অজগর সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে প্রচার 

107
অজগর সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে প্রচার 
অজগর সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে প্রচার 

Published on: [post_published]

সাম্প্রতিক সময়ে বিষধর রাসেল’স ভাইপার সাপ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে এবং অনেকেই অন্যান্য বিষধর কিংবা নির্বিষ সাপের সাথে রাসেল’স ভাইপারকে মিলিয়ে ফেলছে। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে সাপ মেরে তার ছবি তুলে বা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন এবং জানতে চাচ্ছেন সাপটি রাসেল’স ভাইপার কিনা! এভাবে সাপের পরিচয় না জেনে নির্বিচারে নির্বিষ এবং বিষধর সাপ মারার ফলে সেগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এবার একটি বার্মিজ গোলবাহার প্রজাতির অজগর সাপের ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে এটি রাসেল’স ভাইপার সাপ। যদিও ভিডিওতে থাকা সাপটির শারীরিক গঠন, বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে আলোচিত পোস্টে দৃশ্যমান সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয় বরং অজগর। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। 

 

অনুসন্ধান:

আলোচিত ভিডিওতে থাকা যেই সাপটিকে রাসেল’স ভাইপার ভাইপার বলে প্রচার করা হচ্ছে, তা আসলে বার্মিজ পাইথন বা অজগর (Python bivittatus )। সাপটির সাথে রাসেল’স ভাইপার সাপের ছবি মেলানো হলে দেখা যায় এটি রাসেল’স ভাইপার সাপের সাথে মিলছে না। বরং বার্মিজ পাইথন সাপের সাথে একাধিক সাদৃশ্য রয়েছে। ইন্টারনেটে থাকা ছবি এবং তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি অজগর সাপ। যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রজাতির সাপ। বৈজ্ঞানিক নাম : Python bivittatus প্রচলিত নাম: বার্মিজ পাইথন। বার্মিজ অজগর দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বাস করে, সবসময় পানির স্থায়ী উৎসের কাছাকাছি থেকে থাকে।  তাছাড়া সাপটি বনভূমি এবং জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। বার্মিজ অজগর মাংসাশী প্রাণী। প্রধানত এরা স্তন্যপায়ী প্রাণী খেতে পছন্দ করে। এটি শিকারকে কামড়ে ধরে এবং পিছনের দিকের দাঁত দিয়ে চেপে ধরে। শিকারের চারপাশে এর কুণ্ডলী বেঁধে রাখে, পেশী সংকুচিত করে শিকারের দম বন্ধ করে দেয়। একটি অল্প বয়স্ক অজগর ইঁদুর খেতে পারে, পরিপক্ক অজগর গবাদি পশু, প্রাপ্তবয়স্ক হরিণ খেতে পারে। 

দুটি অজগর সাপের মধ্যে বসন্তের শুরুতে মিলন ঘটে। মেয়েরা মার্চ বা এপ্রিল মাসে ১২ থেকে ৩৬টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের না হওয়া পর্যন্ত তারা ডিমের পাশে অবস্থান করে। বার্মিজ অজগর প্রায় ২০ বছর বাঁচে। 

উল্লেখ্য, ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন (DESCF) এর কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার এবং সাপ উদ্ধারকারী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া নিশ্চিত করেছেন ভিডিওতে থাকা সাপটি বার্মিজ প্রজাতির অজগর। 

অন্যদিকে, রাসেল’স ভাইপারের মাথা ত্রিকোণাকৃতি বা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘V’ এর মতো দেখতে হয়। এদের মাথা ঘাড় থেকেও চওড়া হয়, এদের নাসারন্ধ্র ছোট এবং চোখের মণি খাঁড়া হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে চেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফ্যাকাশে কমলা বাদামী রঙের পিঠের উপর লালচে বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত, যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীরে এই চাকতির মতো কালো রঙের সীমানাযুক্ত বৃ্ত্তগুলো কিছুটা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় বাংলায় এই সাপকে বলা হয় চন্দ্রবোড়া। রাসেল’স ভাইপার সাপ তার এই অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ত্বকের গঠনের কারণে এবং এর চামড়া দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি হয় বলে শিকারীর শিকার হয়। বিপদের সম্মুখীন হলে রাসেল’স ভাইপার কুন্ডলী পাকিয়ে ‘ফোঁস ফোঁস’ শব্দ করে শত্রুকে লক্ষ্য করে সতর্কবার্তা পাঠাতে থাকে এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাসের ফলে এর শরীর স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বেশি ফেঁপে উঠে। রাসেল’স ভাইপার ডিম না পেড়ে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। 

অতএব, উপরে দুটো আলাদা সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওতে যে সাপকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে তা আসলে নির্বিষ অজগর সাপ। 

এর আগেও ভিন্ন সাপকে রাসেল’স ভাইপার দাবি করে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.