সম্প্রতি ফেসবুকে “নারায়ণগঞ্জ এর রূপগঞ্জ উপজেলার উত্তর রূপসী তারাব পৌরসভা এলাকার মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেনের একটি মাত্র মেয়ে অরিন” এর জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটিতে বলা হচ্ছে, শিশুটি মলদ্বারে টিউমার নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে এবং এর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ লাখ টাকা। গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, শিশুটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের। শিশুটির মায়ের নাম রামায়া এবং বাবার নাম প্রশান্ত।
সম্প্রতি ফেসবুকে শেয়ার হওয়া দুটি পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে ভারতের শিশুটিকে বাংলাদেশের “নারায়ণগঞ্জ এর রূপগঞ্জ উপজেলার উত্তর রূপসী তারাব পৌরসভা এলাকার মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেনের একটি মাত্র মেয়ে অরিন” উল্লেখ করা হয়েছে।
হাত জোড় করে বলছি কেউ এড়িয়ে যাবেন না, সাহায্য করতে না পারলেও দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে কোনো দানশীল ব্যক্তির নজরে আসে। টাকার অভাবে দিনমজুর বাবা-মায়ের সন্তানের চিকিৎসা করতে পারছেনা। নারায়ণগঞ্জ এর রূপগঞ্জ উপজেলার উত্তর রূপসী তারাব পৌরসভা এলাকার মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেনের একটি মাত্র মেয়ে অরিন।
শিশুটির বয়স মাত্র ৫ মাস। জন্ম থেকেই শিশুটি মলদ্বারে টিউমার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং টিউমারটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও টিউমারের বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে ডাক্তার বলেছেন শিশুটির উন্নত চিকিৎসা করানো হলে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। শিশুটির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ লাখ টাকা, দরিদ্র বাবা সামান্য বস্তার মিলে চাকরি করে এত টাকা কোথায় পাবে ?
স্থানীয়ভাবে এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে আমাদের অন্তত কিছু হলেও যার যা সামর্থ আছে তাই দিয়ে শিশুটিকে সাহায্য করি । আমি আজ আরাফাতের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে হাত জোড় করে ভিক্ষা চাচ্ছি।
ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত শিশুর ছবিগুলো গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে Ketto নামের একটি তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইটটি থেকে জানা গেছে, শিশুটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের। শিশুটির মায়ের নাম রামিয়া এবং বাবার নাম প্রশান্ত।
ওয়েবসাইটটি থেকে আরও জানা যায়, ৮ই অক্টোবর, ২০২১ রামায়া যমজ ছেলের জন্ম দেন। মাত্র ছয় মাসের গর্ভাবস্থার পর জন্ম নেওয়া শিশুরা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। যমজ শিশুর মধ্যে দ্বিতীয় জনের ওজন ছিল এক কেজির কম। সে খুবই দুর্বল ছিল এবং তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রথম যমজের চেয়ে অনেক কম ছিল। বর্তমানে শিশুটি নিউমোনিয়ায় এবং ফুসফুসের জটিল রোগে আক্রান্ত যার জন্য ২৫ লাখ রুপি অর্থ সাহায্য প্রয়োজন। ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে আরও জানা যায়, শিশুটি ভারতের ব্যাঙ্গালরে অবস্থিত অ্যাপোলো ব্যাঙ্গালর ক্রেডেল লিমিটেড হাসপাতালে আই সি ইউ তে ভর্তি আছে।
ওয়েবসাইট, টুইটার এবং ফেসবুকে শিশুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে,এখানে এবং এখানে।
“অরিন” নামে শিশুটির জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদনকৃত ফেসবুক পোস্টগুলোতে উল্লেখিত বিকাশ, নগদ এবং “শিশুটির বাবার নাম্বারে” একাধিক বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেনি ফ্যাক্টওয়াচ টিম।
অন্যদিকে, পোস্টের শুরুতেই বলা হচ্ছে,
“1 Like = 1 টাকা ।
1 Share = 20 টাকা ।
1 Group Share = 40 টাকা ।“
যদিও বাস্তবে এগুলোর মাধ্যমে কোনো আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায় না ফেসবুক থেকে। সম্ভবত একটি চক্র প্রতারণার উদ্দেশ্যে এমনটি করেছে যাতে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের মাধ্যমে এই সাহায্যের আবেদনটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, উক্ত ফেসবুক পোস্টগুলোতে উল্লেখিত ছবির শিশুটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ এর মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেনের মেয়ে “অরিন” নয়, ভারতের প্রশান্ত ও রামায়া দম্পতির দ্বিতীয় যমজ শিশু। আর্থিক সাহায্যের নামে প্রতারণার উদ্দেশ্য বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?