যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ এর কাঁধে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের লাশের ছবি।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। বিএসএফের জওয়ানদের কাঁধের মৃতদেহটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের নয়। সম্প্রতি ভারতের ছত্তিশগড়ে অবস্থিত কাঙ্কের জেলায় দেশটির পুলিশ এবং বিএসএফের যৌথ অভিযানে ২৯ জন নকশাল কর্মী নিহত হয়। ছবিতে থাকা মৃতদেহটি তাদেরই একজনের। বাংলাদেশী কারো নয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্তের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪,০৯৬.৭ কি.মি। এই সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ এর গুলিতে বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে চলছে। নিহতদের একটি বড় অংশ হল গবাদি পশু ব্যবসায়ী এবং সীমান্তবর্তী জমির কৃষক। সীমান্তে চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে বিএসএফ এর শ্যূট-অন-সাইট (দেখামাত্র গুলি) নামের একটি বিতর্কিত নীতি চালু আছে। এর ভিত্তিতে কারণে কিংবা অকারণে বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করতে পারে বিএসএফ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন বিএসএফের সদস্য একটি মৃতদেহ কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, এই মৃতদেহটি একজন বাংলাদেশি নাগরিকের।
তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছবিটি ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ১৭ এপ্রিল ২০২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় মৃতদেহটি ভারতের একজন নকশালবাদীর। ছবিটির উৎস হিসেবে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) এর নাম উল্লেখ করা হয়। পিটিআই এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পেতে সক্ষম হয় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। প্রতিবেদনটি ছিল ভারতের ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এনকাউন্টারে ২৯ জন নকশালকে গুলি করে হত্যা করা নিয়ে।
ভারতের ছত্তিশগড়ে অবস্থিত কাঙ্কের জেলার হিদুর এবং কালপার গ্রাম সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় ১৬ এপ্রিল ২০২৪-এ বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি) এর যৌথ অভিযানে ২৯ জন নকশালকে হত্যা করা হয়েছিল। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া মৃতদেহটি এই ২৯ জনের মধ্যে একজনের।
উল্লেখ্য, নকশাল বা নকশালবাদী হচ্ছে ভারতের একটি উগ্র বামপন্থী দল। পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়িতে এই সশস্ত্র বামপন্থী দল গঠিত হয়েছিল। শুরুটা জমিদার- জোতদারদের বিরুদ্ধে হলেও এখন তাদের পরিচিতি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। ভারতের বিহার, অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্রিশগড়, ঝারখন্ড, কেরালা, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিম বঙ্গ, তেলেঙ্গানা এবং মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় নকশালদের কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়েছে। ছত্রিশগড় এখনও নকশালপন্থীদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি।
ঢাকা থেকে সড়কপথে ছত্তিশগড়ের দূরত্ব ১০৯৯ কিলোমিটার। অর্থাৎ, এই যৌথ অভিযানটি যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে পরিচালিত হয়নি এতটুকু নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে।
তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল পোষ্টগুলো মিথ্যা।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।