”লন্ডনে মিজানুর রহমান আজহারী গ্রেফতার”- এমন একটি খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এ তথ্য সঠিক নয়। তিনি আইনী জটিলতায় লন্ডনযাত্রার মাঝপথে কাতারে আটকা পড়েন এবং পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। যেহেতু তিনি ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে প্রবেশই করেন নি, তাই তার পক্ষে ইংল্যান্ডে গ্রেফতার হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
বিভ্রান্তিরউৎস
এই সংবাদটি গত ৩১ অক্টোবর থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
‘Sk Shahin’ নামক একটি ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত ৩১ অক্টোবর, ২০২১ তারিখ সকাল ৮টা ৪১ মিনিটে ‘লন্ডনে গ্রেফতার বাংলাদেশের বিশিষ্ট বক্তা মাওঃ মিজানুর রহমান আজহারী। কিন্তু কেন এই গ্ৰেফতার।‘ ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি কমপক্ষে ৭৬ বার শেয়ার করা হয়। । ভিডিওটিতে ০:১২ মিনিটে বলা হয় – লন্ডনের কোর্টের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে মিজানুর রহমান আজহারী কী বললেন যা শুনে সবাই অবাক? তাই তো এবার এ বিষয় নিয়ে অনেক বড় কথা বলেন সালমান খান। ২:০৯ মিনিটের দিকে আবার উল্লেখ করা হয় মিজানুর রহমান আজহারীর গ্রেফতার বিষয়ে বলিউড তারকা সালমান খানের বক্তব্য।
‘সত্তের,পথ’ নামক একটি পেইজ থেকে একই দিনে সকাল ৮টা ৪৭ মিনিটে ‘যুক্তরাজ্য বৃটেনের অবস্থা || এইমাত্র গ্রেফতার মিজানুর রহমান আজহারী || নাস্তিক মুফাসসির ইসলাম‘ ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। এটি কমপক্ষে ৬০ বার শেয়ার করা হয়। ভিডিওটিতে মিজানুর রহমান আজহারীর লন্ডনে যাওয়ার পথে ভিসা বাতিলের কারণে কাতারে আটকা পড়ার সংবাদটি উল্লেখ করা হলেও তার গ্রেফতার হওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয় নি। অর্থাৎ ক্যাপশনের সাথে ভিতরের বিষয়বস্তুর কোনো মিল নাই।
৩১শে অক্টোবর লন্ডনে ION TV UK এর আয়োজনে হতে যাওয়া একটি ইসলামিক কনফারেন্সে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মালয়েশিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমান আজহারীকে।
গত ২৬শে অক্টোবর মঙ্গলবার মালয়েশিয়া থেকে মিজানুর রহমান আজহারী কাতার হয়ে লন্ডনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে যাত্রা শুরু করেন।
পরদিন ২৭শে অক্টোবর বুধবার এই ফ্লাইটটি মালয়েশিয়া থেকে কাতারে অবতরণ করে। এরপর আজহারী লন্ডনের ফ্লাইটে উঠার জন্য সংশ্লিষ্ট গেটে আসেন তখন সেখান থেকে তাঁর ব্রিটেনে আসার ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি। জানানো হয়, ব্রিটিশ হোম অফিস তাঁর ভিসা বাতিল করেছে।
ব্যাপারটা মীমাংসার জন্য কাতার এয়ারপোর্টে অবস্থানের জন্য তিনি ১২ ঘন্টার ট্রানজিট ভিসার ব্যবস্থা করেন। এরপরেও ব্যাপারটা সুরাহা না হওয়ায় ট্রানজিট ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে ৯৬ ঘন্টা করা হয়।
এরপর বাতিল করা ভিসা বহালের জন্য লন্ডনে হাইকোর্টে আপিল করা হয় মিজানুর রহমান আজহারীর পক্ষ থেকে।
২রা নভেম্বর মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি বব ব্ল্যাক ম্যান তার নির্ধারিত বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশেঘৃণাছড়ানোইসলামিকবক্তামাওলানাআজহারীকেলন্ডনেরয়েলরিজেন্সিহলেইসলামীকনফারেন্সেআমন্ত্রণজানানোহয়েছিলো, তিনিযুক্তরাজ্যেআসারজন্যকাতারেএসেআটকেআছেন।এরকমঘৃণাছড়ানোব্যক্তিযেহিন্দুওইহুদিধর্মেরপ্রতিঘৃণাছড়ায়তাকেব্রিটেনেঢুকতেদেয়াঠিকহবেনা।মিজানুররহমানআজহারীব্রিটেনেঢুকলেতারবক্তব্যেরমাধ্যমেএখানকারশান্তিপ্রিয়বৃহৎমুসলিমজনগোষ্ঠীভুলতথ্যপেয়েবিভ্রান্তহতেপারে।এমনকিসেঅনলাইনেওএইধরণেরঘৃণাছড়াতেপারে।
ব্ল্যাক ম্যান সংসদে মিজানুর রহমানের ভিসা বাতিল বহালের আলোচনার জন্য হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেলের প্রতি আহবান জানান। ব্ল্যাক ম্যান এমপির এই বক্তব্যের পর সংসদ লিডার স্যার জ্যাকব রিস বলেন, বিষয়টিগুরুত্বপূর্ণ, এইদেশেঘৃণাছড়ানোএকচিমারাত্মকঅপরাধ।ঘৃণাছড়ায়এমনকাউকেআমরাএইদেশেঢুকতেদিতেপারিনা।ঘৃণাছড়ানোরবিরুদ্ধেআমাদেরএকটিঅবস্থানরয়েছেসেটারভিত্তিতেহোমসেক্রেটারিরকাছেবিষয়টিদেয়াহলো।
মিজানুর রহমান আজহারীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে গত ২রা নভেম্বর এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানানো হয়, বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমনস-এ গ্রেটার লন্ডনের নির্বাচনী এলাকা “হারো ইস্ট” এর কনজার্ভেটিভ পার্টির এমপি “বব ব্ল্যাকম্যান” আমাকে হেইট প্রিচার আখ্যা দিতে গিয়ে কিছু মিসলিডিং ইনফো শেয়ার করেছেন। —— বাংলাদেশ সরকার আমাকে ব্যান করেছে তার কোন প্রমাণ কি তিনি হাজির করতে পারবেন? না, পারবেন না। ——- সম্প্রতি লন্ডনে একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়ে কাতারেই আমাকে থেমে যেতে হয়। ভিসা দিয়েও যুক্তরাজ্যের হোম অফিস আমার যুক্তরাজ্য প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে কাতারে আমাকে সাময়িক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এখবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই উদ্বেগ উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন। আপনাদের সবাইকে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমি ভালো আছি, নিরাপদে আছি।
আমরা হোম অফিসের এই অনাকাঙ্খীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউর জন্য যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে এপীল করেছি। শীঘ্রই শুনানির দিন তারিখ ধার্য করা হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমত আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
৪ নভেম্বর ইংল্যান্ডভিত্তক কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ( যেমন- বিলাত বাংলা নিউজ, রানার নিউজ) এ জানানো হয়, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী কাতার থেকে মালয়শিয়া ফিরে গেছেন। কাতারের ট্রানজিট ভিসা শেষ হওয়ার পরই তিনি মালয়শিয়া ফিরে যান।
এদিকে বলিউড তারকা সালমান খান মিজানুর রহমান আজহারী সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন এমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায় নি। সালমান খানের ভেরিফাইড টুইটার একাউন্ট কিংবা ভেরিফাইড ফেসবুক পেজও এ ব্যাপারে নীরব ।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মিজানুর রহমান আজহারী লন্ডনে পৌঁছেছেন – এরকম একটি গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল যেটি ফ্যাক্টওয়াচ যাচাই করে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
ফ্যাক্টওয়াচেরসিদ্ধান্ত
অনুসন্ধানের পর ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত হলো, মিজানুর রহমান আজহারীর লন্ডনে গ্রেফতার হওয়ার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আজহারী তার লন্ডনযাত্রার মাঝপথে ব্রিটিশ হোম অফিস কর্তৃক ভিসা বাতিল হওয়ায় কাতারের দোহা এয়ারপোর্টে আটকা পড়েন এবং পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। তবে কোনো দেশেই তার গ্রেফতারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?