সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বেশকিছু ভাইরাল হওয়া পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা তারেক জামিলের ছেলে আসেম জামিল (Asim Jamil) অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাছাড়া, ‘ইনসাফ’ নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেল এআরওয়াই নিউজ (ARY News) কে সূত্র দাবি করে একই তথ্য প্রচার করে জানিয়েছে যে, প্রকৃত ঘাতককে ধরতে মুলতান পুলিশ প্রশাসন তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ খতিয়ে দেখেছে, এআরওয়াই নিউজ ঠিক এই তথ্য দেয়নি। সেখানে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে আসেম জামিল নিজ বুকে গুলি চালিয়েছেন, মানে আত্মহত্যা করেছেন। ডন (Dawn) এবং পাকিস্তান টুডে (Pakistan Today) নামক দুটো মূলধারার সংবাদমাধ্যমও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ‘ইনসাফ’ ছাড়া উক্ত সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে কোথাও কোন ঘাতকের কথা উল্লেখ করা হয়নি৷ ‘ইনসাফ’ কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদে তথ্যসূত্রের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বিধায় ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত সংবাদ এবং সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোর দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
ইনসাফ কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এআরওয়াই নিউজ কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদটি পড়ুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টে উত্থাপিত দাবিটির যথাযথতা যাচাই করতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি যে ইনসাফ নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল কর্তৃক প্রকাশিত “অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে মাওলানা তারেক জামিলের ছেলে নিহত” শিরোনাম-সংবলিত সংবাদ থেকে দাবিটি ভাইরাল হয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত সংবাদটি পড়ে দেখা গেছে তারা পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল এআরওয়াই নিউজকে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করে জানিয়েছে যে, আলেম মাওলানা তারেক জামিলের ছেলে আসেম জামিল বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন এবং মুলতান পুলিশ প্রশাসন সেই ঘাতককে ধরতে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। আমরা এআরওয়াই নিউজ কর্তৃক প্রকাশিত “Maulana Tariq Jamil’s son Asim dies from gunshot wound” শিরোনাম-সংবলিত সংবাদটি খুঁজে পেতে সমর্থ হয়েছি। সেই সংবাদে বলা হচ্ছে, আসেম জামিল বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে তিনি নিজ বুকে গুলি চালিয়েছেন। তাছাড়া, এআরওয়াই নিউজের সংবাদে কোন ঘাতকের কথা উল্লেখ করা হয়নি৷ অর্থাৎ, ইনসাফ কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদের সাথে তাদের তথ্যসূত্রের কোন মিল নেই। পাকিস্তানের দুটো মূলধারার সংবাদমাধ্যম ডন এবং পাকিস্তান টুডে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে, তারেক জামিলের ছেলে আসেম জামিল নিজ বুকে গুলি চালিয়েছেন, যা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বেশকিছু মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোও এআরওয়াই নিউজ, ডন, কিংবা পাকিস্তান টুডে এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সেগুলো পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
অতএব, ইনসাফ নামক নিউজ পোর্টালটি এআরওয়াই নিউজকে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করলেও ইনসাফ কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদের সাথে এআরওয়াই নিউজ কর্তৃক প্রকাশিত মূল সংবাদের তথ্যের কোন মিল নেই।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এ ধরনের পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।