ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার

10
ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার

Published on: [post_published]

আগামী ২০ মে ২০২৪ (সোমবার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁও নির্বাচনী আসনে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল সাতটা থেকে বিকাল ছয়টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে বলে একটি নির্দেশনায় জানিয়েছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা নির্বাচন কমকর্তা। উক্ত নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের দিন বনগাঁওয়ে অবস্থিত পেট্রাপোল এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মেডিকেল ভিসাধারী যাত্রী, বাংলাদেশে অবস্থানরত বনগাঁও আসনের ভোটার, এবং পচনশীল খাদ্য বহনকারী যানবাহন ছাড়া কেউ ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। এই নির্দেশনা ১৭ মে ২০২৪ (শনিবার) বিকাল ছয়টা থেকে শুরু করে ২০ মে ২০২৪ (সোমবার) ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ, এই তিন দিন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কোন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী ব্যক্তি ভ্রমণ ভিসা নিয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে বেনাপোল ছাড়া অন্যান্য স্থলবন্দর এবং আকাশপথে ভারতে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞার কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এদিকে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের ফেসবুক পেইজে প্রচারিত ফটোকার্ডে এই তথ্যটি দিয়েছে যে, মেডিকেল ভিসা ছাড়া সকল ভিসায় তিন দিন ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে! অথচ মূল সংবাদে ঢুকে পড়ে দেখা যাচ্ছে সেখানে শুধু বেনাপোল বন্দরের কথাই উল্লেখ করা আছে। অন্য প্রবেশপথ দিয়ে ভারত ভ্রমণে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সঙ্গত কারণে এইধরণের ফটোকার্ডগুলো ভারত ভ্রমণে ইচ্ছুক বাংলাদেশীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ফেসবুকে ভারত ভ্রমণ-সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপে এই বিষয়টি নিয়ে মানুষকে উদ্বেগ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

 

অনুসন্ধান:

বাংলা ট্রিবিউন, ডিবিসি নিউজ, কালের কন্ঠ, রাইজিং বিডি, বিডিটোয়েন্টিফোরলাইভের মতো বেশকিছু সংবাদমাধ্যম তাদের ফেসবুক পেইজ থেকে ফটোকার্ড প্রচার করে জানিয়েছে যে, তিন দিন ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে না বাংলাদেশীরা। তবে তাদের ফটোকার্ডে সন্নিবেশিত তথ্যটি পুরোপুরি সঠিক নয়। কেবল বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা ভ্রমণ ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না। বেনাপোল ছাড়া অন্য যেকোন স্থলবন্দর এবং আকাশপথে বাংলাদেশীদের ভারত ভ্রমণের উপর কোন নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা কোথাও পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। 

গত ১৬ মে ২০২৪ এ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার স্বাক্ষর সংবলিত একটি নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে বলা হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁও নির্বাচনী আসনে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ১৭ মে ২০২৪ (শনিবার) বিকাল ছয়টা থেকে ২০ মে ২০২৪ (সোমবার) ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বনগাঁও অংশে অবস্থিত পেট্রাপোল স্থলবন্দর এবং বাংলাদেশ অংশে অবস্থিত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং কেউ এই সময় উক্ত বন্দরগুলো ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে, নোটিশে এটিও স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, শুধুমাত্র মেডিকেল ভিসা নিয়ে যারা চিকিৎসার জন্য ভারত যাবেন তারা এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বনগাঁও নির্বাচনী আসনের ভোটাররা এই সময় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। তাছাড়া, পচনশীল খাদ্য বহনকারী যানবাহনের জন্যও এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে বলে উক্ত নির্দেশনায় বলে দেয়া হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর তথ্য সংবলিত ফটোকার্ডগুলো দেখে অনেককেই উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন ভ্রমণ-সংক্রান্ত গ্রুপগুলোতে এই তিন দিন ভারত ভ্রমণে ইচ্ছুক মানুষরা কোন বন্দর দিয়ে ভারত প্রবেশ করবেন সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ঝামেলায় পড়ছেন বলে জানা গেছে। উক্ত সংবাদমাধ্যমগুলোর ফটোকার্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট মূল সংবাদে ঢুকে দেখা গেছে সেখানে কেবল বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। অথচ তারা ফটোকার্ডগুলোতে পুরো তথ্যটি উল্লেখ না করায় মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর দাবি পুরোপুরি সঠিক নয়।

তাই সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এইসকল ফটোকার্ডগুলোর দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.