নির্বাচনে ভারতকে ৫০টি আসন দিয়েছে সরকার – এমন প্রতিবেদন করেছে আল-জাজিরা?

67
নির্বাচনে ভারতকে ৫০টি আসন দিয়েছে সরকার – এমন প্রতিবেদন করেছে আল-জাজিরা?
নির্বাচনে ভারতকে ৫০টি আসন দিয়েছে সরকার – এমন প্রতিবেদন করেছে আল-জাজিরা?

Published on: [post_published]

আল-জাজিরার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভারতকে ৫০টি আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিয়েছে বর্তমান সরকার – ক্যাপশনে এমন দাবি করে একটি ভিডিও পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে ফেসবুকে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, আল-জাজিরা বা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যম এমন কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নি। ভিডিওতে এমন কোনো প্রতিবেদন দেখানোও হয় নি। কিছুদিন পূর্বে একটি ভাইরাল ফোনালাপে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে “আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী, আমি ভারতের প্রার্থী” বলতে শোনা যায়। এ থেকে উদ্ভূত সন্দেহমূলক ধারণাকে ন্যায্যতা দেবার জন্য আল-জাজিরার প্রতিবেদনের মিথ্যা দাবি করা হয়েছে। তাই এমন ক্যাপশনের জন্য ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে “মিথ্যা” আখ্যা দিচ্ছে।

বিভ্রান্তির উৎস:

গত ২৬ ডিসেম্বর চকরিয়া মিডিয়া টিভি নামক ফেসবুক পেইজ এবং মোঁ সাঁগঁরঁ আঁহঁমেঁদঁ নামক একটি প্রোফাইল থেকে পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে। দেখুন এখানে, এখানে। 

 

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান: 

গত ১৭ ডিসেম্বর একটি ফোনালাপে অপরপ্রান্তের ব্যক্তির উদ্দেশ্যে মেহেরপুর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী, আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি।’ ফোনালাপটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে আব্দুল মান্নান বলেন, “আমি ভারতের প্রার্থী না বলেছি।নাশব্দটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেটে দেওয়া হয়েছে।“ এ বিষয়ে সমকালের প্রতিবেদন দেখুন এখানে, বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন দেখুন এখানে, দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন দেখুন এখানে, দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদন দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টওয়াচ ধারণা করছে, এই সংবাদের প্রেক্ষিতে ভিডিও পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে। 

প্রথমেই আল-জাজিরার ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভারতকে ৫০টি আসনের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিয়েছে বর্তমান সরকার – পোস্টের ক্যাপশনের উক্ত দাবিতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সন্ধান করা হয়। কিন্তু এমন কোনো প্রতিবেদন আল-জাজিরায় পাওয়া যায় নি। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সন্ধান করেও এমন প্রতিবেদন মেলে নি। 

ভিডিওর শুরুর দিকে একটি কথোপকথনের ফুটেজ দিয়ে ধারাভাষ্যে দাবি করা হয়েছে “আল-জাজিরার সাংবাদিক” জুলকারনাইন সামি “জাতীয় নির্বাচনে ভারতকে ৪০টি আসন দিয়েছে সরকার” এমন তথ্য দিয়েছেন। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামির ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে সন্ধান করে এ বিষয়ক কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কিংবা পোস্ট পাওয়া যায় নি। গুগল সার্চেও এমন কিছু পাওয়া যায় নি। 

ভিডিওর পরের অংশে বিএনপিপন্থী রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী রুমিন ফারহানাকে প্রফেসর আব্দুল মান্নানের ভাইরাল ফোনালাপের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মতামত দিতে দেখা যায় (ইউটিউব লিংক এখানে)। সেখানে রুমিন ফারহানা বলেছেন – বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করে দেয় ভারত এমন কানাঘুষো ছিল। কিন্তু একজন প্রার্থীর খোলামেলাভাবে সেটি ঘোষণা দেওয়ার ঘটনাটি এবারই প্রথম। এ থেকে প্রমাণিত হয় এবারকার নির্বাচনে ভারত তার নিজস্ব কিছু প্রার্থী দিয়েছে।  কিন্তু রুমিন ফারহানা তার সম্পূর্ণ বক্তব্যের কোথাও আল-জাজিরা বা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন নি। 

সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে, আল-জাজিরার এমন প্রতিবেদনের কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্যাপশনে এমন দাবি করা হলেও ভিডিওতে উক্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। মূলত আল-জাজিরার প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে একটি সন্দেহমূলক ধারণাকে ন্যায্যতা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.