বেপর্দা নারীকে বাসে উঠতে বাধা দেয়ার ভিডিওটি সাজানো নাটক

103
বেপর্দা নারীকে বাসে উঠতে বাধা দেয়ার ভিডিওটি সাজানো নাটক
বেপর্দা নারীকে বাসে উঠতে বাধা দেয়ার ভিডিওটি সাজানো নাটক

Published on: [post_published]

সম্প্রতি সাামজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন বাসের হেলপার রমজান মাসে পর্দা না করার কারণে একজন নারীকে বাসে উঠতে অসম্মতি জানাচ্ছেন। অনেক মানুষ ঐ হেলপারের কাজকে সমর্থন জানিয়ে ভিডিওটি শেয়ারও করছেন। তবে ফ্যাক্টওয়াচ আলোচিত ভিডিওটির উৎস অনুসন্ধান করে দেখেছে, সেটি স্ক্রিপ্টেড ছিল। অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওতে দৃশ্যমান দুজন নারী এবং পুরুষ অভিনয় করছিলেন। আমাদের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ঐ দুজন ব্যক্তি পূ্র্বেও একসাথে বিভিন্ন ভিডিওতে কাজ করেছেন। যেহেতু সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে বানানো হয়েছিল এবং এটি কোন বাস্তব ঘটনা নয়, সেহেতু ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভিডিওর সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওতে যে ঘটনাটি দেখানো হয়েছে সেটি বাস্তব কিনা তা যাচাই করতে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে অনুসন্ধান করি। আমাদের অনুসন্ধানে Carton Show নামক একটি ভিডিও ক্রিয়েটর এর পেজের সন্ধান পাওয়া গেছে। উক্ত পেজটিতে গত ১৪ মার্চ ২০২৪ এ “রমজান মাসে বেপর্দা মহিলা বাসের হেলপারের সাথে কি ক*র*ছে অতঃপর” – শিরোনাম সংবলিত ছয় মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যার কিছু অংশের সাথে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আলোচিত ভিডিওটির বেশ মিল রয়েছে। এখন আলোচিত ভিডিওটিতে দৃশ্যমান ঘটনাটি বাস্তবের কোন ঘটনা কিনা তা নিশ্চিত হতে আমরা উক্ত ভিডিওটির বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক দিক খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করি। ভিডিওটির একটি পর্যায়ে দেখা যায় যে, ঐ বাসের হেলপার নারী যাত্রীটিকে বাস থেকে নেমে অটোরিকশায় করে যেতে বলছেন। পরবর্তীতে ঐ নারী যাত্রী পর্যায়ক্রমে কয়েকজন অটোরিকশা চালকের দ্বারস্থ হন এবং তিনি বেপর্দা নারী বলে সকলে তাকে যাত্রী হিসেবে নিতে অসম্মতি জানান! এখানে একটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় খেয়াল করা গেছে যে, ঐ নারী যাত্রী যেদিকেই যাচ্ছেন, যিনি ঘটনাগুলো ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন তিনিও তার পেছন পেছন অনুসরণ করছিলেন। আরেকটি মজার জিনিস লক্ষ্য করা গেছে যে, ভিডিওটিতে ক্রমাগত ফ্রেম বা দৃশ্য পরিবর্তন হচ্ছিল! এ থেকে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, ভিডিওটি একটি সাজানো নাটক ছিল। তাছাড়া, আরও একটি বিষয় আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে, উক্ত ভিডিওতে বাস হেলপার, নারী যাত্রী, এবং প্রথম অটোরিকশা চালকের পরিহিত পোশাকের কলারে (Collar) ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন রয়েছে! মূলত ভিডিও বা অডিওতে শব্দের স্পষ্টতা নিশ্চিত করার জন্য নির্মাতারা এধরণের মাইক্রোফোন ব্যবহার করে থাকেন।

যেহেতু Carton Show নামক পেজটি তাদের একটি ভিডিও/কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এর পেজ হিসেবে উল্লেখ করেছে, সেহেতু আমরা ঐ পেজটিতে শেয়ারকৃত অন্যান্য ভিডিওগুলোও যাচাই করে দেখেছি। গত কয়েকদিনে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে যে দুজন ব্যক্তি বাস হেলপার এবং নারী যাত্রী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন, তারা দুজন অন্য ভিডিওগুলোতেও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন! এমন কয়েকটি ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে। 

তাছাড়া, ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ‘Aaj Tak বাংলা’ এবং বাংলাদেশের ‘আজকের পত্রিকা’ উক্ত ভিডিওটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবি যাচাই করে দেখেছে। 

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, বেপর্দা নারী হওয়ায় বাসে উঠতে না দেয়ার যে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেটি বাস্তব কোন ঘটনা নয়। মূলত ছয় মিনিট ২৬ সেকেন্ডের মূল ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে যে অনেকে এটিকে বাস্তব ঘটনা ভেবে শেয়ার করছেন।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.