ভারতবিরোধী এই স্লোগানগুলো চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নয়

29
ভারতবিরোধী এই স্লোগানগুলো চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নয় ভারতবিরোধী এই স্লোগানগুলো চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নয়

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে : ‘ভারত যাদের মামাবাড়ি,বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি’ এমন স্লোগানসহ ভাইরাল মিছিলটি চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে : উক্ত মিছিলটি কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয়, বরং ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তি বাতিলের দাবিতে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল যা গত ২৮শে জুন তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

জনৈক এস কে দে এই ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশনে লিখেছেন, “ভারত যাদের মামার বাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি” কোঠা আন্দোলন একটা অজুহাত মাত্র আসল লক্ষ্য হিন্দু বিরোধীতা আর ভারতের বিরোধিতা। এরা সরকার বদল করে বাংলাদেশ টাকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানাতে চাইছে——

অনুসন্ধান

ভিডিওটি লক্ষ করলে দেখা যায়, ভিডিওর ডান পাশে উপরের দিকে কমলা রঙের বৃত্তাকার একটি মনোগ্রাম রয়েছে ,যার ভিতরে ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ কথাটি পড়া যাচ্ছে। এছাড়া এই মিছিলে মিছিলকারীরা যে ব্যানারটি বহণ করছে, সেখানে ‘গণঅধিকার পরিষদ’ নামক একটি সংগঠনের নামট পড়া যাচ্ছে।

এছাড়া ব্যানারের বাম পাশে দুইজন তরুণের ছবি দেখা যাচ্ছে, যারা গণ অধিকার পরিষদ নামক রাজনৈতিক দলের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এই মিছিলকারীদের মুখে মুখে “ভারত যাদের মামার বাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি … দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা … ভারতের আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ … ভারতীয় পণ্য – বর্জন বর্জন ইত্যাদি স্লোগান শোনা যাচ্ছে।

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে দেখা গেল, গত ২৮শে জুন ২০২৪ তারিখে রাজধানী ঢাকার প্রেসক্লাব এর সামনে গণ অধিকার পরিষদ একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও হয়েছিল। সংগঠনের সভাপতি নুরুল হক নুর এর ফেসবুক একাউন্টে এদিনের সমাবেশ ও মিছিলের কিছু ছবি দেখতে পাবেন এখানে। এছাড়া ,নুরুল হক এর একাউন্ট থেকে এদিনের সমাবেশের এবং মিছিলের ৬ মিনিট ১১ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল ।

সাধারন সম্পাদক রাশেদ খানের একাউন্ট থেকেও এদিনের মিছিলের ৪ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। এসব ভিডিওতে পূর্বোক্ত স্লোগানগুলো ছাড়াও সংগঠনের নাম, গণ অধিকার পরিষদের নামে স্লোগান শোনা গিয়েছে।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ৩ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডেরএই মিছিলের মূল ক্লিপটি খুজে পাওয়া গেল বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, শেরপুর জেলা নামক ফেসবুক পেজে ,যা গত ২৮শে জুন তারিখে আপলোড করা হয়েছিল। এই ভিডিওর ক্যাপশনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা ছিল ভারতের সাথে দেশ বিরোধী চুক্তির প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদের আজকের বিক্ষোভ মিছিল  এর কথা। এই ভিডিওর ডান পাশে উপরের দিকে কমলা রঙের বৃত্তাকার লোগোর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি ইতিমধ্যে ১২০০ বার শেয়ার করা হয়েছে।


বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, শেরপুর জেলা নামক পেজ থেকে ২৮শে জুন তারিখের সমাবেশ ও মিছিলের আরো কিছু ছবি পোস্ট করা হয়েছিল গত ২রা জুলাই তারিখে। এখানে আপলোড করা মিছিলের একটি স্পষ্ট ছবিতে দেখা যাচ্ছে,ব্যানারে লেখা রয়েছে, ভারতের সাথে দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল এবং আজিজ ও বেনজিরসহ দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, তারিখ ২৮/৬/২০২৪ ইং, শুক্রবার বিকাল ৩.৩০টা, স্থান-জাতীয় প্রেসক্লাব, আয়োজনে -গণ অধিকার পরিষদ,ঢাকা মহানগর দক্ষিণ

সুতরাং,এটা স্পষ্ট যে এই মিছিলের এজেন্ডার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল না,বরং ভিন্ন দু’টি দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল । দাবিদুটো হল:

১. ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল
এবং ২.দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত এই গুজবটি নিয়ে ইতিমধ্যে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন ভারতভিত্তিক The quint . তারা এই দাবিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া বিবিসি বাংলা ও তাদের একটি প্রতিবেদনে এই গুজবটির ব্যবচ্ছেদ করেছে।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ ভুল দাবিযুক্ত এই সকল পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

No Factcheck schema data available.