ধন্যবাদ স্যার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সম্মানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বাঙালি মানুষের হৃদয় কেড়ে নিয়েছে- এমন ক্যাপশন যুক্ত করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এর ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৫ই আগস্ট তারিখে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ফলে অনেকে ধারণা করতে পারেন যে সেনাপ্রধান বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৫ই আগস্ট তারিখে এই সম্মান জানিয়েছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাটি ২৪শে জুন তারিখের, যখন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরে সেনাপ্রধান ধানমন্ডি ৩২ এ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। পুরনো সেই ভিডিওটি বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে প্রচারের ফলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
গুজবের উৎস
৫ই আগস্ট তারিখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পরে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়-এর ভেরিফাইড পেজ থেকে আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছিল। এই পেজ থেকে সেনাপ্রধানের উক্ত ভিডিও আপলোড করা হয়নি।
Bangladesh Awami League এর ইংরেজি নামযুক্ত ভেরিফাইড পেজ থেকেও এই ভিডিও আপলোড করা হয়নি। বরং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিবার বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা নিশ্চিন্তপুর আওয়ামী যুবলীগ ইত্যাদি আনভেরিফাইড কিছু পেজ, এবং কিছু ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে এই ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে।
অনুসন্ধান
২ মিনিট ২২ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে রিপোর্টারের কন্ঠে কোনো তথ্য শোনা যায়নি। বরং সশস্ত্র বাহিনীর গান স্যালুট এর বিভিন্ন নির্দেশনা এবং বিউগল এর সুর শোনা গিয়েছে। পুরো প্রতিবেদনে একটি মাত্র এ্যাঙ্গেল থেকে ক্যামেরায় দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। ফলে,সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান কে সনাক্ত করা সম্ভব হলেও, কোন জায়গায় বা কার উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করছেন, এই ভিডিও থেকে সেটি নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছে না।
এই ভিডিওর উপরে বাম কোণে টিভি চ্যানেল ডিবিসিনিউজ এর লোগো দেখা যাচ্ছে। এই সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেল, গত ২৪শে জুন তারিখে ডিবিসিনিউজ এর ইউটিব চ্যানেলে এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল। সেখানে ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ছিল ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ড, এবং ভিডিওটির ক্যাপশন ছিল , বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে নতুন সেনাপ্রধানের শ্রদ্ধা।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জানা গেল, গত ২৩শে জুন সেনাপ্রধান হিসেবে ওয়াকার-উজ-জামান দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপরে ২৪শে জুন সকাল ১১টার দিকে তিনি ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সংক্রান্ত কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে ,এখানে।
অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওর ঘটনাটি গত সরকারের আমলে ,২৪শে জুন,২০২৪ তারিখে ঘটেছিল, এবং এটি কোনোভাবেই ১৫ই আগস্ট এর দৃশ্য নয়।
বাংলাদেশ আর্মি নামক ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, গত ১৩ই আগস্ট সেনাবাহিনী প্রধান রাজশাহী সেনানিবাস পরিদর্শন করেছেন। তবে ১৫ই আগস্ট তারিখে তাঁর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর, বা তাঁর সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যক্রম এর কথা কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত ১৫ই অগাস্টে যে চিত্র দেখা গেল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ১৫ অগাস্টে একটি ব্যানারেরও দেখা মেলেনি পুরো এলাকায়। আশেপাশের কোন এলাকায় এই দিনটি ঘিরে কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানের কথাও শোনা যায়নি। ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন যেটিকে ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ বানানো হয়েছিল, তার ঠিক সামনের সড়কটি দুই প্রান্ত থেকে ব্যারিকেড ও কাঁটাতার দিয়ে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখা রয়েছে। ভেতরে অবস্থান করছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। —-বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ শ্রদ্ধা জানাতে যেতে চাইলে অবস্থানকারীদের তোপের মুখে পড়তে হয় তাদের।
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে যে এবারের ১৫ই আগস্ট তারিখে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের উক্ত এলাকায় আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা নিবেদনের কোনো পরিবেশ ছিল না, এবং সেনাপ্রধান উক্ত স্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেননি।
তবে ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিওর কমেন্ট বক্সে দেখা যাচ্ছে, অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভিডিওকে ১৫ই আগস্টের ঘটনা ধরে নিয়েছেন, এবং তারা ইতিবাচক নেতিবাচক উভয় ধরনের মন্তব্যই করছেন।
সঙ্গত কারণে ,১৫ই আগস্টের পরে আপলোড করা উক্ত ভিডিওগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।