শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাটি হিজাব-পরা নিয়ে নয়

15
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাটি হিজাব-পরা নিয়ে নয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাটি হিজাব-পরা নিয়ে নয়

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা হিজাব পরার কারণে ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিও ।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। গত ১২ মার্চ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। নতুন এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য  সেখানকার অনেক শিক্ষার্থী পুলিশের বর্বরতার শিকার হয়েছিল। বেশ কিছু  শিক্ষার্থীদের আটকও করা হয়েছিল। আটক করার সময় পুলিশ কিছু  ছাত্রীদের পোশাক ও হিজাব ছিঁড়ে ফেলেছিল এবং ছাত্রীদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভাইরাল ভিডিওটি মূলত সেই সময়কার।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল ভিডিওর ক্যাপশনে ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কারণ হিসেবে হিজাব পরাকে দায়ী করা হয়েছে। তাই এই ভিডিও সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে Saba Khan নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৩ মার্চ আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।  ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয় যে, গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে CAA বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী পুলিশের বর্বরতার শিকার হয়। ছাত্রীদের জামাকাপড় এবং হিজাব ছিঁড়ে ফেলা এবং তাদের  টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে আটক করার মত ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘণ্টা আটক রাখার পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

এই ঘটনা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে হিন্দুস্তান টাইমসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ১৩ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১২ মার্চ  দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ প্রাঙ্গণে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হওয়ার সময় প্রায় ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।  এই প্রতিবেদনে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএ) এর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি মানিক গুপ্ত (Manik Gupta) এর বরাত দিয়ে জানানো হয় ” অনেক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল, যারা প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেননি কেবল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। নারী প্রতিবাদকারীদের সঙ্গেও সঠিক আচরণ করা হয়নি”।

এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) হচ্ছে ভারতের নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ এর সংশোধিত রূপ। এর ফলে প্রথমবারের মতো, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের অমুসলিম সম্প্রদায় ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। এই আইনটি লোকসভায় পাস হয়েছিল ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯-এ । আইনটি ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের, যারা হিন্দু, পারসি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন বা খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী, তাদের দ্রুত ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে পথ সহজ করে। শুধুমাত্র ২০১৪ সালের শেষের আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতন এড়াতে ভারতে যারা আশ্রয় নিয়েছে আইনটি কেবল তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর ফলে, সাধারণত ১১ বছরের পরিবর্তে মাত্র ৬ বছর ভারতে বসবাসের পরে তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইনে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যার ফলে  বৈষম্যের অভিযোগ তৈরি হয়েছে। ১১ মার্চ, ২০২৪-এ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ২০১৯ বাস্তবায়নের নিয়মগুলিকে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে যা সিএএ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম।

পরবর্তিতে, ভাইরাল ভিডিওটি সত্যিই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে ধারণ করা হয়েছিল কি না এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুগল ম্যাপের সাহায্য নেয় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। গুগল ম্যাপের ইমেজেরি থেকে পাওয়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদ প্রাঙ্গণের একটি ছবির সাথে ভাইরাল ভিডিওটি তুলনা করে দেখা হয়। দুই ছবিতে থাকা ল্যাম্প পোষ্ট, বসার বেদি, গাছের ধরণ ইত্যাদির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, হিজাব পরার কারণে ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে পাওয়া যায়নি। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল দাবিটি মিথ্যা।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.