বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি ভুল তথ্য ভাইরাল

156
বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি ভুল তথ্য ভাইরাল
বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি ভুল তথ্য ভাইরাল

ফেসবুকে সম্প্রতি বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে দুটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে,  গত ৭ মাসে ৭৬ ধাপ এগিয়ে ১২৩ তম অবস্থান থেকে ২০২৫ এ বিশ্ব শক্তির মঞ্চে ৪৭ তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আবার কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় মাত্র ৮ মাসে ৭ ধাপ নিচে নেমে ৪০ তম থেকে ৪৭তম স্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুটি দাবির কোনোটিই সঠিক নয়।

প্রথম দাবি যাচাই: গত ৭ মাসে ৭৬ ধাপ এগিয়ে ১২৩ তম অবস্থান থেকে ২০২৫-এ বিশ্ব শক্তির মঞ্চে ৪৭ তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

এই দাবি সংক্রান্ত ফেসবুকে কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দেখা যায়, ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে ইউএস নিউজ (US News) নামে একটি ওয়েবসাইটকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। 

এই সূত্রে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে ওয়েবসাইটটিতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের একটি তালিকা পাওয়া যায়৷

ওয়েবসাইটটি এই তালিকাটি সম্পর্কে জানায়, যে দেশগুলো নিয়মিতভাবে খবরের শিরোনামে থাকে, নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধারাকে প্রভাবিত করে। তারাই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ। তাদের পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক বাজেট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই দেশগুলো বিশ্বমঞ্চে তাদের প্রভাব বিস্তার করে। 

ওয়েবসাইটটিতে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আলোচিত তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১৭ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। তালিকাতে স্থান পাওয়া দেশের সংখ্যা ৮৯টি। 

মোট ১০ টি ক্যাটাগরিতে তৈরি এই তালিকায় ক্ষমতা বা পাওয়ারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দেখাচ্ছে ৪৭তম এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ৭১তম।

অর্থাৎ তালিকাটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রকাশিত হলেও এটি তৈরিতে সারা বিশ্বে জরিপ চলাকালে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় ছিল না বা এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই তালিকাটি তৈরির জন্য জরিপ করা হয়েছে। 

ফলে গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ৭ বা ৮ মাসে বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় ৭৬ ধাপ এগিয়ে ১২৩ তম অবস্থান থেকে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের ৪৭ তম অবস্থানে উঠে আসার দাবিটি সঠিক নয়। ২০২৪ সালের ফলাফলকে বর্তমান সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ইউএস নিউজের জরিপে বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪০ তম এবং সামগ্রিক অবস্থান ছিল ৬৯ তম। এই তালিকায় স্থান পাওয়া দেশের সংখ্যা ৮৭টি। অর্থাৎ বিগত সরকারের আমলেই শক্তিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৭ ধাপ পিছিয়েছে। 

দ্বিতীয় দাবি যাচাই: বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ৭ ধাপ নিচে নেমে ৪০ তম থেকে ৪৭তম অবস্থানে চলে গেছে।

এই দাবি সংক্রান্ত ফেসবুকে কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

এই দাবির পক্ষে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সিইও ডট ওয়ার্ল্ড ডট বিজ নামে একটি ওয়েবসাইটের তালিকা। এই ওয়েবসাইটটিতে তালিকাটি প্রকাশ করা হয় ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল। এই তালিকা অনুসারে মোট ১৪২ টি শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪০তম। 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়, প্রথম দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ করতে দ্বিতীয় দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু দুটি দাবিতে ব্যবহৃত তালিকাটি ভিন্ন ভিন্ন দুটি ওয়েবসাইটের এবং তালিকাগুলো প্রকাশের সময়কাল, তালিকাতে থাকা দেশের সংখ্যাও ভিন্ন ভিন্ন। ফলে তুলনাটি প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবভিত্তিক নয়। 

যেমন, ইউএস নিউজের (US News) তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এবং এতে দেশের সংখ্যা ৮৯টি। অপরদিকে সিইও ডট ওয়ার্ল্ড ডট বিজের তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে একই বছরের এপ্রিলে এবং এতে দেশের সংখ্যা ১৪২ টি। 

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ দাবি দুটিকেই মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

Claim:
ফেসবুকে সম্প্রতি বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে দুটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, গত ৭ মাসে ৭৬ ধাপ এগিয়ে ১২৩ তম অবস্থান থেকে ২০২৫ এ বিশ্ব শক্তির মঞ্চে ৪৭ তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আবার কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় মাত্র ৮ মাসে ৭ ধাপ নিচে নেমে ৪০ তম থেকে ৪৭তম স্থানে নেমে গেছে বাংলাদেশ।

Claimed By:
Facebook Users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh