সম্প্রতি “অপরাধী গান ভাইরাল হয়, এগুলো ভাইরাল হয় নাা” শিরোনামে একটি বাচ্চার নামাজেরর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওটি বিকৃত করা হয়েছে। পাশ্চাত্যের কয়েকটি বিখ্যাত রিয়েলিটি শো থেকে বিভিন্ন দৃশ্য ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় জোড়া দিয়ে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওতে একটি বাচ্চাকে একটি রিয়েলিটি শো তে নামাজ পড়তে দেখা যাচ্ছে। এর ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে অপরাধী গান ভাইরাল হয় কিন্তু এগুলো ভাইরাল হয় না”।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ফেসবুকে ভাইরাল এই ভিডিওটির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। “Arafat Matar” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে ০৭ মার্চ, ২০২২ এ ভিডিওটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে দেওয়া লোগো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মার্চ মাসের ওই ভিডিওটিই বর্তমানে ভাইরাল হচ্ছে।
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওমূল ভিডিও
পরবর্তীতে এই ইউটিউব ভিডিওটি পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, সেখানে কয়েকটি অসংগতি রয়েছে। যেমনঃ
১.
ভিডিওর প্রথম অংশে উপরোক্ত বিচারককে একটি কালো পোশাকে দেখা গেলেও পরের দৃশ্যে আবার তাঁকে সাদা একটি টি-শার্টে দেখা যায়। এ থেকে বুঝা যায় যে, দৃশ্য দুইটি ভিন্ন সময়ের এবং হতে পারে ভিন্ন জায়গা থেকে নেওয়া।
২.
ভিডিওর এক অংশে উপরোক্ত বিচারককে দেখা গেলেও, একত্রে সব বিচারককে যখন দেখানো হয় তখন তাকে আর দেখতে পাওয়া যায়নি। অর্থ্যাৎ, এই অংশ দুইটিও আলাদা জায়গা থেকে নেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে ব্যবহৃত এই ভিডিও ক্লিপগুলো কোন জায়গা থেকে নেওয়া হয়েছে তা অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, “America’s Got Talent” এবং “The X-Factor” নামে দুইটি রিয়েলিটি শো এর বিভিন্ন সময়ের আলাদা কয়েকটি ভিডিও এক করে ভাইরাল এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
যেমনঃ
১.
ভাইরাল ভিডিওর একাংশরিয়েলিটি শো থেকে নেয়া মূল ভিডিও
ভিডিওর এই অংশটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিচারকের কান্নার এই দৃশ্যটি নেওয়া হয়েছে “The X-Factor” নামের একটি রিয়েলিটি শো থেকে। “Dimash Kudaibergen” নামের একজন শিল্পীর পার্ফরমেন্সের একটি অংশ। মূল ভিডিওটি কমপক্ষে ২০১৯ সালের।
২.
মূল ভিডিওভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহৃত অংশ
ভিডিওতে ব্যবহৃত এই অংশটি দিয়ে অনুসন্ধান করা হলে জানা যায়, “America’s Got Talent” নামের রিয়েলিটি শো এর একটি এপিসোড থেকে এই অংশটি নেয়া হয়েছে। মূলত “Celine Tam” নামে এক ক্ষুদে শিল্পীর একটি পার্ফরমেন্সের ভিডিও এটি এবং এটি কমপক্ষে ২০১৭ সালের।
এসব অসংগতি পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যাচ্ছে, বর্তমানে ভাইরাল ভিডিওটি পুরানো কয়েকটি ভিডিও একত্র করে তৈরি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটি রিয়েলিটি শো এর ভিডিও ক্লিপ একত্র করে এর সাথে একটি বাচ্চার নামাজের ভিডিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে, নামাজের এই ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু, বাকি ভিডিও ক্লিপগুলো খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এবং দেখা যাচ্ছে এর সাথে বাচ্চাটির নামাজের কোনো সম্পর্ক নেই। অতএব, বিষয়টি পরিষ্কার যে ভাইরাল ভিডিওটি বিকৃত। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় মূল ভিডিওটিকে “বিকৃত” চিহ্নিত করা হচ্ছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?