“বিশ্ব রেকর্ড! পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইটি হলো পবিত্র আল-কোরআন! সুবহানআল্লাহ!” — এমন শিরোনামে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই তথ্যটির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্বের শীর্ষ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় কোরআনের অবস্থান খুঁজে পাওয়া গেলেও কোথাও উল্লেখ নেই যে, এটি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। বরং গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই ক্যাটাগরিতে বাইবেলের অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বাইবেল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া গেলেও কোরআন সম্পর্কে এমন কিছু পাওয়া যায়নি। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বহুসাংস্কৃতিক আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন নুবিয়া ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সর্বকালের সেরা ১০ টি বিক্রিত বইয়ের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাইবেল এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কোরআন। এই প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, এখন পর্যন্ত বাইবেলের প্রায় ৫ বিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে এবং কোরআনের ক্ষেত্রে তা ৮০০ মিলিয়ন। ইতিহাসে বাইবেল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যাপকভাবে অনূদিত কোনো ধর্মীয় বই।
এছাড়াও, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা বা সর্বোচ্চ দশ র্যাঙ্কিং প্রদানকারী আল টপ এভরিথিং নামক একটি ওয়েবসাইটেও সর্বকালের সেরা ১০টি সর্বাধিক বিক্রিত বইএর একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাইবেল, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে “কোটেশন ফ্রম চেয়ারম্যান মাও সে-তুং” যা “লিটল রেড বুক” নামেও পরিচিত এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কোরআন। এই তালিকায় বলে হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী বাইবেলের ৫ বিলিয়ন, লিটল রেড বুকের ১.১ বিলিয়ন এবং কোরআনের ৮০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে৷
সুতরাং, এই দুই তালিকা অনুযায়ি এতটুকু পরিষ্কার যে, আল- কোরআন এবং লিটল রেড বুকের নাম সর্বকালের সেরা ১০টি সর্বাধিক বিক্রিত বইএর তালিকায় খুঁজে পাওয়া গেলেও সর্বোচ্চ অবস্থানে কিন্তু বাইবেলই রয়েছে।
পরবর্তিতে, গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই ক্যাটাগরিতে বাইবেলের রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়। গিনেজ বুকের এই রিপোর্ট অনুযায়ী সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রিত বই হল খ্রিস্টান বাইবেল। ২০২১ সালে ব্রিটিশ এবং বিদেশী বাইবেল সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী মোট বিক্রিত বাইবেলের সম্ভাব্য কপির সংখ্যা ৫ বিলিয়ন থেকে ৭ বিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে।
পাশাপাশি, মূলধারার অনেক সংবাদমাধ্যমেও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বাইবেল সংক্রান্ত অনেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও উল্লেখ করা হয় যে, বাইবেল বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বই। প্রতিবেদন গুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
অন্যদিকে, বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন কী ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করেও আল-কোরআনের সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়া শীর্ষক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবং কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকেও এমন কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধান করে কেবল বিশ্বের শীর্ষ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় কোরআনের অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু এই অবস্থান থেকে এটা দাবি করা যায় না যে, আল- কোরআন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই।
তবে, বাংলাদেশের কিছু অনলাইন সংবাদ পোর্টালে আল-কোরআন বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বই এমন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদনগুলোতে এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দেখানো হয়নি। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
অর্থাৎ, কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়া আল-কোরআনের সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়ার বিষয়টি ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ, নির্ভরযোগ্য সূত্রমোতাবেক এই অবস্থানের দাবিদার বাইবেল। সঙ্গত কারণে ভিত্তিহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?