকে হত্যা করেছে। গুজব এবং ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনার সাথে জড়িত মোঃ ফজলে রাব্বীসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গুজব ছড়ানো এবং হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের জন্য ১৮জনকে গ্রেফতারের সংবাদ গণমাধ্যমেও এসেছে। ৫ই মার্চ, ২০২৩ তারিখে “গুজব ছড়িয়ে সড়ক অবরোধ-গাড়িতে আগুন, যুবদল নেতাসহ আটক ১৮”শিরোনামে DHAKA POST সংবাদ প্রকাশ করে। উক্ত সংবাদে ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা জানান “ গ্রেপ্তারকৃত যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি শহরের বিভিন্নস্থানে গুজব ছড়ায় যে কাদিয়ানীরা জবাই করে দুইজনকে হত্যা করেছে। যেটি ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের ঘটনায় ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত আরও ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
গুজব সম্পর্কে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলের মাহমুদ আহম্মেদ সুমন বলেন “কে বা কারা মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে, আমাদের লোকজন নাকি কাউকে মেরে ফেলে রেখেছে। গুজবকে কেন্দ্র করে আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের অনেক ঘর-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির জেলায় আমাদের এখন আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।”
উক্ত সংবাদ থেকে আরো জানা যাচ্ছে গুজব ছড়ানোর পর শহরের ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায় ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে। একদল মাইক্রোবাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং সাইট রিউমর স্ক্যানারও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া কাদিয়ানী কতৃক মুসলমান হত্যার তথ্যটির সত্যতা অনুসন্ধান করেছে। রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানেও দেখা গেছে ভাইরাল তথ্যটি গুজব।
উল্লেখ্য, bdnews24.com এর সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে পঞ্চগড়ের আহম্মদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ৩ দিনব্যাপী সালানা জলসা বন্ধের ও আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামি আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরে বড় মিছিল হয়। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রাফিক পুলিশের স্টেশন, পঞ্চগড় বাজার মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর এবং বিকালে আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের মসজিদ পাড়া মহল্লার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান (২৭) এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান (২৩) নিহত হন বলে জানায় জেলা পুলিশ।
অতএব, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি ভিত্তিহীন । তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?