পুরনো ভিডিওকে “আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা” বলে প্রচার

12
পুরনো ভিডিওকে “আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা” বলে প্রচার পুরনো ভিডিওকে “আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা” বলে প্রচার

Published on: [post_published]

২৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে “জয় শ্রী রাম আসাম বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা! বাংলাদেশে চলমান হিন্দু গণহত্যার প্রচেষ্টার জেরে সমগ্র বারাক থেকে শুরু করে গৌহাটি অবদি আসামের সর্বস্তরের হিন্দুরা জেগে ওঠেছে!” ক্যাপশনে একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে। গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানের ফলাফল বলছে, ভিডিওটি প্রথম ২৫ সেকেন্ডে দৃশ্যমান জনসমাগমের স্থানটি আসামের নয়, ২০১৯ সালে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের গুলবার্গ নামক স্থানে রাম নবমীর শোভাযাত্রার।

সম্প্রতি মিথ্যা ক্যাপশনে শেয়ার হওয়া দুটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।

মূল ভিডিওটি আসলে কোথাকার?

ভিডিওটির কয়েকটি ফ্রেম ধরে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। অনুসন্ধানের ফলাফল হিসেবে ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ইউটিউবে প্রকাশিত কিছু ভিডিও’র সূত্রে জানা যায় এটি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের গুলবার্গ নামক স্থানে রাম নবমীর শোভাযাত্রার। ভিডিওটিতে যে সাদা মসজিদটি দেখা যাচ্ছে, সেটির নাম বারগাহ-ই-কাদরী চামান। এটি কর্ণাটকের কালাবুর্গিতে অবস্থিত যা গুলবার্গ নামেও পরিচিত। সম্প্রতি ভাইরাল ভিডিওটির প্রথম ২৫ সেকেন্ডে মসজিদটি দেখা যাচ্ছে।

২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ইউটিউবে প্রকাশিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।



১ মিনিট ৯ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ভাইরাল ভিডিওটির প্রথম ২৫ সেকেন্ড ব্যতীত বাকি অংশের সঠিক হদিস পায়নি ফ্যাক্টওয়াচ।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কি রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে?

ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে , ‘’ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ও সীমান্তবর্তী মুসলিমবহুল এলাকাগুলোতে রেড এলার্ট!’’

তবে এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কিংবা বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, আল জাজিরা বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

তবে, গত ১৩ই অক্টোবর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসামের কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি শহরেও এমন সমাবেশ হয়েছিল গত ১৮ই অক্টোবর। করিমগঞ্জে  বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কুশিয়ারা নদীর তীরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ১৮ই অক্টোবর।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর খবর অনুযায়ী, ৩ হাজার বিক্ষুব্ধ নাগরিক কুশিয়ারা নদীর তীরে এই সমাবেশে অংশ নেন । এদের মধ্যে কয়েকজন হঠাত কুশিয়ারা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, এবং সাঁতরে বাংলাদেশে গিয়ে নির্যাতিত হিন্দুদের সাহায্য করার কথা বলেন। যদিও সীমান্তরক্ষী বিএসএফ তাদেরকে  নিবৃত্ত করে।

বিজেপি নেতা রঞ্জন দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ ব্যাপারে বলেছেন, সীমান্ত অতিক্রম করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না এবং এটা বাস্তবসম্মতও নয়। কিন্তু কিছু কিছু আবেগপ্রবণ লোক ক্ষণিকের উত্তেজনার বশে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সীমান্ত অতিক্রমের কথা ভেবেছিলেন।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ইউটিউবে প্রকাশিত কিছু ভিডিও সূত্রে জানা গেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির প্রথম ২৫ সেকেন্ডে দৃশ্যমান জনসমাগমটি সম্প্রতি আসামের নয়, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের গুলবার্গ নামক স্থানে রাম নবমীর শোভাযাত্রার। আসামের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে কিছু প্রতিবাদ সমাবেশ হয়ে থাকলেও সীমান্ত এলাকায় এরকম কিছু ঘটার খবর ফ্যাক্টওয়াচ খুঁজে পায় নি। আলোচ্য ভিডিওতে একটি পুরনো শোভাযাত্রার ভিডিও ব্যবহার করে আসাম-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনার মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে। ফলে এই পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

No Factcheck schema data available.