যা দাবি করা হচ্ছে: একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন লোক সাঁতার কেঁটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পাড় থেকে উন্মত্ত জনতা তার উপর ঢিল ছুড়ে মারছে। ইংরেজি ক্যাপশনে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে এই ভিডিওটিকে একজন হিন্দু ব্যক্তির উপর হামলা বলে প্রচার করা হচ্ছে।
যা পাওয়া যাচ্ছে: এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের উপর গত ৫ই আগস্ট হামলার ঘটনার ভিডিও। ধর্মবিশ্বসের দিক দিয়ে এই মেয়র একজন মুসলিম। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ “হিন্দু লোকের উপর আক্রমণ” বলে দাবি করা এই ভিডিওযুক্ত পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওর ক্যাপশনে কেউ কেউ ঘটনাটা মৌলভিবাজারের জুরি উপজেলার বলে দাবি করছে। কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, এই ব্যক্তির স্ত্রী-কন্যাকে ধর্ষণ ও করা হয়েছে।
৮ই আগস্ট, ২০২৪ তারিখে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে “জনতার ধাওয়া খেয়ে দিঘী সাঁতরে পালালেন আখাউড়ার পৌর মেয়র” টাইটেলে ২.৩৪ মিনিটের একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। ভিডিওটির সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। যমুনা টেলিভিশনের ভিডিওতেও দেখা যায় একজন লোক সাঁতরে পালানোর চেষ্টা করছে। পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন তার উপর ঢিল ছুঁড়ছে এবং গালিগালাজ করছে।
“জনতার তোপে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালালেন আখাউড়ার প্রভাবশালী মেয়র” শিরোনামে ৮ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে বাংলা নিউজ ২৪ ডট কমের একটি খবরে জানা যাচ্ছে ভিডিওতে থাকা লোকটির নাম তাকজিল খলিফা কাজল। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী মেয়র।
খবরে বলা হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর বিক্ষুব্ধ জনতা তার পৌরশহরের রাধানগরে মেয়রের বাসভবনে হামলা চালান। এ সময় মেয়র তাকজিল বাসা থেকে লাফিয়ে পাশের দিঘি দিয়ে সাঁতরে পালিয়ে যান। এসময় তাকে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতেও দেখা গেছে। দিঘিতে সাঁতরে তার পালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দিঘির পানিতে ঝাঁপ দেন তাকজিল। এসময় জনতা তাকে দেখে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। কোনো রকমে সাঁতরে ওপারে গিয়ে পালিয়ে রক্ষা পান তিনি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, তাকজিলের বাসভবনে হামলার সময় তার বাসার ছাদ থেকে পাথর, ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। তাছাড়া ককটেল বিস্ফোরণ ও একাধিক গুলির শব্দও শুনতে পান তারা (আন্দোলনকারীরা)। এতে একাধিক বিক্ষোভকারী আহত হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই বিক্ষুব্ধ লোকজন মেয়রের বাসভবনে ঢুকে ভাঙচুর করে আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন।
মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের পুকুর সাঁতরে পালিয়ে বাঁচার খবরটি বাংলাদেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। সেগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। এ সকল খবরে তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপর ধর্ষণ বা শারীরিক আক্রমণের কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা।
তাকজিল খলিফা কাজল এর আরবি নাম দেখে ধারণা করা যায়, তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এছাড়া,তার রাজনৈতিক পোস্টারে ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ বার্তাটি দেখা যায়। ২০২০ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে সংবাদমাধ্যমে তাকে মাথায় টুপি পরে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়।এছাড়া জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাকে একাধিক জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে তাঁর বক্তব্যগুলো তিনি ‘আসসালামু আলাইকুম’ দিয়ে শুরু করেছেন। এ সকল আলামত থেকে প্রমাণিত হয় যে তিনি মোটেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয় ,বরং তিনি মুসলিম।
ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট দি কুইন্টও উক্ত ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে। তাদের প্রতিবেদনেও বলা হচ্ছে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি কোন হিন্দু ব্যক্তি নয়।
সিধান্ত:
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে সাঁতার কেটে পালিয়ে যাওয়া লোকটি কোন হিন্দু ব্যক্তি নন , বরং তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। সমাজে সুপরিচিত এই জনপ্রতিনিধি ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আর সাঁতার কেটে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি মৌলভিবাজারের নয়, এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা। তাই ফ্যাক্টওয়াচ হিন্দু লোকের উপর আক্রমণ বলে দাবি করা পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।