সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, আইনমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া সমাবেশে যোগ দিতে পারবেন। তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, খালেদা জিয়া যদি ১০ ডিসেম্বর বক্তব্য নিতে যান তবে তাকে যে শর্তের ভিত্তিতে মুক্তি দেয়া হয়েছিলো তা ব্যাহত হবে। তিনি এটি বলেন নি যে খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত। মূল বক্তব্য সম্পূর্ণ প্রকাশ না করায় এই বিভ্রান্তির তৈরি হয়েছে।
এসব ফেসবুক পোস্টে আরটিভির এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে বক্তব্য দিতে পারবেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোন বাঁধা নাই – এমন কথা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভাইরাল এসব পোস্ট থেকে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, ২ ডিসেম্বর ২০২২ এ আরটিভি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “‘খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন না, এমন তথ্য ঠিক নয়’” শিরোনামে এই প্রতিবেদনে ভাইরাল বক্তব্যটির কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আরটিভির এই প্রতিবেদনে কোথাও খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত – এমন বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনমন্ত্রী বলেছেন, “বিএনপি বারবার বলছে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, তিনি তো মুক্ত। তাকে মুক্তি দেওয়ার কি আছে? তাকে দিয়ে ১০ ডিসেম্বর বক্তব্য দেওয়াতে চান ভাল কথা, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাকে যে দুই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রমাণ হয় তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এমন তথ্য ঠিক নয়। নারায়ণগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এসব কথা বলেছেন।“ জানা যায়, ১ ডিসেম্বর, ২০২২ এ জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্মিত সেলিম ওসমান বার ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জে তিনি এসব কথা বলেন।
পরবর্তীতে আইনমন্ত্রীর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি খুঁজতে অনুসন্ধান করা হলে, “Bangladesh Grassroot AwamiLeague জয়বাংলা” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে তার বক্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে মন্ত্রী বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই শর্তে দন্ডাদেশ স্থগিত রেখে ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “কালকেও আমি শুনেছি, খবরের কাগজে দেখেছি উনারা (বিএনপির নেতাকর্মীরা) বক্তৃতা করেন খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে, উনি (খালেদা জিয়া) তো মুক্ত, উনি মুক্ত, উনি উনার বাসায় আছেন, প্রায়সময়ই উনি চিকিৎসা নেয়ার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান”। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন খালেদা জিয়াকে দিয়ে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে বক্তব্য দেয়াবেন— এমন প্রসংগ টেনে আইনমন্ত্রী পুনরায় বলেন,”বন্ধুগণ যে দুইটা শর্ত দেয়া হয়েছে এর মধ্যে কিন্তু ‘তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না’ এমন শর্ত নাই”। একটু থেমে পরক্ষণেই মন্ত্রী বলেন,” কিন্তু একটা কথা, উনাদের যে আবেদন (খালেদা জিয়াকে যে আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪০১ ধারায় মুক্তি দেয়া হয়) ছিলো, সেই আবেদনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে লেখা ছিলো যে তার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা এতোই খারাপ যে তিনি চলাফেরা করতে পারেন না, তাকে অবশ্যই মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসা করাতে হবে। তাহলে যদি ১০ তারিখে বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দিতে যান তাহলে দরখাস্তে যে লেখা ছিলো সেটি কি মিথ্যা প্রমাণিত হবে না? আপনাদের কাছে আমার এটুকুই কথা”। শেষে তিনি ঠাট্টার সুরে বলেন, “আমি আইনজীবী, সোজা কথা ঘুরিয়ে বলি তাই একটু ঘুরিয়ে বললাম।”
অর্থ্যাৎ, পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার ১০ তারিখে বক্তব্য নিতে যাওয়ার বিষয়টিকে শর্তবিরোধী বলছেন এবং এটিও প্রমাণিত হচ্ছে যে তিনি কোথাও বলেননি যে, খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত। বরং এটিই বুঝিয়েছেন যে, ৪০১ ধারায় তিনি দুইটি শর্তের অধীনে মুক্ত।
আনিসুল হকের একই বক্তব্য প্রকাশ করেছিলো দৈনিক প্রথম আলো। সেখানে উল্লেখিত বক্তব্যটি লক্ষ্য করলে পরিষ্কার বুঝা যায় আনিসুল হকের মূল বক্তব্যটি কি ছিলো। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, “আনিসুল হক বলেন, ‘ওনারা (বিএনপি নেতারা) বলেছেন ডিসেম্বরের ১০ তারিখে ওনাকে (খালেদা জিয়াকে) দিয়ে বক্তৃতা দেওয়াবেন। যে দুটি শর্তে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, ওই দুটি শর্তে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না—এটা নেই। কিন্তু ওনাদের যে আবেদন ছিল, তাঁর শারীরিক অবস্থা এতো খারাপ, তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসা করাতে হবে। তাহলে যদি খালেদা জিয়া ১০ তারিখে যান, তাহলে ওই যে দরখাস্ত, যে লেখা ছিল সেটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে না?’”
কিন্তু আরটিভির প্রতিবেদনে মূল বক্তব্যের খন্ডিত অংশ দেয়ায় বক্তব্যের মূলভাবটি বদলে যায়, তাই বিভ্রান্তির তৈরি হয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়ার বক্তব্য নেয়ার বিষয়ে বেশ আলোচনা দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়া সমাবেশে যাননি। তার জন্য আসন ফাঁকা রেখে চলছে সমাবেশ।
সুতরাং, পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গ বহির্ভূত ভাবে উদ্ধৃত করায় বক্তব্যের মূলভাব বদলে গেছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন দাবিকে বিভ্রান্তিকর চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?