ভারতে সনাতন যুবকের অঙ্গহানির সংবাদটি মিথ্যা

14
ভারতে সনাতন যুবকের অঙ্গহানির সংবাদটি মিথ্যা ভারতে সনাতন যুবকের অঙ্গহানির সংবাদটি মিথ্যা

Published on: [post_published]

যা দাবী করা হচ্ছেঃ ভারতের আসামে মুসলিম নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করায় সনাতন ধর্মের এক যুবক গোপনাঙ্গ হারিয়েছে।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে আসামে মুসলিম নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় সনাতন ধর্মের যুবকের গোপনাঙ্গ হারানোর সংবাদটি যমুনা টিভি বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যায়নি । তাছাড়া ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল এডিটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করা হয়েছে। একারণে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে শনাক্ত করছে। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের শিরোনামে লেখা রয়েছে “মুসলিম নারীকে প্রেমের ফাদে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করায় গোপনাঙ্গ হারালেন ভারতের স্বনাতন ধর্মের এক যুবক ! ঘটনাটি ঘটে ভারতের আসামে”।

যমুনা টিভির ফটোকার্ডটি প্রকাশের সময় হিসেবে “২৩ এপ্রিল, ২৪” তারিখটি লেখা আছে। তবে যমুনা টিভির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ Jamuna Television -এ অনুসন্ধান করে ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে  এমন শিরোনামে কোন ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। তাছাড়া যমুনা টিভির অনলাইন নিউজ পোর্টালে গিয়েও এমন কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের বেশ কিছু অমিল পাওয়া যাচ্ছে। যেমন-

১। যমুনা টিভির মূল ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের ফন্টটির মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

২। যমুনা টিভির অফিশিয়াল ফটোকার্ডে তারিখের অংশে সাল সম্পূর্ণ চার অঙ্কে লেখা হয়, যেমন ২০২৪। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডে তারিখের অংশে সালটার শেষ দুই অঙ্ক (২৪) লেখা হয়েছে।

যমুনা টিভির কয়েকটি অফিশিয়াল ফটোকার্ড দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

৪। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডের শিরোনামে কিছু ভুল বানান দেখা যাচ্ছে। যেমন –

ভুল শুদ্ধ
ফাদে ফাঁদে
স্বনাতন সনাতন

একটা প্রথম সারির গণমাধ্যমের ফটোকার্ডে এমন সাধারণ বানান ভুল হবার সম্ভাবনা কম।

অতএব ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এটা প্রতীয়মান হয় যে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করা হয়েছে।

আলোচ্য ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে,বাংলা টেলিগ্রাফ এ ২০২০ সালে এই ছবিটি ছাপা হয়েছিল। এই ছবির সাথে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, মালয়েশিয়া প্রবাসী এবং পাবনা নিবাসী বকুল হোসেন (৩৫) এর ছবি এটি, যিনি তখন (২০২০) সালে অসুস্থ অবস্থায় মালয়েশিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে আসাম বা ভারত বা অন্য কোন গণমাধ্যমে আসামে নিকট অতীতে মুসলিম নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় সনাতন ধর্মের যুবকের গোপনাঙ্গ হারানোর কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তবে এই সংবাদের আংশিক ঘটনা অতীতে বিভিন্ন সময়ে দেখা যাচ্ছে। ধর্ষণের চেষ্টা করায় গোপনাঙ্গ কর্তনের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালে ভারতের আসামে , ২০১৮ সালে ময়মনসিংহে, ২০১৯ সালে সিরাজগঞ্জে,  ২০২০ সালে ভোলায়, ২০২৩ সালে বরগুনায়

এছাড়া, হিন্দু যুবক কর্তৃক মুসলিম নারী ধর্ষণের অভিযোগও বিভিন্ন সময়ে পাওয়া গিয়েছে। যেমন- কুমিল্লায় ২০১৮ সালে , ঠাকুরগাওয়ে ২০২০ সালে , খুলনায় ২০২১ সালে , পিরোজপুরে ২০২৪ সালে । তবে এই দু’টি ঘটনা একত্রে (অর্থাৎ হিন্দু যুবক কর্তৃক মুসলিম নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, এবং ধর্ষকের অঙ্গহানি) ঘটার কোনো সংবাদ দেখা যাচ্ছে না।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটির সত্যতা যাচাই করে বাংলাদেশের রিউমার স্ক্যানার এবং ভারতের আজতক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের অনুসন্ধানেও দেখা গেছে ফটোকার্ডের শিরোনামে থাকা দাবিটি মিথ্যা এবং ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করা হয়েছে , এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তঃ

 ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে আসামে মুসলিম নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় সনাতন ধর্মের যুবকের অঙ্গহানির সংবাদটি যমুনা টিভি বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডটি আসল নয়। এটি ডিজিটাল এডিটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করা হয়েছে। ফটোকার্ডে থাকা ছবিটিও জনৈক মালয়েশিয়া প্রবাসীর অসুস্থতার খবর থেকে জোগাড় করা হয়েছে একারণে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে শনাক্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.