অসহযোগ আন্দোলনে মাঠে নামলো ৩৬ দল কর্মসূচি সমর্থন করলো সেনাপ্রধান এমন শিরোনামযুক্ত একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এই অসহযোগ আন্দোলন সমর্থন করে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেননি। এছাড়া এই ভিডিওতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের যে ফুটেজ দেখানো হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রসঙ্গের বক্তব্য ছিল এবং সেখানে অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে কোনো তথ্য ছিলনা। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের অংশবিশেষ সংগ্রহ করে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জুড়ে দিয়ে এখানে ভিন্ন দাবি করা হচ্ছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের উপস্থাপকদের সংবাদ উপস্থাপনার টুকরো দৃশ্য , এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা ও বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে এই ভিডিওটা তৈরি করা হয়েছে । News Report নামক পেজ থেকে আপলোড করা ভিডিওর শুরুতে ভাষ্যকারকে বলতে শোনা যায়- সরকার পতনে আজ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চও। শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। —–আগেই জানা গিয়েছিল, এখন থেকে জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির সাথে যুগপৎ কর্মসূচী পালন করবে। তারই ধারাবাহিকতায়—–
এরপর বাক্য অসম্পূর্ণ রেখেই সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানের ফুটেজ শুরু হয়। এখানে দেখা যায় সেনাপ্রধান এ কে এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করবে। আমাদের আর্মি ফার্মা কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করছি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের অংশবিশেষ দেখানো হয়। যেখানে তিনি বলছেন, ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায় !
এরপর ভাষ্যকার আবার বলা শুরু করেন, দর্শক, নির্বাচন ঠেকাতে এবার বিএনপি’র পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ , হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী। এইমাত্র তারা এই ঘোষণাটি দিয়েছে। তাদের এই কর্মসূচীর সমর্থন দিয়েছেন সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন-ক্ষেপে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । সকলে মিলে নাকি এই ভোট ঠেকাতে চায় । তাদের সাহস দেখে আমি অবাক হই – এরকম বক্তব্য দিয়েছেন।
সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের উৎস খুজতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, বুধবার ২০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আর্মি ফার্মাসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক ফলক উন্মোচন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ২০শে ডিসেম্বর সকালে গাজীপুরের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিজ এলাকায় এসব স্থাপনার উদ্বোধন করেন তিনি। এসময় তাঁর আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে সেনাপ্রধান বলেন, আমাদের যে একটা ভিশন আছে, বি এম টি এফ এর , তথা আর্মি ফার্মারও, যে আমরা সাধারণ মানুষের, যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দুখী মানুষের সহায়ক হয়ে থাকবে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করবে, আমাদের আর্মি ফার্মা কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করছি।
সময় টিভিতে প্রচারিত মূল বক্তব্যের সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের মিল দেখা যাচ্ছে। তবে মূল ভিডিওকে মিররিং করা হয়েছে, অর্থাৎ বামের বিষয়বস্তু ডানে দেখা যাচ্ছে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের এক পর্যায়ে পেছন থেকে এক সৈনিককে হাঁটতে দেখা যায়, যা উভয় ভিডিওতেই রয়েছে।
এছাড়া, উভয় বক্তব্যও একই। কেবলমাত্র মূল বক্তব্য থেকে একটি বাক্য ( তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করবে। আমাদের আর্মি ফার্মা কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করছি।) গ্রহণ করে News Report এর ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের উৎস খুজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ২১শে ডিসেম্বর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় গতকাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন – মানুষের জীবন কেড়ে নেবে , মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায় ! ওই লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয় , আর কতগুলো লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করেছে দুইটা আগুন দিলেই সরকার পতন হবে, অত সহজ না।
স্পষ্টত , তাঁর এই বক্তব্যে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে সেনাপ্রধানের কোনো বক্তব্যকে তিনি সম্বোধন করে উত্তর দিচ্ছেন-এমন আলামত পাওয়া যাচ্ছেনা। প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যাবে এখানে ।
ফেসবুকের বাইরে, মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে সেনাপ্রধান বিরোধী দলের অসহযোগ আন্দোলন সমর্থন করছেন-এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওতেই আর্মি ফার্মার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর অরাজনৈতিক বক্তব্যের অংশবিশেষ কাটছাঁট করে একে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য বলে প্রচার করা হচ্ছে ।
সার্বিক বিবেচনায় এই পোস্টগুলোকে ফ্যাক্তওয়াচ ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।