পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে কেন্দ্র ফেসবুকে দুইজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর সামনে সাজিয়ে রাখা কিছু অস্ত্রের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে এটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের ছবি। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায় এটা পার্বত্য চট্টগ্রাম নয় বরং, থাইল্যান্ডের চোনবুরি প্রদেশের শ্রী রাচা জেলার ওয়াট হুয়ে প্রাপ (วัดห้วยปราบ) প্যাগোডার ছবি। তাছাড়া এই ছবিটি পার্বত্য চট্টগ্রামে দাঙ্গা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খুঁজে পাওয়া যায়। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় পোস্টগুলো বিভ্রান্তিকর।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য এটা ব্যবহার করে প্রথমে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ডেমোক্রেসি ফর বর্মা নামের একটি ওয়েবসাইটে ২৫ আগস্ট ২০১৪ এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ভাইরাল ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয় এই একই তারিখে থাইল্যান্ডের চোনবুরি প্রদেশের শ্রী রাচা জেলার ওয়াট হুয়ে প্রাপ (วัดห้วยปราบ) প্যাগোডায় দেশটির সৈন্যরা অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র খুঁজে পেয়েছিল। আলোচিত ছবিটি হচ্ছে সেই সময়কার। উক্ত ছবিটির পাশাপাশি এই নিবন্ধে আরও তিনটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সবগুলো ছবি ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা একই ঘটনার ছবি।
এই সূত্র অনুযায়ী পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে থাই সংবাদমাধ্যম সানুক নিউজ (sanook news)- এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই একই ঘটনা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উপরে উল্লেখিত ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা তিনটি ছবির মধ্যে একটি ব্যবহার করা হয়। এই ছবি এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি যে একই ঘটনার তাঁর প্রমাণ নিম্নে তুলে ধরা হল
অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামে দাঙ্গা শুরু হয় খাগড়াছড়ি শহরের নোয়াপাড়া এলাকায় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ মোহাম্মদ মামুন নামের এক বাঙালি ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করে হত্যা করাকে কেন্দ্র করে। এই হত্যার জের ধরে সেইদিন সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে গোলাগুলি শুরু হয় এবং একাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এই উত্তেজনা খাগড়াছড়ি থেকে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি কমপক্ষে ২৫ আগস্ট ২০১৪ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ, এই ছবিটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান দাঙ্গার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি বিশ্লেষণ করে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটা পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারণ করা কোনো ছবি নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh