যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া একটি ফিলিস্তিনি শিশুর ছবি।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। বাস্তবে ভাইরাল ছবির এই শিশুটির নাম আইলুল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী তার মা ফাতিমা শাহীনকে গ্রেফতার করেছিল, তবে আইলুলকে গ্রেফতার করা সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং জানা যায় যে, গত ২৪ নভেম্বর ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফাতিমা শাহীনের মুক্তির পরে আইলুল যখন তার জন্য অপেক্ষা করছিল — ছবিটি সেই সময়কার।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে গত ২৪ নভেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এবং পরের দুই পক্ষের বন্দী বিনিময় এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল। চুক্তির অংশ হিসেবে দফায় দফায় ইসরায়েল এবং হামাসের বন্দীদেরও মুক্তি দেয়া শুরু হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাবি করা হচ্ছে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া শিশুটি ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন।
তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছবিটি ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে, جنينالحدثالاخبارية (Jenin Hadath News) নামের একটি ফেসবুক পেইজে ভাইরাল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশনে উল্লেখ ছিল যে, মেয়েটি ইসরায়েলি বাহিনীদের থেকে তার মা ফাতিমা শাহীনের মুক্তির জন্য বেথলেহেমের আল-দাহিশা ক্যাম্পে অপেক্ষা করছিল।
এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করে অনুসন্ধান করে The Guardian এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ফাতিমা শাহীন সহ ফিলিস্তিনি আরও বন্দীদের মুক্তি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে ফাতিমা শাহীনের সাথে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া শিশুটির একটি ছবি দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে শিশুটিকে ফাতিমা শাহীনের মেয়ে আইলুল শাহীন(Aylool Shaheen) বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও, এএফপির পিকচার সেকশনে আইলুল শাহীনের বেশ কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। যার মধ্যে একটি ছবির ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, আইলুল আল-দাহিশা ক্যাম্পের ভিতরে তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে, অন্য আরেকটি ছবির ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, মেয়েটি তার মায়ের মুক্তি উপলক্ষে মিষ্টি বিতরণ করছে। অর্থ্যাৎ, এটি নিশ্চিত যে, তার মা ক্যাম্পে পৌঁছানোর আগেও মেয়েটি ক্যাম্পেই অপেক্ষা করছিলো।
মিডল ইস্ট আই এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ফাতিমা শাহীনের ভাই তারিক শাহীনের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, পাঁচ বছর বয়সী আইলুল কারাগার কী এবং কেন তার মাকে ইসরায়েলিরা আটকে রেখেছে তা পুরোপুরি বুঝতে পারে না। কিন্তু সে তার মাকে আবার ঘরে ফিরে আসতে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছিল।
উল্লেখ্য, মিডল ইস্ট মনিটরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৭ এপ্রিল বেথলেহেম শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ফাতিমা শাহীন এবং আহত অবস্থায়ই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যুদ্ধ বিরতির সময় দুই পক্ষের বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি যে সকল বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে ফাতিমা শাহীনও ছিলেন।
দেখা যাচ্ছে যে, আইলুলের গ্রেফতার সংক্রান্ত কোনো প্রমাণই খুঁজে পাওয়া যায় নি। বরং যেসকল প্রমাণ পাওয়া গেছে তার উপর ভিত্তি করে এটা বলা যায় যে, আইলুলকে নয় বরং তার মা কে গ্রেফতার করা হয়েছিলো এবং গত ২৪ নভেম্বর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। সুতরাং এটা বলাই যায় যে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া মেয়েটির ইসরায়েলি কারাগারে আটক থাকার দাবিটি সঠিক নয়। তাই তার কারাগার থেকে মুক্তির বিষয়টিও ভিত্তিহীন।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।