সম্প্রতি বিএনপি দলীয় রাজনীতিবিদ এবং জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার ছবিসহ দৈনিক প্রথম আলোর নামে বানানো একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে এটা রুমিন ফারহানার ৫৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়া সংক্রান্ত ফটোকার্ড। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবির সমর্থনে প্রথম আলো বা অন্য মূলধারার গণমাধ্যম থেকে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, প্রথম আলো এই আদলে কোনো ফটোকার্ড বানায় না বরং আরটিভির ফটোকার্ডের সাথে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, প্রথম আলো এবং আরটিভির তরফ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এই ফটোকার্ডটি তাদের তৈরি করা নয়। মূলত, আরটিভির একটি ফটোকার্ডের লোগোর স্থানে প্রথম আলোর লোগো বসিয়ে দিয়ে বিকৃত করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে “বিকৃত” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটি খেয়াল করে দেখলে শুরুতেই কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যাবে। এই ফটোকার্ডে প্রথম আলোর লোগো দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু সেখানে নির্দিষ্ট কোনো তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। যেকোনো মূলধারার গণমাধ্যম থেকে প্রকাশিত ফটোকার্ডেই সাধারানত তারিখ উল্লেখ থাকে। তাছাড়া, প্রথম আলোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে আপলোড করা আসল কিছু ফটোকার্ড অনুসন্ধান করে দেখা যায় ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটির আদলে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড বানায় না।
তাছাড়া, প্রথম আলো তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর আপলোড করা একটি পোষ্টে নিশ্চিত করে যে, ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটি প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত হয়নি এবং তারা এমন কোনো ফটোকার্ড তৈরিও করেনি।
ভাইরাল ফটোকার্ডের দাবি অনুযায়ী, বিএনপি দলীয় রাজনীতিবিদ এবং জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার ৫৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হলেও এই দাবির সমর্থনে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আবার, ভাইরাল ফটোকার্ডটি অন্য কোনো মূলধারার গণমাধ্যম থেকে প্রকাশিত হয়েছিল কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে আরটিভির ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত কিছু ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। সেগুলোর সাথে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাদৃশ্য থাকলেও সেখানে ‘রুমিন ফারহানার ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল’ শীর্ষক শিরোনাম ব্যবহার করে কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। তবে, সেখানে ‘বুবলীর ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
ফটোকার্ড দুইটি তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে যে, আরটিভির মূল ফটোকার্ডের টেক্সটের ধরণের সাথে ভাইরাল ফটোকার্ডের টেক্সটের ধরণের কোনো মিল নেই। আরটিভির লোগোর স্থানে প্রথম আলোর লোগো এবং তারিখের স্থানে ভিন্ন টেক্সট। আবার, আরটিভির মূল ফটোকার্ডে যাবতীয় টেক্সট একই ফন্টে লেখা হয় কিন্তু ভাইরাল ফটোকার্ডে ‘বিস্তারিত কমেন্টে’ অংশটুকুর সাথে অন্য টেক্সটগুলোর ফন্টের মিল পাওয়া যায়নি।
অতএব, এতটুকু নিশ্চিত যে, ভাইরাল ফটোকার্ডটি আরটিভি থেকেও প্রকাশিত হয়নি। অর্থাৎ, আরটিভির ফটোকার্ড হুবহু নকল করে রুমিন ফারহানা এবং তারেক জিয়ার ছবি কোলাজ করে ভিত্তিহীন একটি দাবি জুড়ে দিয়ে এটি বানানো হয়েছে।
পরবর্তিত, আরটিভির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে নিশ্চিত করা হয় যে, “আরটিভির নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”
যেহেতু ভাইরাল ফটোকার্ডটি এডিটেড এবং রুমিন ফারহানার ভিডিও ভাইরাল হওয়া সংক্রান্ত দাবিটিও ভিত্তিহীন সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এই ফটোকার্ডকে বিকৃত সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।