আল আকসা মসজিদে ফেরেশতা দেখা গেছে?

17
আল আকসা মসজিদে ফেরেশতা দেখা গেছে? আল আকসা মসজিদে ফেরেশতা দেখা গেছে?

Published on: [post_published]

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি পুলিশ দ্বারা এক মুসলিম নারীকে নির্যাতনের সময় ফেরেশতা দেখতে পাওয়ার দাবি করা হচ্ছে।

কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে ভাইরাল ফেসবুক পোস্টে ফেরেশতা দাবি করে যে ক্লিপ দেখানো হয়েছে তা বিকৃত তাছাড়া ফেসবুকের বাইরে মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

গুজবের উৎস : 

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান :

১০ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তুলে ধরা হলো।

ভাইরাল ভিডিওটির প্রথম ১২ সেকেন্ডে ভাষ্যকার বলেন , “ইসরাইলের মসজিদ আল আকসায় হঠাৎ করে ফেরেশতা নেমে আসলো। নিজেই দেখুন সেই সময় ইহুদিরা কি বড় ওয়ার্নিং পেল। এই ভিডিওটি বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে অনেক বেশি ভাইরাল।”

ভিডিওটির ২ মিনিট ৬ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড সময়সীমার ভিতর বলা হয়েছে

“আজকের এই ভিডিওতে আমি বিস্তারিত জানাবো ইহুদিরা কেন এরকম করছে এবং কেন যেকোন মূল্যে মসজিদুল আকসা দখল করতে চাইছে। কিন্তু তার আগে আপনাদের সেই

ভিডিওটি দেখাই এবং সেই ভিডিওটির ব্যাপারে জানাই, যেই ভিডিওটি বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়ায় খুব দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে। এবং যে ভিডিও মানুষজনকে অবাক করে দিয়েছে, সেই সময় যখন ইসরাইলী সন্ত্রাসী পুলিশ একজন মহিলার উপরে অত্যাচার করছিল, তখন এমন একটি গায়েবি সাহায্য আসে যেটা দেখে ইহুদিদের সাথে সাথে সারা বিশ্বের অমুসলিম অবাক হয়ে যায়।”

৩ মিনিট ২৩ সেকেন্ড থেকে ৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময়সীমার ভিতর বলা হয়েছে

সবার আগে আমরা কথা বলি সেই ভিডিও নিয়ে যেখানে একজন মহিলার উপর ইজরাইলি পুলিশ অত্যাচার করছিল তখন কি এমন ঘটনা ঘটলো যেটা দেখে সেখানে উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে গেল। বন্ধুরা সেই সময় একজন মুসলিম মহিলা সম্পূর্ণ আহত অবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য চাইছিল। বন্ধুরা ঘটনাটির শুরু তখন থেকে যখন মসজিদ আল আকসায় মুসলমানরা ইবাদাত করছিলো আর ইহুদি পুলিশ সেই সময় তাদের উপর হামলা করে বসে, সেই সময় ইহুদি পুলিশ যে শুধুমাত্র পুরুষদের উপর অত্যাচার করছিলো তা কিন্তু নয় সেখানে উপস্থিত সকল মহিলাদের উপরে অনেক ধরণের অত্যাচার করেছিলো ইহুদি সন্ত্রাসি পুলিশগুলো। আর সেই সময়ে ইহুদি সন্ত্রাসী পুলিশগুলো একজন সুন্দরী মুসলিম বোনকে মসজিদ আল আকসার এক সাইডে নিয়ে যায় এবং উনার সাথে খারাপ কাজ করার চেষ্টা করে। কিন্তু শুধু উনারা সেই মহিলার সাথে খারাপ কাজ করার চেষ্টা করছিলো তা কিন্তু নয় বরং ইহুদি পুলিশদের মধ্যে একজন সেই মহিলাকে ভিডিও করছিলো। সেই ইহুদি পুলিশগুলো সেই মহিলাকে খুব খারাপ ভাবে থাপ্পড় মারছিলো এবং তার মুখের হিজাব খুলে নিচ্ছিলো। এই অবস্থায় সেই মহিলা মহান আল্লাহ তা’য়ালা রাব্বুল আলামিনের কাছে চিৎকার করে করে সাহায্য চাইছিলো। বন্ধুরা এরপরে বিস্তারিত জানার আগে ভিডিওটিতে এখনো লাইক দেননি এখনি একটি লাইক দিয়ে দিন। বন্ধুরা সেই দুইজন ইহুদি সন্ত্রাসী পুলিশ মহিলাকে কাপড় ছাড়া করতে চাইছিলো, ঠিক সেই সময় এমন একটি ঘটনা ঘটে যে ঘটনার জন্য তারা একবারও আন্দাজ করতে পারেনি। আর সেই মুহুর্তে যে ঘটনা ঘটেছিলো সেই ঘটনাটি সেইখানে উপস্থিত অন্য একজন ইহুদি পুলিশ তার মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে সেই মহিলা মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে সাহায্য চাইছিলো, চিৎকার করে করে কান্না করছিলো, ঠিক সেই সময় হঠাৎ করে একজন সাদা দাড়িওয়ালা মানুষ সেখানে চলে আসেন আর তিনি ইজরায়েলি পুলিশগুলোর দুই হাত ধরে বলতে থাকেন, “আল্লাহ তায়ালার এই বান্দিকে ছেড়ে দিন।” সেই দুইজন সন্ত্রাসী ইহুদি পুলিশ সেই বৃদ্ধকে অনেক বকাঝকা করে এবং শেষ পর্যন্ত একজন ইহুদি পুলিশ সেই মানুষটিকে তার হাতের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সেই বৃদ্ধকে মেরে ফেলে আর এই ঘটনা দেখে সেখানে উপস্থিত সকলেই অনেক ভয় পেয়ে যায়। সেই বৃদ্ধ মারা যাবার আগে বলছিলো “তোমাদের লজ্জা করেনা বার বার তোমরা মুসলমানদের উপর এভাবে অত্যাচার করো এবং এভাবে এই মসজিদ দখলের চেষ্টা করো। দেখবে একদিন তোমাদের এমন পরিস্থিতি হবে যেটা তোমরা কোনদিন কল্পনা করতে পারো নি। আর সেদিন তোমরা কোথাও পালিয়ে যেতে পারবে না। কেননা যারাই মুসলমানদের উপর অত্যাচার করেছে তাদের এমন পরিস্থিতি হয়েছে যা তারা কখনো ভাবতেও পারেনি।” কিন্তু বন্ধুরা হঠাৎ করেই একটি উজ্জল আলো সেখানে আসলো এবং সেই আলো সবার চোখ ঝলসিয়ে দিচ্ছিলো। সেই মানুষগুলো কিছুক্ষণ পর্যন্ত কিছুই দেখতে পাচ্ছিলোনা। কিন্তু সেই মহিলা বলেছে আমি সেখানে এমন একটি জিনিস দেখতে পাই যেটা দেখতে পাখির মতো এবং আমি সেখানে এমন একটি শব্দ শুনতে পায় যা পাখির ডানার মতো শব্দ ছিলো। কিন্তু আমি সেটি অতিরিক্ত উজ্জল আলোকিত হওয়ায় স্পষ্ট দেখতে পায়নি তবে আমার এতোটুকু মনে হচ্ছিলো তার দুটো ডানা ছিলো এবং সেটি দেখতে পাখির মতো কিন্তু পাখি নয় কেননা তার মানুষের মতো শরীর ছিলো। বন্ধুরা এই ঘটনাটা সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত প্রতিটি ইহুদি পুলিশ দেখে্ছে। কিন্তু এই ঘটনাটা কি ছিলো সেটা কেউ বুঝতে পারিনি। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই সেই মহিলা দেখতে পারে যে বৃদ্ধ মানুষটিকে কিছুক্ষণ আগেই ইহুদি পুলিশগুলো আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছিলো সেই বৃদ্ধ মানুষের শরীর সেখানে নেই এবং তিনি বুঝতে পারলেন নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামিন কোন ফেরেশতাকে বৃদ্ধ মানুষের রূপ ধরে তাকে সাহায্য করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। কেননা বন্ধুরা সেই বৃদ্ধ মানুষটির লাশ সেখান থেকে হারিয়ে যায় তারপরেই এই উজ্জ্বল আলোটি দেখা গিয়েছিলো। আর সেই উজ্জ্বল আলোকিত আলোটি দেখে এবং সেই অদ্ভুত প্রাণীটিকে দেখে  ইহুদি পুলিশগুলো সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এবং সেই মহিলার সম্মান রক্ষা পায়। বন্ধুরা আপনারা জানলে অবাক হয়ে যাবেন সেই সময় ইহুদি পুলিশগুলো যে মহিলার উপর অত্যাচার করছিলো এবং সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করছিলো তারা বর্তমানে কয়েকসপ্তাহ ধরে হসপিটালে ভর্তি রয়েছে। সেই উজ্জ্বল আলো দেখার পর তাদের শরীরে এমন একটি অবস্থা হয়ে গেছে যে ডক্টর তাদের কোন চিকিৎসা করতে পারছে না। তাদের এতোদিন হয়ে যাবার পরেও তাদের ঠিকঠাক করে জ্ঞান ফিরছে না। প্রিয় বন্ধুরা এটি এমন একটি ঘটনা যে ঘটনা ইহুদিদের নাড়িয়ে দিয়েছে।”

 

ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটির ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে মানুষের মতো দেখতে পাখাওয়ালা কোন অতি প্রাকৃত বস্তু আকাশে উড়ছে।

 

GabeHashTV নামে একটি ইউটিউবে চ্যানেলে ভাইরাল ভিডিওটির ক্লিপের সাথে মিল আছে এমন একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ৮ জানুয়ারি, ২০১৫ সালে ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওটি GabeHashTV চ্যানেলে আপলোড করা হয়। ভিডিওটির শিরোনাম বাংলায় অনুবাদ করলে হয় “ব্রাজিলে উড়ন্ত ক্যামেরায় ধরা দুই দেবদূত (ব্যাখ্যা করা হয়েছে)”। মূল ভিডিওতে ব্যবহার করা টেক্সটের মাধ্যমে জানা যায় ইউটিউবে দেখানো ভিডিওটি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ সালে জেসন কার্লোস নামক একজন ইউটিউবার তার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করে। কিন্তু জেসন কার্লোস নামক ইউটিউব ব্যবহারকা্রি যখন জানতে পারে তার ভিডিওটি স্যোশাল মিডিয়া সত্য ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে তখন তিনি  এনিমেশনটি কিভাবে তৈরি করা হয়েছে তা বিস্তারিত জানিয়ে ৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে একটি ভিডিও পোস্ট করে। ভিডিওটিতে এনিমেশনটি তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখানো হয়।

 

এ্যানিমেশনটি আন্তর্জাতিকভাবে ভাইরাল হলে ১৪ই এপ্রিল, ২০১৫ সালে snopes নামক ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইটে ভিডিওটির ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। GabeHashTV ইউটিউব চ্যানেলের মতো snopes এ একই ধরণের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির ৪ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড থেকে ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড সময় সীমার ভিতর মেঘের মধ্যে মানুষের অবয়বের মতো সাদা কোন বস্তু দেখা যাচ্ছে।

একই ধরণের একটি ভিডিও ক্লিপ Factly এর ১৩মে,২০২২ সালে করা একটি ফ্যাক্টচেকিং রিপোর্টের ভিডিওতে পাওয়া যাচ্ছে। Factly এর রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে ভিডিও ক্লিপটি ‘myuz_gaza1 নামক একটি টিকটক একাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে। তবে myuz_gaza1 আকাশের ভিতর এমন অতিপ্রাকৃত অনেক ভিডিও চিত্র তার টিকটক একাউন্টে আপলোড করেছে। Factly এর বিশ্লেষণ বলছে তার একাউন্টে প্রকাশিত ভিডিওর বেশিরভাগই এডিটেড।

 

আল আকসা মসজিদের আকাশে মানুষের অবয়বের মতো কিছু দেখতে পাওয়া গেলে সেটা মেঘের ভিতর দেখতে পাওয়া প্যারিডোলিয়ার উদাহরণ হতে পারে।

ভাইরাল ভিডিওতে কিন্তু ভিডিওতে ভাষ্যকার দাবি করেছেন, ঘটনাটি সারা বিশ্বে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই উড়ন্ত ‘ফেরেশতা’ দেখার খবর ভিডিওতে দেখানো হয়নি। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানেও এমন কোনো খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

সারমর্ম : 

আল আকসায় ফেরেশতা দেখতে পাওয়া এবং ইসরাইলি পুলিশ দ্বারা মুসলিম নারীর নির্যাতনের ঘটনার কোন তথ্য গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। ভাইরাল ভিডিওর মূল উৎস সনাক্ত করা সম্ভব না হলেও একই ধরনের বেশ কিছু আকাশে উড়ন্ত প্রাণীর ভিডিও অনলাইনে দেখা যাচ্ছে, যে ভিডিওর প্রস্তুতকারকরা জানাচ্ছেন এগুলো বাস্তব কোনো ঘটনা নয়, বরং প্রযুক্তির সহায়তায় বানানো।  তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল ভিডিওটিকে “বিকৃত/বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সনাক্ত করছে।

আরো পড়তে পারেন –

জলপরীর ভিডিওটি কম্পিউটার এনিমেশন প্রযুক্তি দিয়ে বানানো

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.