সাম্প্রতিক সময়ে দেউলিয়া হতে চলার সম্ভাব্য ১২টি দেশের তালিকার মাঝে বাংলাদেশ ৮ নম্বর স্থানে বিষয়ে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে। আরটিভি এর বরাতে একটি পরিসংখ্যানের স্ক্রিনশট দিয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, বিশ্বের মোট ১২টি দেশের মধ্যে শ্রীলংকার পরে ৮ নম্বর স্থানে বাংলাদেশ দেউলিয়া হতে চলেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আরটিভি এমন কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। আরটিভি সংবাদে প্রকাশিত একটি ভিন্ন প্রতিবেদন থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তথ্য বিকৃত করে ফেসবুকে খবরটি ভাইরাল করা হয়। এমনকি ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশট এর দাবিটিও পরিষ্কার নয়। এছাড়া বাংলাদেশের দেউলিয়া হওয়া প্রসঙ্গে কোন খবর দেশের বা আন্তর্জাতিক কোন গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায় নি।
ভাইরাল স্ক্রিনশটটি গুগল রিভার্স ইমেজ এর মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হলে দেখা যায় স্ক্রিনশটে ব্যবহৃত পরিসংখ্যানটি আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স এর একটি প্রতিবেদন থেকে নেয়া, যা বিকৃত করে ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১৬ জুলাই প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ঋণসংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের খরচ মিলিয়ে অর্থনৈতিক পতনের আশঙ্কা রয়েছে এমন ১২ টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়। তবে সেই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই; রয়েছে আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, তিউনিসিয়া, ঘানা, মিশর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভেদর, পাকিস্তান, বেলারুশ, ইকুয়েডর এবং নাইজেরিয়া।
ভাইরাল স্ক্রিনশট এর পরিসংখ্যানটি ছিল ২০টি দেশের রাজস্বের কত শতাংশ সেই দেশের ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ব্যয় হয় তার অনুপাত। ফিচ রেটিংস এর গবেষণা থেকে রয়টার্স এই পরিসংখ্যানটি তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে। এ তালিকায় শ্রীলংকার অবস্থান প্রথম — সেখানে দেখা যায় দেশটি তাদের ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য অন্য দেশগুলোর তুলনায় তাদের রাজস্বের সবচেয়ে বেশি অংশ ব্যয় করে। বাংলাদেশের অবস্থান এই পরিসংখ্যানের তালিকায় ১১তম। এতে বলা হয়েছে যে, দেশটির রাজস্ব ও ঋণের সুদ পরিশোধের অনুপাত ২১%। তবে এই পরিসংখ্যানটি কোন দেশের দেউলিয়া হবার সম্ভাবনার কোন তথ্য তুলে ধরে নি।
আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূলত আরটিভি সংবাদে “জেনে নিন বিশ্বের যে ১২টি দেশ দেউলিয়া হতে পারে!” শিরোনামে রয়টার্স এর এই প্রতিবেদনটি নিয়েই খবর প্রচার করা হয় ১৭ জুলাই।
আরটিভি এর সেই প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ নেই। তবে প্রতিবেদনটি প্রচারের সময় রয়টার্সের প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানটি দেখানো হয়েছিল-যা থেকে ভাইরাল স্ক্রিনশটটি নেয়া হয়। আরটিভির ওই সংবাদের শিরোনাম এবং পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের নাম থাকায় সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি খবরকে বিকৃত করে ফেসবুকে ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ভাইরাল স্ক্রিনশটটি দিয়ে যেই তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও তাতে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই ভাইরাল দাবিটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?