লাশবাহী এই অ্যাম্বুলেন্সে সাঈদীর মরদেহ ছিল না

93
লাশবাহী এই অ্যাম্বুলেন্সে সাঈদীর মরদেহ ছিল না
লাশবাহী এই অ্যাম্বুলেন্সে সাঈদীর মরদেহ ছিল না

Published on: [post_published]

যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত সদ্যপ্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র মৃত্যু পরবর্তী সময়ে একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ১৮ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে লাশ বহন করার কাজে নিয়োজিত একটি অ্যাম্বুলেন্সকে ধাক্কা খেয়ে এক জায়গায় থেমে যেতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, এই গাড়িটি দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী’র লাশ বহন করছিল। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবির সত্যতা মেলেনি, বরং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ ভিন্ন ভিন্ন দুটি লাশবাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

১৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে গাড়ির লাইসেন্স প্লেট নম্বর দৃশ্যমান হয়নি। তীব্র গতিতে ছুটে এসে গাড়িটি একটি পিলারে ,বা কোনো অবকাঠামোয় ধাক্কা দিয়ে থেমে যায়। এসময়ে গাড়ির একপাশের দেয়ালে সিনা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস , লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি এই বাক্যদুটো, এবং মোবাইল নাম্বার দৃশ্যমান হয়।

ভিডিওটির পেছনের দৃশ্যপট শাহবাগ  এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার মেট্রোরেলের পিলারের নিচের দৃশ্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

জনাব সাইদী’র মৃত্যুর পরের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে বিবিসি বাংলা’র এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোর তিনটার সময় মি. সাইদীর মরদেহ বহনকারী লাশবাহী গাড়ি হাসপাতাল থেকে বের হতে চেষ্টা করলে উপস্থিত থাকা সমর্থকরা বাধা দেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে, পুলিশের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জামায়াত সমর্থকরা মি. সাইদীকে বহন করা গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয় ও চাকা নষ্ট করে দেয়।

পরে ভোর ৫টার দিকে পুলিশ হাসপাতাল প্রাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত লাশবাহী গাড়িটি রেখেই ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। তখনও হাসপাতাল প্রাঙ্গনে ও রাস্তার দুইপাশে হাজার হাজার জামায়াত সমর্থক উপস্থিত ছিল।

এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ হাসপাতালের বাইরে থেকে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। হাসপাতালের ভেতরে থাকা জামায়াত সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বাইরে নিয়ে আসে ও আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে মি. সাইদীর মরদেহ স্থানান্তর করে।

সে সময় ছত্রভঙ্গ জামায়াত সমর্থকরা হাসপাতালের বাইরে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং রাস্তায় থাকা কয়েকটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়।

ভোর ৬টার দিকে পুলিশি পাহারায় পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে অ্যাম্বুলন্সেটি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, প্রথমে রাত ৩ টায় জনাব সাইদী’র লাশ রশিদা লতিফ ফাউন্ডেশনের একটি গাড়িতে পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে এই গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে মরদেহ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করা হয়। পুরো সময়ে কখনো সিনা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কোনো গাড়ি মরদেহ পরিবহনে ব্যবহৃত হয়নি।


এ সম্পর্কিত ভিডিও প্রতিবেদন পাবেন এখানে- বাংলাভিশনএটিএন বাংলা ইত্যাদি।

পরবর্তী সময়কার একাধিক ভিডিওতে পূর্বোক্ত সিনা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িকে দেখা যায়। ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এর এই ইউটিউব ভিডিওতে উক্ত গাড়িকে বি এস এম এম ইউ এর ২ নাম্বার গেটের সামনে দেখা যায় । গাড়ির অধিকাংশ লাইট এসময় জ্বলছিল । অবস্থাদৃষ্টে গাড়িটাকে দুর্ঘটনাকবলিত বলে মনে হচ্ছে।

একই গাড়িকে দেখা গিয়েছে এটিএন বাংলার এই ভিডিওতেও

এ সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে নিউজবাংলা টুয়েন্টিফোর ডটকম এবং ঢাকা টাইমস এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সোমবার রাতে সাঈদীর মৃত্যুর পর জানাজা ঢাকায় পড়ানোর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা। শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভেতরে ও সামনের সড়কে রাতভর তারা বিক্ষোভ করেন। সড়কে একটি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িও ভাঙচুর করেছেন তারা। পুড়িয়ে দেয় হয়েছে দুটি মোটরসাইকেলও।

তবে এই গাড়ির ভেতরে কারো মরদেহ ছিল, এমন কোনো তথ্য প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। ১৮ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটা দেখে ধারণা করা যায়, অন্যান্য গাড়ি-মোটরসাইকেল ভাঙচুরের সময় এই গাড়িটাকে ভাংচুরের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে উক্ত গাড়ির চালক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন।

সিদ্ধান্ত

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বহনকারী দুটি গাড়ির কোনোটাই ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো গাড়িটি নয়। সুতরাং, সাঈদীকে বহনকারী গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে- এই দাবিটা মিথ্যা। ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত পোস্ট গুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.