মরক্কো এবং বিভিন্ন দেশে বোরকা বা নিকাব নিষিদ্ধের দাবিগুলো কতটুকু সঠিক?
Published on: [post_published]
Fact-File
প্রস্তাবনা:
সম্প্রতি কাতার ২০২২ বিশ্বকাপে মরক্কো ফেভারিট দলগুলোর সাথে ভালো খেলেছে এবং বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। উত্তর আফ্রিকার এই মুসলিম দেশটির ভালো পারফরম্যান্সে বাংলাদেশেও মরক্কোর জন্য ফুটবল ফ্যানদের সাপোর্ট দিতে দেখা গিয়েছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করে মরক্কোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে, একটা বিষয় পোস্টগুলোতে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, পোস্টকারীরা দাবি করছেন মরক্কো একটি মুসলিম দেশ হয়েও সেখানে বোরকা-নিকাব পরিধান করা আইনত নিষিদ্ধ। এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
কিন্তু মরক্কোতে কি আদৌ বোরকা ও নিকাব পরিধান আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে? পৃথিবীর কোন কোন দেশে বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ? নিষিদ্ধ হলেও সেটি কি আংশিক বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি যে, মরক্কোতে বোরকা-পরা নিষিদ্ধ নয় বরং বোরকা বিক্রয় এবং বাজারজাত নিষিদ্ধ এবং পৃথিবীর বেশকিছু দেশে বোরকা-পরা ক্ষেত্রবিশেষে পুরোপুরি নিষিদ্ধ আবার কোথাও আংশিক নিষিদ্ধ। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ডিসেম্বর মাসের ফ্যাক্ট-ফাইলটি তৈরি করেছেন মোহাম্মদ আরাফাত।
বোরকা, নিকাব, এবং হিজাব এর মধ্যে পার্থক্য কি?
আলোচনার সুবিধার্থে আমরা প্রথমেই দেখে নিই বোরকা, নিকাব, এবং হিজাব – এই তিন ধরণের পোশাকের মধ্যে পার্থক্য কি।
বোরকা: বোরকার ব্যবহার অন্যসকল মুসলিম পোশাকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যা পুরো শরীরকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখে। শুধু চোখের দিকে জালের মতো আবরণ থাকে যার মাধ্যমে বোরকা পরিধানকারী বাহিরের সবকিছু দেখতে পায়।
নিকাব: নিকাব হচ্ছে এমন একটি পোশাক যা পুরো মুখমন্ডলকে ঢেকে রাখে এবং শুধু চোখদুটো অনাবৃত রাখে।
হিজাব: হিজাব হচ্ছে হেডস্কার্ফের মতো একটি পোশাক যা এর ব্যবহারকারীর মাথা, কান, গলা, এবং বুক পর্যন্ত ঢেকে রাখে।
মরক্কোতে বোরকা পরিধান করা কি আইনত নিষিদ্ধ?
১০ই জানুয়ারি, ২০১৭ এ নিউ ইয়র্ক টাইমস, আল-জাজিরা, এবং বিবিসি – তে প্রকাশিত সংবাদ মারফত জানা গিয়েছে যে মরক্কোতে বোরকা বিক্রয় এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে মরক্কোর কর্তৃপক্ষ বোরকা বিক্রয় এবং বাজারজাত করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তটি নেয় বলে জানানো হয়েছে উক্ত সংবাদগুলোতে। মরক্কোতে বোরকা বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা আশংকা করছেন যে এই নিষেধাজ্ঞা বোরকা এবং নিকাব পরিধানের উপরও আরোপ করা হয় কিনা। তবে, মরক্কোর কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে পরবর্তীতে স্পষ্ট কোন কিছু জানায়নি। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের দোহাই দিয়ে বোরকা বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তটিকে অনেকে উড়িয়ে দিয়েছেন। দি কনভারসেশন এর মতে, মরক্কোতে বোরকা উৎপাদন এবং বিক্রয় এর উপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত কেবল নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে নয় বরং মরক্কোতে সালাফিস্ট ইসলামের দ্রুত প্রসার দেশটির নরমপন্থী সরকারের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো এবং তারা মনে করেছিলো বোরকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে চরমপন্থী ইসলামের প্রকাশ কিছুটা ব্যাহত হবে। অন্যদিকে, যারা মরক্কোতে বোরকা উৎপাদন, বিক্রয়, এবং বাজারজাত এর উপর নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগতম জানিয়েছিলেন তাদের মতে বোরকা মরক্কোর নিজস্ব সংস্কৃতি নয় বরং এটি একটি বিদেশী সংস্কৃতি। মরক্কোর বেশিরভাগ নারীই হিজাব বা হেডস্কার্ফ পরিধান করতে পছন্দ করেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বোরকা হচ্ছে গাল্ফ আরব বা পূর্ব অ্যারাবিয়ার সংস্কৃতির একটি অংশ এবং ওয়াহাবিজম এর প্রসারের কারণে অন্যান্য মুসলিম কমিউনিটিগুলোতে বোরকার ব্যবহার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেহেতু মরক্কোর ইসলাম চর্চা মধ্যপন্থী এবং সুফি ধারায় প্রভাবিত, সেই হিসেবে বোরকা এখানে একটি বহিরাগত সংস্কৃতিই। ২রা জুন, ২০২২ এ ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট থেকে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ২০২১: মরক্কো শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, মরক্কোতে ২০১৭ সালে বোরকার আমদানি, উৎপাদন, এবং বিক্রয়ের উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা কাউকে বোরকা পরিধান বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ঘরে বোরকা তৈরি থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
পৃথিবীর কোন কোন দেশে বোরকা নিষিদ্ধ?
পৃথিবীর আর কোন কোন দেশে বোরকা নিষিদ্ধ তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা উইকিপিডিয়া, ডয়চে ভেলে, এবং ইন্ডিয়া টুডে এর বেশকিছু তালিকা খুঁজে পাই। উক্ত তালিকাগুলো থেকে আমরা জানতে পারি পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে বোরকা পরিধান কোথাও পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং কোথাও আংশিক নিষিদ্ধ বা পুরো একটি দেশে নয় বরং অঞ্চলভেদে নিষিদ্ধ। এখন আমরা দেখবো পৃথিবীর কোন কোন দেশে বোরকা নিষিদ্ধ কেমন অবস্থায় আছে।
পৃথিবীর যেসকল দেশে বোরকা–পরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ:
ফ্রান্স: প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ফ্রান্স ২০১০ সালে পাবলিক প্লেসে বোরকা বা নিকাব পরিধান এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে জরিমানা ধার্যের আইন কার্যকর করে। বোরকা নিষেধাজ্ঞা এর ব্যাপারে যাতে কোন ধর্ম-ভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ না উঠে সেজন্য আইনে সরাসরি বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ না বলে বলা হয়েছে, “জনসমাবেশে এমন কোন পোশাক কেউই পরিধান করতে পারবে না যা কিনা পুরো মুখমন্ডলকে ঢেকে রাখে।” তাছাড়া, ফ্রান্সে ২০০৪ সাল থেকেই স্কুলে হেডস্কার্ফসহ যেকোন ধরণের ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ।
বেলজিয়াম: ফ্রান্সের পরে ২০১১ সালে বেলজিয়াম পাবলিক প্লেসে মুখমন্ডল ঢেকে রাখে এমন যেকোন পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং যে কেউ এই আইন ভঙ্গ করলে তার জেল-জরিমানা হতে পারে। ২০১৭ সালে দুইজন মুসলিম নারী আদালতে অভিযোগ করেন যে বেলজিয়ামের বোরকা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস এই রায় দেয় যে পুরো মুখ ঢেকে রাখে এমন কোন পোশাক কারও অধিকার লঙ্ঘন করেনি এবং বেলজিয়ামের বোরকা পরিধান এর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
বুলগেরিয়া: বুলগেরিয়ার পার্লামেন্ট ২০১৬ সালে পাবলিক প্লেসে বোরকা ও নিকাব পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বোরকা নিষেধাজ্ঞার এই আইনের অধীনে সরকারি অফিস, স্কুল, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, এবং বিনোদন কেন্দ্রে পুরো মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা খেলার মাঠ, কর্মক্ষেত্র, এবং ধর্মীয় উপাচারের সময় কার্যকর হবে না। বুলগেরিয়ার এই বোরকা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলে যে এই নিষেধাজ্ঞা বুলগেরিয়ার নারীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে। সংস্থাটির ইউরোপ জোনের পরিচালক জন ডালহৌস বলেন যে, “সার্বজনীন নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে কেবল এমন জায়গাগুলোতে পুরো মুখমন্ডল ঢেকে রাখা পোশাকের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করে দেওয়া যেতো।”
ডেনমার্ক: ডেনমার্কের পার্লামেন্ট ২০১৮ সালে ৭৫-৩০ ভোটের ব্যবধানে পাবলিক প্লেসে মুখ ঢেকে রাখে এমন যেকোন পোশাক পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা আইন পাস করে যা একই বছরের আগস্ট মাস থেকে কার্যকর হয়। সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে রাখে এমন যেসকল পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে নিকাব, স্কি মাস্ক, ফেস মাস্ক, এবং নকল শ্মশ্রুও অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে স্কার্ফ, মোটরসাইকেলের হেলমেট, এবং বিভিন্ন উৎসবে ব্যবহার করা হয় এমন কোন মাস্ক বা মুখোশ এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে পড়বে না। সমালোচকরা এই বোরকা পরিধান এর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া এর প্রকাশ হিসেবে দেখছে।
সুইজারল্যান্ড: ইউরোপের সর্বশেষ দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ড ২০২১ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে পাবলিক প্লেসে বোরকা বা নিকাব পরিধান এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যেখানে শতকরা ৫১ জন সুইস ভোটার বোরকা নিষেধাজ্ঞা এর পক্ষে ভোট দেয়। তবে, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে, যেমন: কোভিড-১৯ এর জন্য ফেস মাস্ক এর ব্যবহার এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না। তাছাড়া, পুরো মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক উপাসনালয়ে এবং স্থানীয় উৎসব এর সময় ব্যবহার করা যাবে। গত ১২ই অক্টোবর, ২০২২ এ সুইস সরকার এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জন্য জরিমানা ধার্যের প্রস্তাব পাঠায় পার্লামেন্টে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং সমালোচকরা এই নিষেধাজ্ঞাকে নারীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় অধিকারের অন্তরায় বলে মনে করেন।
উপরোক্ত দেশগুলো ছাড়াও ইউরোপ, এশিয়া, এবং আফ্রিকার আরও অন্যান্য দেশে বোরকা পরিধান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন: অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, চাদ, কঙ্গো, গ্যাবন, এবং শ্রীলঙ্কা।
যেসকল জায়গায় বোরকা বা নিকাব পরিধান আংশিক বা অঞ্চলভেদে নিষিদ্ধ:
পুরো জার্মানিতে বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ না হলেও দেশটির বিভিন্ন স্টেট বা অঞ্চলে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চলে ২০১৭ সালে পাবলিক স্পেসে মুখ ঢেকে রাখা পর্দার (বোরকা) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইনের আওতায় সিভিল সার্ভিস, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, এবং নির্বাচনের সময় পুরো মুখ ঢেকে রাখে এমন যেকোন পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে কোর্টরুমে বোরকা এবং নিকাব পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা আনতে জার্মানির ফেডারেল কাউন্সিল বুন্দেসরাত (Bundesrat) এর কাছে একটি নতুন প্রস্তাব পাঠায় বাভারিয়া স্টেট কর্তৃপক্ষ। নতুন এই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় যে, সাক্ষীর নির্ভরযোগ্যতা আদালতের সামনে তুলে ধরতে তাদের অবশ্যই মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না।
২০১৭ সালে বুন্দেসরাত গাড়ি চালকদের মুখ ঢেকে রাখে এমন সকল পোশাক পরিধান করে গাড়ি চালানো থেকে বিরত রাখতে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জার্মানির ফেডারেল কাউন্সিল, বুন্দেসরাতের একটি অফিসিয়াল টুইটার পেইজ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বলা হয় যে, চালকের পরিচয় যাতে সুষ্ঠুভাবে নির্ধারণ করা যায় তাই পুরো মুখ ঢেকে রাখা যাবে না। যে কেউ চালকের আসনে বসে এই আইন লঙ্ঘন করলে তার জন্য জরিমানা ধার্যের নিয়ম রয়েছে।
তাছাড়া, ২০১৭ সালে জার্মানির ফেডারেল পার্লামেন্ট বুন্দেসতাগ (Bundestag) সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরো মুখমন্ডল ঢেকে রাখে এমন কোন পর্দা পরিধান থেকে বিরত রাখতে একটি খসড়া আইন অনুমোদন করে। উক্ত আইনের আওতায় যেকোন সরকারি কর্মকর্তা, বিচারক, এবং সৈন্যদের পুরো মুখ ঢেকে রাখে এমন যেকোন ইসলামিক পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মানির তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট এই আইনের ব্যাপারে একটি বিবৃতিতে বলে যে, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হয় তা পুরো মুখ ঢেকে রাখা ব্যাপারটির সাথে সাংঘর্ষিক হয়।
অপরদিকে, চীন ২০১৭ সালে শিনজিয়াং নামক একটি মুসলিম প্রদেশে বোরকা এবং ‘অস্বাভাবিক’ শ্মশ্রু এর উপর একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নতুন এই আইনে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, এবং অন্যান্য পাবলিক প্লেসে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের বলা হয়েছে যদি কোন নারী তাদের পুরো মুখ এবং শরীর ঢেকে আসে তাহলে তাদেরকে উক্ত স্থানগুলোতে প্রবেশ করা থেকে নিরস্ত করতে। উক্ত আইনে আরও নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে, কোন ‘অস্বাভাবিক’ শ্মশ্রু পরিচর্যা করা যাবে না (এখানে মূলত মুসলিমরা যে সুন্নতি শ্মশ্রু রাখেন তার কথা বলা হয়েছে)। উপরোক্ত এই নিষেধাজ্ঞাগুলো গত কয়েক দশকে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে ১০ মিলিয়ন উইঘুর জনসংখ্যার বিরুদ্ধে জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যকে অনুসরণ করে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, প্রভৃতি দেশগুলোতে বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ নয় এবং প্রথম প্রথম তা নিষিদ্ধ করা হলেও পরবর্তীতে আদালত সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো উঠিয়ে নেয়। তাছাড়া, বিভিন্ন আরব দেশগুলোতে বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ নয়।
সিদ্ধান্ত:
পুরো আলোচনাটি থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে, মরক্কোতে বোরকা, নিকাব বা হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ নয় বরং এগুলোর উৎপাদন, বাজারজাত, এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ। তাছাড়া, পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন দেশে বোরকা বা নিকাব পরিধান একইরকমভাবে নিষিদ্ধ নয়। কোন কোন দেশে বোরকা বা নিকাব পরিধান আইনত পুরোপুরি নিষিদ্ধ, কোথাও সেটি আংশিক বা অঞ্চলভেদে নিষিদ্ধ, এবং কোন কোন দেশে বোরকা বা নিকাব পরিধানের উপর কোন বাধাই নেই। অতএব, সামাজিক মাধ্যমে এই সংক্রান্ত দাবিগুলো কিছুটা বিভ্রান্তিকর।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
|
No Factcheck schema data available.