সম্প্রতি ফেসবুকে পানির নিচে অবস্থিত একটি টানেলের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছ, ভিডিওটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি মূলত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং এলাকার ডিয়ানচি (Dianchi) হ্রদের তলদেশে অবস্থিত কাওহাই টানেলের। তাছাড়া, বঙ্গবন্ধু টানেল এখনও নির্মাণাধীন যা ভিডিওর ক্যাপশনেও উল্লেখ আছে। সুতরাং এটা এখনও যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত নয়। কিন্তু, ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, টানেল দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই যানবাহন চলাচল করছে। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু টানেলের থ্রিডি অ্যানিমেশন ভিডিওর সাথে ভাইরাল ভিডিওর টানালের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভিত্তিহীন পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পিপল,স ডেইলি নামের একটি চাইনিজ সংবাদমাধ্যমের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আপলোড করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে ভাইরাল ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়া, ভিডিওর ক্যাপশন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং এলাকার ডিয়ানচি (Dianchi) হ্রদের তলদেশে অবস্থিত কাওহাই টানেলের ভিডিও।
তাছাড়া, ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা আছে যে, “চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল”। নির্মাণাধীন কথাটি যেখানে উল্লেখ আছে সেখানে এই টানেল দিয়ে এত পরিমাণে যানবাহন চলাচল করা নিতান্তই অবাস্তব। তাই, চট্টগ্রামে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু টানেলে যানবাহন চলাচল শুরু করেছে কি না এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি- ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে “চলমান প্রকল্পসমুহ” সেকশনে কর্ণফুলী নদীর তলেদেশে টানেলের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে টানেল সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই টানেল নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং এর নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। বঙ্গবন্ধু টানেল হচ্ছে বাংলাদেশের নির্মানাধীন একটি মেগাপ্রজেক্ট তাই উদ্বোধনের আগে এই টানেল দিয়ে যান চলাচলের করা সম্ভব নয়। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি থ্রিডি অ্যানিমেশন ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু, তার সাথে ভাইরাল ভিডিওটির তুলনা করে তেমন কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেমনঃ টানেলের প্রবেশদ্বার, সংযোগ রাস্তা, অবস্থান ইত্যাদি।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে যে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং এলাকার ডিয়ানচি হ্রদের তলদেশে অবস্থিত কাওহাই টানেলের একটি ভিডিওকে চট্টগ্রামে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু টানেলের দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তাই ভিত্তিহীন এই দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।