সম্প্রতিফেসবুকেএকটিভিডিওপোস্টভাইরালহয়েছেযেখানেদাবি করা হচ্ছে,প্রশাসনহিন্দুধর্মাবলম্বীলোকদেরবসতবাড়িউচ্ছেদকরছেএবংতারাআহাজারিকরছে।ভিডিওটিরক্যাপশনেঘটনাটিকে চট্টগ্রামেরবাঁশখালীতেহওয়াদরিদ্রহিন্দুদেরউপরনির্যাতনএবংআইনেরঅপব্যবহারবলেপ্রচারকরাহচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে Kohelia TV -এর মনোগ্রাম দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে Kohelia TV নামক কক্সবাজারের স্থানীয় একটি নিউজ পেজ পাওয়া যায়। সেখানে বর্তমানে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিও পাওয়া যায়। ১লা মার্চ, ২০২৩ তারিখে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিলো “বাঁকখালীতে উচ্ছেদ : খোলা আকাশের নিচে ছিল অনেকে।”
এ থেকে বোঝা যায় ভাইরাল ভিডিওগুলোতে ঘটনাটা বাঁশখালীর বলে প্রচার করলেও এটা বাঁকখালী নদীর উচ্ছেদ অভিযানের ঘটনা।
১৪ই জুন, ২০২২ তারিখে ঢাকা টাইমস “বাঁকখালী নদী রক্ষায় পদক্ষেপ না নেওয়ায় ১৫ কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধিকে নোটিশ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই নিউজ থেকে জানা যায় কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী রক্ষায় হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও প্যারাবন কেটে নদী দখল, কক্সবাজার পৌরসভার সমস্ত আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষণ অব্যাহত রাখা এবং পূর্বের দখলদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ৫ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১৫ সরকারি কর্মকর্তা ও এক জনপ্রতিনিধিকে আদালত অবমাননার নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে “অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাঁকখালী নদীর ৩০০ একর জায়গা দখলমুক্ত” শিরোনামে প্রথম আলো একটি সংবাদ প্রচার করে। প্রথম আলোর সংবাদ থেকে জানা যায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে প্রথম দফায় বাঁকখালী নদী দখল করে বানানো অবৈধ স্থাপনার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।উচ্ছেদ অভিযানে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও কক্সবাজার পৌরসভা, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর,র্যাব, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তর অংশ নেয়। আগের দিন উচ্ছেদ অভিযানের কথা জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছিল। ঐদিনও ২৫৩টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পয়লা মার্চ দ্বিতীয় দফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। ৪০টির বেশি পাকা বাড়িসহ ১৪৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুই দিনের অভিযানে নদীর প্রায় ৩০০ একর জমির দখলমুক্ত করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল, বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দখল করে তৈরি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গত দুই দিন যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা স্থাপনাগুলোর মধ্যে ছিল একতলা, দোতলা পাকা ভবন, টিনশেডের পাকা বাড়ি, ঝুপড়ি ঘর, দোকানপাট, মৎস্য খামার ইত্যাদি। অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
ভাইরাল ভিডিওগুলোতে শুধুমাত্র হিন্দু জনগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্থ হবার দিকটি সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রথম আলোর নিউজ থেকে জানা যাচ্ছে নদীর সীমানায় স্থাপনা থাকায় মুসলমান জনগোষ্ঠীও উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
প্রথম আলোর নিউজে সামসুন্নাহার (৫০) নামের একজন গৃহবধূ বলেন, তিনি চার বছর আগে শহরের পেশকার পাড়ার জনৈক মোবারকের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকায় প্যারাবনের চার শতক জমি কেনেন নোটারির মাধ্যমে। সেখানে ছয় মাস আগে তিন লাখ টাকা খরচ করে তৈরি করেন টিনের পাকা বাড়ি। দেড় মাস ধরে সন্তান নিয়ে ওই বাড়িতে থাকছেন। আজ বাড়িটি ভেঙে দেয়া হলো।
কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন সামসুন্নাহার। বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হবে জানলে কষ্টের টাকায় প্যারাবনের জমি কিনতাম না। এখন সবকিছু হারিয়ে পথে বসতে হলো।’
২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ সালে প্রকাশিত প্রথম আলোর আরেকটি সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকালে আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সাংবাদিকদের উপর হামলা করেন। হামলার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন ডিবিসি নিউজ ও বিডিনিউজের জেলা প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মাঈন উদ্দিন হাসান শাহেদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন ক্যামেরাপারসন।
জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ তারিখে ডেইলি স্টারের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ এর পৃথক প্রতিবেদনে বাঁকখালী নদী দখলে জড়িত ১৩১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে নতুন নির্মিত সেতুকে ঘিরে দখলে জড়িত রয়েছেন আরও ৫০ জনের মতো, যাদের মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলাও করেছে। আরবি নাম দেখে এরা সবাই মুসলমান বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে বাঁকখালী নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার একটি নদী। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎসারিত কিছু স্রোতধারা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে মিলিত হয়ে সম্মিলিত ধারায় বাঁকখালী নদীর সৃষ্টি করেছে। নদীটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হয়েছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি বাঁশখালীর বলে দাবি করলেও এটি ছিলো বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ভিডিও। ভাইরাল ভিডিওটিতে ৱ হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকদের উচ্ছেদ নির্যাতন করা হচ্ছে এমন দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু অনুসন্ধানে এটি পরিষ্কার যে এখানে ধর্মীয় কোন বিষয় ছিলো না। বাঁকখালি নদীর সীমানা দখল করা যে কোন ধর্মের মানুষের স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?