গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট থেকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের সময় একটি বিমানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসা ফ্লাইট এবিসি-০০১ নামে বিমানটিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ থেকে জানা যাচ্ছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ২ জুন ২০২৪ তারিখে বিমানে আগুন লাগার বাস্তবিক কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং বিমানে আগুন লাগার পর তা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যাত্রীদের কিভাবে দ্রুত উদ্ধার করা যায়, বিষয়গুলো নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একটি প্রশিক্ষণ মহড়ার আয়োজন করেছিল। প্রশিক্ষণ মহড়ার সেই ঘটনাকে বাস্তবে আগুন লাগার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
বিমানে আগুন লাগার দাবিটি দ্রুত ছড়িয়েছে কারণ মূলধারার একাধিক গণমাধ্যম থেকে এ বিষয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। “শাহজালালে অবতরণের সময় বিমানে আগুন” বা “ঢাকায় অবতরণের সময় বিমানে আগুন” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, “রোববার (২ জুন) বেলা ১১টায় সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসা ফ্লাইট এবিসি-০০১ নামে বিমানটিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে”।
ফ্যাক্টওয়াচ থেকে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেখা হয়, ২ জুন ২০২৪ তারিখে শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন লাগার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা। মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে মানবজমিন, কালবেলা, আরটিভি, যুগান্তর, বাহান্ন নিউজ ইত্যাদি এই ঘটনাকে পরিষ্কারভাবে বিমানে আগুন লাগার ঘটনা বলে দাবি করেছে। তার বিপরীতে, ডিবিসি নিউজ “বিমানে আগুন লাগলে কিভাবে তা নেভানো হয় তার মোহড়া DBC NEWS Live” শিরোনামে একটি লাইভ ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে তারা জানিয়েছে, বিমানে আগুন লাগলে তা নেভানোর উপায় এবং আগুন লাগা বিমান থেকে যাত্রীদের কিভাবে দ্রুত উদ্ধার ও রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে বিমানবন্দর কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে এ মহড়ার আয়োজন করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
অপরদিকে “উড়োজাহাজে আগুন লাগলে উপায় কী, দেখা গেল মহড়া” শিরোনামে bdnews24.com থেকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত অংশে জানানো হয়েছে, “আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিধি (আইসিএও) অনুসারে, প্রতি দুই বছর অন্তর সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের অগ্নিনির্বাপণ মহড়া আয়োজন করতে হয়।
মহড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, “এই বছরই বাংলাদেশে আইকাও’র অডিট হবে। এই অডিটে আমরা কীভাবে এই ধরনের কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করি, পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তারা সেগুলো দেখবে”। একই বিষয়ে সমকাল থেকে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার শিরোনাম হলো “শাহজালালে বিমানে আগুন নেভানোর মহড়া”।
বিমানে আগুন লাগা এবং তা নেভানোর ভিডিও দেখে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে এটি কোনো মহড়ার ভিডিও। বিমানটি কোনো আসল বিমানও নয় বরং বিমানের একটি রেপ্লিকা। প্রশিক্ষণ মহড়ার উদ্দেশ্যে যা তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, অনুসন্ধান করে এবিসি-০০১ নামে কোনো এয়ারলাইন্সের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা যাচ্ছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) রেপ্লিকা বিমানের কাল্পনিক নাম দিয়েছে এবিসি-০০১।
বলাবাহুল্য, যেই গণমাধ্যমগুলো থেকে আগুন লাগার ঘটনাকে বাস্তবিক ভেবে “শাহজালালে অবতরণের সময় বিমানে আগুন” ইত্যাদি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে তথ্যসূত্র হিসেবে বিমানবন্দরের ফায়ার লিডার মো: আক্তারের নাম উল্লেখ করেছে। তবে তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে দেখা যাচ্ছে এ ধরণের বক্তব্য যদি ফায়ার লিডার মো. আক্তার দিয়ে থাকেন তা বিভ্রান্তিকর। কারণ, বেবিচক চেয়ারম্যান পরিষ্কারভাবেই বলেছেন এটি মহড়া।
উল্লেখ্য, মূলধারার বেশ কিছু গণমাধ্যম পরবর্তীতে কোনো ডিসক্লেইমার ছাড়াই তাদের ফেসবুক পেজ থেকে সংবাদটি সরিয়ে ফেলে।
সঙ্গত কারণে, ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে অবতরণের সময় একটি বিমানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে এমন দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।