সম্প্রতি “হিন্দুদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এবার মুখ খুললেন সেনাবাহিনী” এবং “কুমিল্লার ঘটনায় এবার মুখ খুললেন সেনাবাহিনী” দুটি শিরোনামে একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ধরণের কোন বিবৃতি দেয়নি। মূলত কুমিল্লা ঘটনা নিয়ে ‘জাফর সরকার’ নামের একজন সাবেক সেনাসদস্যের ব্যক্তিগত অভিমতকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্তব্য বলে প্রচার করা হয়েছে।
“হিন্দুদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এবার মুখ খুললেন সেনাবাহিনী” এবং “কুমিল্লার ঘটনায় এবার মুখ খুললেন সেনাবাহিনী” এমন দাবিযুক্ত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ ‘মুখ খুললেন সেনাবাহিনী’ দাবিযুক্ত একাধিক পোস্ট সনাক্ত করে যার মধ্যে একটিতে দুটি আলাদা আলাদা ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়েছে। “হিন্দুদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এবার মুখ খুললেন সেনাবাহিনী” ক্যাপশনে এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। এমবেড করা থাকবে।
উক্ত ভিডিওটির শুরুতে একজন ব্যক্তিকে দাবি করতে শোনা যায় “আমি আজ আপনাদের কাছে জোর মিনতিপূর্বক আবেদন জানাচ্ছি আপনারা হিন্দুদের বাঁচান, সনাতন ধর্মীদের বাঁচান”। “বাংলাদেশের হিন্দুরা ঘোর বিপদে, অনুগ্রহ করে তাদের পাশে দাঁড়ান!” শিরোনামে পুরো ভিডিওটি দেখুন এই লিংকে। এরপরের ক্লিপে আমরা আরেকজন ব্যক্তিকে কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে বক্তব্য রাখতে দেখি। ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ক্লিপটি ‘Jafor ex army’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সনাক্ত করে যেখানে তিনি নিজেকে একজন সাবেক সেনাসদস্য বলে দাবি করেন। ১৯ অক্টোবর ২০২১ তারিখে উক্ত অ্যাকাউন্ট থেকে “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কারা লাগাচ্ছে..মুসলিম/ হিন্দু/খ্রিস্টান /বৌদ্ধ সকল ধর্মীয় অনুসারীদের উদ্দেশ্যেই এই লাইভ” পোস্টটি করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই সাবেক সেনাসদস্য দাবি করা ব্যক্তির বক্তব্যকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবৃতি বলে উপস্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ফ্যাক্টওয়াচ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এমন কোন বিবৃতির সন্ধান পায় নি। কুমিল্লা ইস্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে কোন প্রতিবেদন শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতেও আসেনি। সুতরাং, জনৈক জাফর সরকারের ব্যক্তিগত অভিমতের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনপ্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই। ‘Jafor ex army’ পেজটি থেকে ৮ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি দেখুন এখানে।
জাফর সরকারের বক্তব্যে কী ছিল?
পুরো ভিডিওটিতে তিনি মূলত চলমান কুমিল্লা কান্ডে ‘ভারতের কাছে সহায়তা চাওয়ার’ পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বক্তব্য রাখেন যার একটি সারাংশ আমরা এখানে তুলে ধরছিঃ
ভিডিওতে তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ সরকার, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। এটা আপনার দেশ, আমার দেশ, আমাদের সকলের”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভিডিওটিতে তাকে কোন প্রকার ঘৃণামূলক বক্তব্য দিতে শোনা যায়নি। অর্থাৎ, ‘হিন্দুদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে’ এমন দাবিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন।
অন্যদিকে, ‘Bangla news tv’ পেজ থেকে একি ভিডিও পোস্ট করে থাম্বনেইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদের গণমাধ্যমের সাথে কথোপকথনের একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহৃত ছবিটি প্রায় ২ বছর পুরনো জাগোনিউজ টুয়েন্টিফোর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে। ফলে ভিডিওতে পুরনো এই ছবিটির ব্যবহার অপ্রাসঙ্গিক।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন ২০২১ সালে জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান পদ থেকে অবসরে যান।
সুতরাং, কুমিল্লা ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সেনাবাহিনী বিবৃতি দিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে এমন দাবি করা পোস্টগুলো বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য। দেশীয় গণমাধ্যমসূত্রেও এর এরকম কোনো কিছুর হদিস পাওয়া যায়নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তে দাবিটি ‘মিথ্যা’।