সম্প্রতি ‘News18 Bangla’ নামক একটি সংবাদমাধ্যম নাসা’র একটি রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে যে, ২০৩৮ সালের ১২ জুলাই পৃথিবীর শেষ দিন! কারণ সেদিন একটি গ্রহাণু (Asteroid) পৃথিবীতে আঘাত হানবে এবং এই আঘাত হানার সম্ভাবনা ৭২%। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ‘News18 Bangla’ নাসা’র যে রিপোর্ট থেকে তথ্য উদ্ধৃত করে ফটোকার্ডটি প্রকাশ করেছিল সেটি আসলে ২০৩৮ সালের ১২ জুলাই একটি কাল্পনিক (Hypothetical) গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনার দৃশ্যকল্প। মূলত পৃথিবীতে এই কাল্পনিক গ্রহাণুর আঘাতের সম্ভাবনায় সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রস্তুতি কেমন হবে তা দেখার জন্য গত ০২ এবং ০৩ এপ্রিল ২০২৪ এ যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত জন হপকিন্স অ্যাপ্লাইড ফিজিকস ল্যাবরেটরিতে একটি টেবিলটপ এক্সারসাইজ এর আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, এরকম টেবিলটপ এক্সারসাইজ এবারই নতুন নয় এবং এর আগেও চারবার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে, এবারই প্রথম তারা গ্রহাণু আঘাতের একটি কাল্পনিক দৃশ্যকল্প সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করেছে। তাছাড়া, নাসা আরও জানিয়েছে, এমন কোন উল্লেখযোগ্য গ্রহাণু পাওয়া যায়নি যা অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্ট এবং ‘News18 Bangla’ কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
অনুসন্ধান:
‘News18 Bangla’ পৃথিবীতে গ্রহাণু আঘাত হানার যে ফটোকার্ডটি প্রকাশ করেছিল তার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমরা দেখেছি তারা মূল খবরের ভেতর লিখেছে, নাসা একটি কাল্পনিক টেবিলটপ এক্সারসাইজের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এবং সেখানে বলা হয়েছে ২০৩৮ সালের ১২ জুলাই একটি বিপদজনক গ্রহাণুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের সম্ভাবনা ৭২%! যদিও ‘News18 Bangla’ তাদের মূল খবরের ভেতর এটিকে একটি কাল্পনিক দৃশ্যকল্প হিসেবে ধরে নিয়ে আয়োজিত মহড়া হিসেবে উল্লেখ করেছে, তবু তাদের ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত ফটোকার্ডটি দেখে অনেকেই গ্রহাণু আঘাত হানার সম্ভাবনাটিকে সত্য হিসেবে ধরে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং ফটোকার্ডটি শেয়ার করেছেন।
কাল্পনিক গ্রহাণুর দৃশ্যকল্প নিয়ে মহড়া আয়োজনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমরা নাসা’র মূল রিপোর্টটি পড়ে দেখেছি। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, একটি সম্ভাব্য বিপদজনক গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাত হানার বিপরীতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রস্তুতি মূল্যায়ণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট অফিস এবং স্পেস অ্যাফেয়ার্স এর সহযোগিতায় নাসা’র প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কোঅরডিনেশন অফিস এবং ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি পঞ্চম দ্বিবার্ষিক প্ল্যানেটারি ডিফেন্স ইন্টারএজেন্সি একটি টেবিলটপ এক্সারসাইজ এর আয়োজন করে। উক্ত টেবিলটপ এক্সারসাইজে একটি কাল্পনিক গ্রহাণুর দৃশ্যকল্প ব্যবহার করা হয়, যার সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের সম্ভাবনা ৭২% এবং এটি ২০৩৮ সালের ১২ জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে আঘাত হানতে পারে। সেখানে কাল্পনিক গ্রহাণুর ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের তথ্য বর্ণনা করা হয়, যা গ্রহাণুটির আকার, গঠন, এবং গতিপথ নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। কাল্পনিক দৃশ্যকল্পটিকে জটিল করে তুলতে এমনটি করা হয়েছিল। তাছাড়া, এই কাল্পনিক গ্রহাণুর দৃশ্যকল্পটিকে আরও জটিল করতে গ্রহাণুটি সনাক্ত হওয়ার পরপরই সাত মাস সূর্যের পেছনে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও টেবিলটপ এক্সারসাইজে যুক্ত করা হয়েছিল। ফলে, এরকম পরিস্থিতিতে গ্রহাণুটির সঠিক অবস্থান না জেনে বিশেষজ্ঞদের কি ঘটতে যাচ্ছে সেটির একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়েছিল। এই ব্যাপারে নাসা’র প্ল্যানেটারি ডিফেন্স অফিসার এমিরেটাস লিন্ডলে জনসন (Lindley Johnson) বলেন, “মহড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে এমন অনিশ্চয়তা অংশগ্রহণকারীদের একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি বিবেচনা করার অনুমোদন দেয়।”
উক্ত টেবিলটপ এক্সারসাইজে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর বাইরের ২৫ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ জন বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন। এক্সারসাইজটি গত ০২ এবং ০৩ এপ্রিল ২০২৪ এ যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত জন হপকিন্স অ্যাপ্লাইড ফিজিকস ল্যাবরেটরিতে অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, কাল্পনিকভাবে উদ্ভাবিত কোন গ্রহাণুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের সম্ভাবনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রস্তুতি মূল্যায়ন করতে এরকম টেবিলটপ এক্সারসাইজের আয়োজন এবারই প্রথম নয়। বরং, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬, এবং ২০২২ সালেওএরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে, এবারই প্রথম তারা কাল্পনিক গ্রহাণুর দৃশ্যকল্পটি সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করেছে।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ২০৩৮ সালের ১২ জুলাই পৃথিবীতে গ্রহাণু আঘাত হানার সম্ভাবনার খবরটি আসলে একটি মহড়ার কাল্পনিক দৃশ্যকল্প ছিল। নাসা’র একটি রিপোর্টে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গ্রহাণুর আঘাতের খবরটিকে আসল ভেবে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এরকম কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যম এবং ‘News18 Bangla’ এর ফটোকার্ডের দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।