ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষিতে মা ও শিশুর এই ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি

89
ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষিতে মা ও শিশুর এই ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি
ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষিতে মা ও শিশুর এই ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি

Published on: [post_published]      

গত ২৭ মে ২০২৪ এ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্নিঝড় রেমাল (Remal)।  ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই দুর্যোগকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন নারী একটি নবজাতক শিশুকে আগলে ধরে কাদামাটিতে শুয়ে আছেন। ছবিটির পারিপার্শ্বিক অবস্থা একটি দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করছে। দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি ভোলার চরফ্যাশন থেকে তোলা হয়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুই মাস আগে থেকেই ছবিটির অস্তিত্ব ইন্টারনেটে রয়েছে। ফলে, আলোচিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। অন্যদিকে, ছবিটিতে দৃশ্যমান নারীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনেও বেশকিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা গেছে, যা ছবিটি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি সেটির সম্ভাবনাকে নির্দেশ করছে। ‘হাইভ মডারেশন’ নামক একটি সফটওয়্যার দিয়ে ছবিটি যাচাই করে এটি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। অতএব, ছবিটি যে ভোলার চরফ্যাশন থেকে তোলা হয়নি সেটি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।

 

অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিটি যথাযথ কিনা তা যাচাই করতে আমরা উক্ত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করি। অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি গত মার্চ মাস থেকেই ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে! এতে বোঝা যাচ্ছে, ছবিটি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর ভোলার চরফ্যাশন থেকে তোলা হয়নি – সামাজিক মাধ্যমে যেমনটি দাবি করা হচ্ছে। 

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন কয়েকটি ছবির নমুনা দেখবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

পরবর্তীতে আমরা ছবিটির উৎস খুঁজে বের করতে এটি কে তুলেছিলেন তা জানার চেষ্টা করি। কিন্তু তেমন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, যিনি ছবিটি তুলে থাকবেন। এতে করে আমাদের মনে সন্দেহ জাগে যে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে! এরপর আমরা ছবিটিকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করি এবং ছবিটিতে দৃশ্যমান নারীর হাত এবং পায়ের আঙ্গুলের গঠনে বেশকিছু অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাই। ঐ নারীর পায়ে পাঁচটি আঙ্গুলের জায়গায় ছয়টি আঙ্গুল এবং হাতে পাঁচটি আঙ্গুলের পরিবর্তে চারটি আঙ্গুল দেখা যায়। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের এমন অস্বাভাবিক গঠন এটিই নির্দেশ করে যে, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি। 

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে আমরা ‘হাইভ মডারেশন’ নামক একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবিটি যাচাই করে দেখি। সেখান থেকে জানা যায়, ছবিটি প্রায় শতভাগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। 

 

আমাদের অনুসন্ধানে ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজ মোবাইলের ফ্যাক্ট-চেকিং বিভাগের এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে। তাদের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। তাছাড়া, গত ১২ মার্চ ২০২৪ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি এটিও নির্দেশ করছে যে আলোচিত ছবিটি মার্চ মাস থেকেই ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর ভোলার চরফ্যাশন থেকে তোলা হয়েছে বলে যে ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে সেটি দুই মাস আগের ছবি। তাছাড়া, ছবিটি বাস্তবও নয়। বরং, সেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিটির দাবিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.