বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গোয়েন্দা কুকুর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বাংলাদেশি কুকুরকে সন্দেহ করা হচ্ছে – এমন একটি পোস্ট দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বিএসএফের গোয়েন্দা কুকুরদের প্রজনন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং প্রতিটি কুকুরের দেখভালের জন্য একজন ‘হ্যান্ডলার’ থাকেন। ভারতীয় কুকুরের অন্তঃসত্ত্বা হবার পেছনে বাংলাদেশি কুকুরের দায় নিয়ে বিএসএফের মাথাব্যথা আছে এমন কোনো সূত্র পাওয়া যায় নি, মূলত হ্যান্ডলারের গাফিলতির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কোর্ট অফ এনকোয়ারি তৈরি করা হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিচ্ছে।
গুজবের উৎস
এ বছর জানুয়ারির ১ তারিখ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ফেসবুকে ভাইরাল হয় এই পোস্ট। হাস্যরসের বিষয় হিসেবে নিলেও খবরটিকে সত্যি মনে করছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গোয়েন্দা কুকুর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা সত্য হলেও ‘বাংলাদেশি কুকুরকে সন্দেহ করা হচ্ছে’ এই অংশটি শুধুমাত্র Ridmik News নামক অনলাইন নিউজ পোর্টালটি দাবি করছে।
বাংলাদেশি অন্যান্য সংবাদপত্র এবং নিউজপোর্টাল থেকে জানা যাচ্ছে যে, ল্যালসি নামে বিএসএফের এক স্নিফার ডগ ডিসেম্বরের ৫ তারিখ তিনটি শাবকের জন্ম দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বা গোয়েন্দা বিভাগের কোনো কুকুর যেকোনো সময় অন্তঃসত্ত্বা হতে পারে না। বিএসএফসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাহিনীতে গোয়েন্দা কুকুরদের প্রশিক্ষণ, প্রজনন, টিকাকরণ, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। গোয়েন্দা কুকুরদের প্রজননের জন্য একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। বিএসএফের পশু চিকিৎসা বিভাগের অনুমতি পেলে একটি প্রশিক্ষিত কুকুরকে প্রজননচক্রে যেতে দেওয়া হয়। প্রতিটি কুকুরকে ২৪ ঘণ্টা দেখভালের জন্য একজন করে হ্যান্ডলার থাকেন। ল্যালসির হ্যান্ডলারের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে সে ধারণা থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএসএফের উচ্চপদস্থ কর্তারা। এ বিষয়ে ‘কোর্ট অফ এনকোয়ারি’ তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দৈনিক জনকণ্ঠের রিপোর্ট দেখুন এখানে, ঢাকা ট্রিবিউনের রিপোর্ট দেখুন এখানে, দৈনিক ইনকিলাবের রিপোর্ট দেখুন এখানে, দৈনিক আমাদের সময়ের রিপোর্ট দেখুন এখানে, যমুনা টিভির রিপোর্ট দেখুন এখানে, ডিবিসি নিউজের রিপোর্ট দেখুন এখানে।
ভারতীয় স্নিফার ডগ ল্যালসি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বাংলাদেশি কুকুরকে সন্দেহ করা হচ্ছে – এমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় নি এই পত্রিকাগুলোতে।
এদিকে আনন্দবাজার, দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, Latestly, NDTV – এর মতো ভারতীয় প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট থেকে উপরে উল্লেখিত একই তথ্য জানা গেলেও গোয়েন্দা কুকুরের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পেছনে বাংলাদেশি কুকুরকে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন কোনো দাবি তোলে নি কোন পত্রিকাই, বরং হ্যান্ডলারের গাফিলতির বিষয়টি উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
তাই ফ্যাক্টওয়াচের মতে পোস্টটি বিভ্রান্তিকর।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?